ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান সরকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির উদ্দেশ্যে উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের উপর জোর দিয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় অসম্পূর্ণ প্রকল্পসমূহ সম্পন্ন করতে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তাছাড়া নাগরিকদের জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং তাদের আর্থ-সামাজিক জীবনে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
তুর্কিমিনিস্তান-আফগানিস্তান-পাকিস্তান-ইন্ডিয়া(TAPI) পাইপলাইন প্রকল্প একটি মেগাপ্রকল্প যা ট্রান্স-আফগানিস্তান গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প নামেও পরিচিত। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তুর্কিমিনিস্তানের গ্যালকিনিশ গ্যাসক্ষেত্র থেকে আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তান ও ভারতে প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহনের জন্য গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি ইমারতে ইসলামিয়া সরকারের পরিচালিত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এটির বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে ইমারত সরকার তুর্কিমিনিস্তানসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দেশগুলোর সাথে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
এর আগে মাঠপর্যায়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে ইমারতে ইসলামিয়ার কর্মকর্তাগণ তুর্কিমিনিস্তানের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিবৃন্দের সাথে পৃথক পৃথক বৈঠকে একত্রিত হয়েছিলেন। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলোতে উভয় দেশের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি TAPI প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি সর্বাধিক অগ্রগণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। প্রকল্পের কাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় সুবিধাদি সরবরাহের মাধ্যমে সার্বিক সহযোগিতা করার ব্যাপারে ইমারাতে ইসলামিয়া সরকার তুর্কিমিনিস্তান কর্তৃপক্ষকে আশ্বাস প্রদান করেছে।
আফগানিস্তানের অঞ্চলভিত্তিক অন্যতম উল্লেখযোগ্য TAPI গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পে পাইপলাইনের মোট দৈর্ঘ্য ১৮১৪ কিলোমিটার। পাইপলাইনটি তুর্কিমিনিস্তান থেকে আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তান এবং ভারতে গ্যাস পরিবহন করবে। আফগান ভূখণ্ডে পাইপলাইনটির দৈর্ঘ্য ৮১৪ কিলোমিটার। এটি আফগানিস্তানের হেরাত, ফারাহ, নিমরুজ, হেলমন্দ ও কান্দাহার প্রদেশ দিয়ে অতিক্রম করেছে। হেরাত-কান্দাহার মহাসড়কের পাশে স্থাপিত উক্ত পাইপলাইন পাকিস্তানের কোয়েটা এবং মুলতান জেলার মধ্য দিয়ে ভারতে পৌঁছবে।
উল্লেখ্য যে, সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আফগানিস্তান পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ সুবিধা লাভ করার পাশাপাশি পরিবহন ফি হিসেবে বছরে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি দেশের রাজস্ব খাতে যোগ হবে। তাছাড়া নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে উল্লিখিত পাঁচটি প্রদেশে বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষের আর্থিক স্বাবলম্বী হবার পথ সুগম করবে।
প্রকল্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুসারে এটির আওতায় প্রথম দশ বছরে আফগানিস্তানে বার্ষিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনমিটার, দ্বিতীয় দশ বছরে এক বিলিয়ন ঘনমিটার এবং তৃতীয় দশ বছরে ১.৫ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাসের চাহিদা পূরণ হবে। পূর্ব জরিপ অনুযায়ী, প্রকল্পটি কার্যকর করার মাধ্যমে তুর্কিমিনিস্তানের গ্যাস ক্ষেত্র থেকে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতে প্রতি বছর ৩৩ বিলিয়ন ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
দেশে উন্নয়নমূলক ও অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন ইমারতে ইসলামিয়ার কর্মকর্তাবৃন্দ। আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আরো বেগবান করতে মেগাপ্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের জন্য প্রশস্ত ও মজবুত ভিত্তি আবশ্যক। এটি নিশ্চিত করতে ইমারত সরকার সব ধরনের প্রয়োজনীয় সুবিধাদি সরবরাহ করতে সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।
তথ্যসূত্র:
1. A Dream Will Come True
– http://tinyurl.com/2s3z37pd