পবিত্র রমজান মাসের আগমন উপলক্ষে ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মুহাম্মদ হাসান আখুন্দ হাফিযাহুল্লাহ একটি বার্তা প্রদান করেছেন। উক্ত বার্তায় তিনি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা, নিপীড়িত ফিলিস্তিনি মুসলিমদের সাহায্যার্থে কাজ করা ও আরও বেশ কিছু বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ প্রদান করেছেন। প্রদত্ত বার্তাটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল:
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
হামদ ও সালাতের পর! আফগানিস্তানের সম্মানিত মুসলিম জাতি এবং বিশ্বে আমার সকল মুসলিম ভাই! আপনাদের ওপর আল্লাহর তা’য়ালার পক্ষ থেকে শান্তি, ক্ষমা ও রহমত বর্ষিত হোক!
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর রীতি ছিল রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই সাহাবায়ে কেরাম ও অন্যান্য মুসলিমদের নির্দেশনা ও উৎসাহ প্রদান করতেন। এই রীতির চেতনা ধারণ করে আমি বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের অভিনন্দন জানাচ্ছি, বিশেষ করে আফগানিস্তানের মুসলিম জনগণকে পবিত্র রমজান মাসের আগমন উপলক্ষে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
এই পবিত্র মাসটি তওবা এবং একনিষ্ঠ ইবাদতের সময়, এই সময়ে সকল ভাল কাজের বিনিময় অন্যান্য সময়ের তুলনায় বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তা’আলা এই পবিত্র মাসে আপনার এবং আমাদের সকলের ওপর তাঁর রহমত বর্ষণ করুন, আমাদেরকে আন্তরিকভাবে তওবা করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা, আনুগত্য করা এবং ইবাদত করার তৌফিক দান করুন। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে পূর্ণ আন্তরিকতা ও অধ্যবসায়ের সাথে রোজার পালনের শক্তি ও কল্যাণ দান করুন, আমিন।
পবিত্র রমজান মাসে পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছে। এই মাসটি আত্মশুদ্ধি, সর্বশক্তিমান আল্লাহর তা’য়ালার দিকে ফিরে আসা, মুসলিম জাতির মধ্যে সহানুভূতি ও ঐক্য গড়ে তোলা এবং দুর্বল ও দরিদ্রদের জন্য সহানুভূতি দেখানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ এসেছে।
আমি আশা করি যে, রমজান মাসকে মূল্যায়ন করে মুসলিমরা এই আধ্যাত্মিক মুহূর্তগুলি থেকে উপকৃত হবেন, আল্লাহ তা’য়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন এবং পুরস্কার কামনা করবেন।
আমি আলেম, তাবলিগ ও মসজিদের ইমামদের প্রতি আন্তরিকভাবে আহ্বান জানাচ্ছি যে, তারাবীহ নামাজের পাশাপাশি এ মাসে ধর্মীয় শিক্ষা, দাওয়াহ এবং কুরআনের অনুবাদ বা ব্যাখ্যার আয়োজন করুন যাতে সাধারণ মুসলিমরা ঐশী কালামের অর্থ ও এটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারে। আমি মুসলিম ভাইদেরকে পবিত্র কুরআনের অনুবাদ ও ব্যাখ্যার পাঠে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার জন্য উৎসাহিত করছি।
রমজানুল মোবারক সহানুভূতি এবং শান্তির বার্তা বহন করে এবং এটি মানুষকে ক্ষুধা সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। আমি আশা করি, সরকারি কর্মকর্তা, সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী ও সকল নাগরিক দরিদ্র মুসলিমদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবেন। বিশেষ করে ভূমিকম্প ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিক, ফিরে আসা শরণার্থী, শহীদদের পরিবার এবং বিধবা ও এতিমদের প্রতি আমাদের সহায়তা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক সময় এমন হয় যে, পবিত্র রমজান মাস আসার সাথে সাথে কিছু সুবিধাবাদী লোক বাজারে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেয়। আমি তাদেরকে দরিদ্র নাগরিকদের সাহায্যার্থে মূল্যবৃদ্ধি কমানোর জন্য অনুরোধ করছি। আমি সকল সরকারী দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন এবং সব শ্রেণির মানুষের সুবিধার্থে মূল্য বৃদ্ধি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করছি।
এ বছর রমজান মাস এমন এক সময়ে এসেছে যখন ইহুদিবাদী হানাদাররা মুসলিম বিশ্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ ফিলিস্তিনে, বিশেষ করে গাজায় অসহায় মুসলিমদের ওপর জুলুম চালাচ্ছে, আর বিশ্ববাসী তা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে।
গাজায় নির্যাতিত মুসলিমদের ওপর চলমান নিষ্ঠুরতা ও পাশবিকতা বন্ধের জন্য আমরা আবারও বিশ্ব সম্প্রদায়, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। গাজার পরিস্থিতি মানব ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায় হিসেবে রচিত হয়েছে। গাজায় নিষ্ঠুরতায় যেসব জাতিগুলি অবদান রাখছে বা গাজায় আগ্রাসন বন্ধে চেষ্টা করছে না, প্রকৃতপক্ষে তারা সবাই জায়নবাদী ইসরায়েলের সহযোগী।
পরিশেষে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে আমি সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই পবিত্র মাসের বরকত মুসলিমদের মধ্যে পরিপূর্ণ ঐক্য ও সহমর্মিতার জন্ম দিক। দোয়া করি, আল্লাহ তা’আলা তাঁর অসীম রহমতে অসহায় ও নির্যাতিত মুসলিমদের হেফাজত ও সহযোগিতা করুন।
আমি সকল মুসলিমদেরকে তাদের রাত-দিনের সব দোয়া’র মধ্যে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের বিশেষভাবে স্মরণ করার জন্য এবং তাদের প্রতি সম্ভাব্য সব উপায়ে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করছি।
ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
মোল্লা মুহাম্মদ হাসান আখুন্দ।
তথ্যসূত্র:
1. Message of Prime Minister on the occasion of arrival of Ramadan
– https://tinyurl.com/2p8tdv6d