তুফানুল আকসার ৬৭তম দিনে মুজাহিদদের হাতে ধরাশায়ী অন্তত ১০৮ ইসরায়েলী সৈন্য

- ত্বহা আলী আদনান

1
1077

পবিত্র আল-আকসার ভূমিতে তুফানুল আকসা পরবর্তী ৬৭টি তম দিনে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে ভারী ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে দখলদার ইসরাইলী বাহিনী। মঙ্গলবারেও গাজায় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অভিযানে শতাধিক ইসরায়েলী সৈন্য হতাহত হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে কয়েক ডজন সাঁজোয়া যান।

আল-কাসসাম ব্রিগেডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিরোধ যোদ্ধারা গত ১২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দক্ষিণ ও উত্তর গাজার প্রতিটি ফ্রন্ট লাইনে ইহুদি বাহিনীর বিরুদ্ধে বীরত্বের সাথে লড়াই করেছেন। এই অভিযানগুলোতে কাসসাম ব্রিগেড এবং আল-কুদস ব্রিগেড ছাড়াও ফিলিস্তিনের প্রতিটি প্রতিরোধ বাহিনী অংশগ্রহণ করছে।

আল-কাসসাম ব্রিগেডের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, এদিন প্রতিরোধ যোদ্ধারা গাজার শেখ রেদওয়ান এলাকায় দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি সফল অভিযান পরিচালনা করছেন। অভিযানটি দখলদার ইহুদি বাহিনীর ২০ সৈন্যের একটি পদাতিক দলকে টার্গেট করে চালানো হয়েছিল, যারা এই এলাকার একটি ভবনে অবস্থান নিয়েছিল। প্রতিরোধ যোদ্ধারা প্রথমে TBG শেল দিয়ে ভবনের ভিতরে আঘাত করেন এবং পরক্ষণেই তীব্র আক্রমণ চালান। এতে ভবনে অবস্থান নেওয়া সমস্ত জায়োনিস্ট সৈন্য হতাহতের শিকার হয়।

সূত্রমতে, প্রতিরোধ যোদ্ধারা শেখ রিদওয়ান এলাকায় এদিন জায়োনিস্টদের বিরুদ্ধে আরও একটি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিলেন। এলাকাটিতে আল-ইয়াসিন রকেটের পাশাপাশি মেশিনগান দ্বারা দখলদার ইহুদি বাহিনীকে টার্গেট করেন মুজাহিদগণ। এতে জায়োনিস্ট বাহিনীর ৩টি ট্যাংক ধ্বংস হয় এবং অনেক জায়োনিস্ট সৈন্য হতাহত হয়।

একইভাবে খান-ইউনুসে জায়োনিস্ট বাহিনীর ১০ সদস্যের একটি পদাতিক দলকেও টার্গেট করেন প্রতিরোধ যোদ্ধারা। দখলদার বাহিনীর এই দলটিকে টার্গেট করে দুটি সফল বিস্ফোরক ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটান তাঁরা। এতে ইহুদিবাদী সৈন্যরা নিহত হয়।

এদিন বিকালে প্রতিরোধ যোদ্ধারা শুজাইয়াহ শহরের আশাপাশের একাধিক স্থানে জায়োনিস্ট সৈন্যদের লক্ষ্যবস্তু করে তীব্র লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। এই ফ্রন্টে প্রতিরোধ যোদ্ধারা আল-ইয়াসিন-১০৫ শেল দিয়ে শত্রু যানগুলোকে টার্গেট করেন, পাশাপাশি বিস্ফোরক ডিভাইসের বিস্ফোরণও ঘটান। এতে ইহুদিবাদী ইসরাইলী বাহিনীর ৭টি সাঁজোয়া যান ধ্বংস হয়ে যায় এবং সেগুলোতে থাকা সৈন্যরা নিহত হয়।

এই হামলার পর ঘটনাস্থলে হাতাহত সৈন্যদের উদ্ধারের চেষ্টা করে জায়োনিস্টদের একটি পদাতিক দল। তখন প্রতিরোধ যোদ্ধারা নিকটতম দূরত্ব থেকে এই দলটিকে RPG শেল দ্বারা সফলভাবে আঘাত করেন। এতে আরও ১টি ট্যাংক ধ্বংস হয়, সেই সাথে জায়নাবাদী এক স্নাইপার কামান্ডো সহ ঘটনাস্থলে আরও ১২ জায়োনিস্ট সৈন্য নিহত হয়। এই অপারেশনের পর ঘটনাস্থল থেকে হতাহত সৈন্যদের অস্ত্র ও সরঞ্জামগুলো জব্দ করেন প্রতিরোধ যোদ্ধারা।

একই শহরে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অন্য একটি ইয়াসিন শেলের আঘাতে জায়োনিস্ট সৈন্যদের ১টি ট্যাংক ধ্বংস হয়ে যায়, আর ট্যাংকের ভিতর থাকা ৩ জায়োনিস্ট নিহত হয়।

অপরদিকে গাজার উত্তরে আল-তাওয়াম এলাকায় “আল-ইয়াসিন ১০৫” ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা একটি জায়নাবাদী পদাতিক বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করেন প্রতিরোধ যোদ্ধারা। এতে ৬ জায়োনিস্ট সৈন্য নিহত হয়।
একইভাবে এই অঞ্চলের আল-কাররা এলাকায় জায়োনিস্টদের আরও একটি পদাতিক দলের সাথে তীব্র সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হন প্রতিরোধ যোদ্ধারা। সেখানেও জায়োনিস্ট বাহিনীর অন্তত ৫ সৈন্য নিহত এবং অনেক সৈন্য আহত হয়।

এদিন গাজার খান-ইউনিস শহরের পূর্ব এবং উত্তর অংশেও তীব্র লড়াই সংঘটিত হয়েছে। এই এলাকাগুলোতে প্রবেশকারী জায়োনিস্ট শত্রুদের অবস্থান লক্ষ্য করে প্রতিরোধ যোদ্ধারা ভারী-ক্যালিবারের মর্টার শেল দ্বারা আঘাত করেন, ফলে শত্রুসারিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং শত্রু বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।

অপরদিকে জাবালিয়া ক্যাম্পের পশ্চিম ফ্রন্ট লাইনে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল জায়োনিস্ট সৈন্যরা। সংবাদ পাওয়া মাত্রই প্রতিরোধ যোদ্ধারা এই অঞ্চলে জায়োনিস্ট বাহিনীর সমাবেশস্থল লক্ষ্য করে পরপর দুটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটান। একই সাথে নিকটতম দূরত্ব থেকে জায়োনিস্টদের লক্ষ্য করে তীব্র আক্রমণ চালান তাঁরা। ফলশ্রুতিতে সেখানে কয়েক ডজন জায়োনিস্ট সৈন্য নিহত এবং আহত হয়।

একই সময় জায়োনিস্ট ইসরায়েলি বাহিনীর একটি পদাতিক দল ক্যাম্পের একটি ভবনে হামলা চালানোর লক্ষ্য অগ্রসর হয়। জায়োনিস্টরা ভবনটির প্রধান ফটক উড়িয়ে দেয় এবং ভবনে প্রবেশ করে। কিন্তু প্রতিরোধ যোদ্ধারা আগেই এই হামলার খবর পেয়েছিলেন, এবং বেশ কয়েকজন প্রতিরোধ যোদ্ধা ক্যাম্পের আবু রশিদ পুলের কাছে আগে থেকেই লুকিয়ে ছিলেন। আর জায়োনিস্ট হামলা চালিয়ে বিজয়ের হাসি হাসতেই, প্রতিরোধ যোদ্ধারা তাদের প্রকৃত বাস্তবতা দেখিয়ে দিতে শুরু করেন। তাঁরা প্রথমে হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে জায়োনিস্টদের বিভ্রান্ত করেন এবং পরে টার্গেট করে করে গুলি চালাতে থাকেন।
আল-কাসসাম ব্রিগেডের তথ্যমতে, প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ এই অভিযানে ১৫ জায়োনিস্ট সৈন্য নিহত হয়েছে। আর বাকিদেরকে প্রতিরোধ যোদ্ধারা দিকভ্রান্ত করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ধাওয়া করেন।

এদিকে জায়োনিস্ট ইসরায়েলী বাহিনী স্বীকার করেছে যে, উত্তর গাজায় প্রতিরোধ যোদ্ধারা তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অতর্কিত আক্রমণ চালিয়েছেন। এতে জায়োনিস্ট বাহিনীর ৪ অফিসার সহ ৭ সৈন্য নিহত হয়েছে। নিহত এই সৈন্যরা ১৩তম ব্যাটালিয়নের সদস্য; তারাই ১৩ নভেম্বর গাজার সংসদ ও পুলিশ সদর দফতর দখল করার পর ছবি তুলেছিল।

এছাড়াও, ইসরায়েলের সোরোকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে যে, এদিন তাদের হাসপাতালে ৩০ আহত ইসরায়েলি সৈন্যকে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থাই গুরুতর।

উল্লেখ্য, কাসসাম ব্রিগেডের মুজাহিদ নেতৃবৃন্দ আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, স্থল হামলা চালালে গাজাকে ইসরায়েলি বাহিনীর কবরস্থানে পরিণত করা হবে। মুজাহিদরা তাদের এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলেছেন বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআলিগড় থানায় মুসলিম নারীকে হিন্দু পুলিশ অফিসারের গুলি
পরবর্তী নিবন্ধফিলিস্তিনের জিহাদ || আপডেট – ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩