ভারতে জয় শ্রী রাম স্লোগান না দেয়ায় হিন্দুত্ববাদি যুবকদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এক বৃদ্ধ মুসলিম। ৭০ বছর বয়স্ক এ মুসলিম ব্যক্তির নাম হোসেন সাহেব। দুই হিন্দু যুবক মিলে এই বৃদ্ধ মুসলিমকে মারধর করে ও দাড়িতে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়।
গত ২৪ নভেম্বর ভারতের কর্ণাটকে এ ঘটনাটি ঘটেছে।
জানা যায়, ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন চালানো হোসেন সাহেব রাতে একা বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে একটি স্কুটার (মোটরসাইকেল সদৃশ বিশেষ গাড়ি) আসতে থাকলে তিনি স্কুটারে লিফট চান। স্কুটারে থাকা দুই হিন্দু যুবক, বৃদ্ধের মুসলিম পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় হোসেন সাহেবকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। পরে তারা বৃদ্ধের পা ধরে টেনে-হিঁচড়ে নীরব জায়গায় নিয়ে যায়। এক যুবক ভাঙা কাঁচের বোতল দিয়ে তার দাড়ি কাটার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে, দিয়াশলাই জ্বালিয়ে তার দাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
হোসেন সাহেব জানান, “ঐ সময় মারধরের যন্ত্রণায় আমি চিৎকার করেছিলাম ও আল্লাহকে ডাকছিলাম। তারা আমার বুকে আরও জোরে আঘাত করতে থাকে এবং বলতে থাকে, ‘আল্লাহকে ডাকলে কি লাভ হবে?’ এ সময় তারা ইসলাম ধর্মকে গালাগালি করতে থাকে এবং বলতে থাকে, আল্লাহ এখন তোকে বাঁচাতে আসবে না। অন্তত ১ ঘণ্টা পর ঐ স্থানে কিছু মানুষ চলে আসায় তারা পরবর্তীতে আমাকে দাড়ি কেটে ফেলতে হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়।”
লোকজন সেখান থেকে বৃদ্ধকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়। এ ঘটনায় ঐ বৃদ্ধার পরিবার হিন্দুদের ভয়ে থানায় কোন অভিযোগ করেনি, এমনকি কাউকে জানাতেও চায়নি।
পরে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া নামে একটি মানবাধিকার সংস্থা উদ্ধারকারীদের থেকে ঘটনার বিবরণ শুনে বৃদ্ধের সাথে দেখা করতে আসে। বুকে মারধরের কারণে শ্বাসকষ্ট হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং মামলা দায়ের করার চেষ্টা করেন।
তবে পুলিশ হিন্দু যুবকদের বিরুদ্ধে মামলা না নিয়ে ঘটনাটি গ্রামীণ থানার আওতাধীন বলে অজুহাত দেখায়। একই অজুহাত দেখিয়ে গ্রামীণ থানাও অভিযোগ নিতে অস্বীকৃতি জানায়, তারা বলে ঘটনাস্থলটি শহরে থানার অন্তর্গত।
ভারতে এখন হিন্দু কর্তৃক মুসলিমদের নির্যাতন ও হেনস্তার ঘটনাগুলো এভাবেই বিনা বিচারে পার পেয়ে যায়। হিন্দুত্ববাদী পুলিশ ঠুনকো সব অজুহাত দেখিয়ে মুসলিমদের আইনি প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিতে বাধার সৃষ্টি করে। ফলে পরবর্তীতে উগ্র হিন্দুরা আরও দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে মুসলিমদের উত্যক্ত ও হেনস্থার সুযোগ পায়।