বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়েছে, পরিবর্তন করা হয়েছে বইও। নতুন পাঠ্যবইয়ে ইসলামবিরোধী এবং মানববিধ্বংসী বিভিন্ন মতবাদ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে বিক্ষুব্ধ দেশের জনগণ। নতুন পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা, নারীবাদ, ফ্রি-মিক্সিংসহ নানা বিধ্বংসী মতবাদের প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ মুসলিমদের দেশে পাঠ্যপুস্তকে এমন ভয়ানক বিষয়গুলো এলো কীভাবে?
বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক ভোরের কাগজে পাঠ্যপুস্তকে ভুল নিয়ে সম্প্রতি দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। “কার ভুলে পাঠ্যবই বিতর্ক?” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই রচিত হয়। কিন্তু তড়িঘড়ি করে না দেখেই পাঠ্যবই ছাপিয়ে দেওয়ায় নানা বিতর্ক হচ্ছে। সূত্রমতে, সপ্তম শ্রেণির যে বইয়ে ‘শরীফার গল্প’ নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে সেই বইয়ের শিক্ষক গাইডেও বিতর্কিত শব্দগুলো ছিল। শিক্ষক গাইডের তত্ত্বাবধানে ছিলেন পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের গবেষণা কর্মকর্তা এনামুল হক। তিনি না দেখেই মশিউজ্জামানের নির্দেশে বইটি ছাপতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। গতকাল ভোরের কাগজের সঙ্গে আলাপকালে এনামুল হক বলেন, মশিউজ্জামান স্যারের দোষ আমি দিতে পারব না। এতে স্যার বিপদে পড়ে যাবেন। তবে কার ভুলে এমনটি ঘটল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাফ করে দেন।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ভোরের কাগজের প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন শিক্ষাক্রমের কাজ করার জন্য অভিজ্ঞদের নেননি অধ্যাপক মশিউজ্জামান। বরং যার সঙ্গে তার বনিবনা হতো না তাকেই অন্যত্র সরিয়ে দিতেন। সবশেষে বনিবনা না হওয়ায় পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রধান সম্পাদক সন্তোষ ঢালীকে সরিয়ে দেন তিনি। ওই কর্মকর্তার মতে, মশিউজ্জামানের একগুঁয়েমি, খামখেয়ালিপনার কারণে পাঠ্যবইয়ে ভুল ও বিতর্কিত তথ্যে ভরা।
কিন্তু মশিউজ্জামান কার নির্দেশে এমন করছেন? মশিউজ্জামানের পেছনে কারা কলকাঠি নাড়ছে বাংলাদেশের মুসলিমদের মধ্যে ঈমানবিধ্বংসী মতবাদ ছড়াতে?
২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত ”গোঁজামিলে তৈরি হচ্ছে নতুন কারিকুলাম” শিরোনামের প্রতিবেদনে অভিজ্ঞদের বাদ দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বিশেষজ্ঞদের বাদ দিয়ে দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) নির্দেশিকাতেই নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়েছে।
শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও নবায়ন কার্যক্রম ও জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির (সিডিআরসি) সঙ্গে সমন্বয় রক্ষায় গঠন করা ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ’-এর আহ্বায়ক এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান। অভিযোগ রয়েছে, ১৫ সদস্যের ওই গ্রুপের ছয়জন সদস্যকে বাইপাস করে ইউনিসেফ, প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রতিনিধিসহ অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে কারিকুলাম তৈরির কাজ হচ্ছে। এনজিও প্রতিনিধিরা যে পরামর্শ দিয়েছেন সেটাই করছেন অধ্যাপক মশিউজ্জামান।”
মশিউজ্জামান যে এনজিওগুলোর পরামর্শে পাঠ্যপুস্তক তৈরি করেছেন, তার মধ্যে ইউনিসেফ জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বিশ্বব্যাপী সমকামিতা, ট্রান্সজেন্ডারসহ বিকৃত সব মতবাদের প্রচারে প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালাচ্ছে। শিশুদেরকে এলজিবিটিকিউ+ মতবাদের অনুসারী হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করছে এই প্রতিষ্ঠান। আর প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ মেয়েদের নিয়ে কাজ করছে। নারী নেতৃত্ব, বাল্যবিয়ে রোধ, লাগামহীনভাবে যৌনশিক্ষা, লিঙ্গ সমতা ইত্যাদি কার্যক্রমের আড়ালে তারা ঈমানবিধ্বংসী নারীবাদের প্রচার করছে বাংলাদেশে। ছড়াচ্ছে অশ্লীলতা। নতুন পাঠ্যপুস্তকেও যার ছাপ পাওয়া যায় পাতায় পাতায়।
এছাড়া, নতুন শিক্ষাক্রমে নানা অসঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও তাড়াহুড়া করে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ না নিয়েই প্রকাশ করা হয়েছে নতুন বই। এখন ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির বই ‘সক্রিয় শিখন পদ্ধতি’ না ‘অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন পদ্ধতি’তে লেখা হবে সেই নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ রকম জটিলতায় পড়ে দশম শ্রেণির নতুন বই কীভাবে লেখা হবে, তারও কোনো সমাধান হচ্ছে না।
ভোরের কাগজ জানিয়েছে, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের যেসব কর্মকর্তা এ কাজের বিরোধিতা করেছিলেন তাদের সবাইকে বদলি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে গত দুই বছরে পাঠ্যপুস্তক বোর্ড থেকে বদলি হয়েছেন ৫০ জনেরও বেশি কর্মকর্তা। এর মধ্যে শুধু গত ৬ মাসেই পাঠ্যপুস্তক বোর্ড থেকে বদলি করা হয়েছে কমপক্ষে ৩৫ জনকে।
তথ্যসূত্র:
১. সমন্বয়হীনতার খেসারত : দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ভিন্ন অবস্থানে আটকে আছে তিন শ্রেণির পাঠ্যবই লেখার কাজ > নতুন শিক্ষাক্রম
– http://tinyurl.com/r73bxh23
২. কার ভুলে পাঠ্যবই বিতর্ক?
– http://tinyurl.com/yc6rdsyd
৩. গোঁজামিলে তৈরি হচ্ছে নতুন কারিকুলাম
– http://tinyurl.com/3r3d6vad
৪. Plan International Bangladesh
– http://tinyurl.com/ycx3ccbk
৫. Parenting for LGBTQ+ children’s mental health, Unicef
– http://tinyurl.com/5aafmb7t