দারসে রমাদান।। দারস-৪।। আল-কুরআনে জাহান্নামের বর্ণনা।।

0
179

সম্মানিত ভাইগণ, আজকের মজলিসে আমরা আল-কুরআনের জাহান্নাম-সংক্রান্ত বর্ণনা নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

যদি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন নিয়ে চিন্তা করি, তাহলে দেখতে পাব যে, তাঁর অন্তরে জাহান্নামের স্মরণ সবসময় উপস্থিত থাকত। তিনি সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। যেমন: সকাল-সন্ধ্যার প্রসিদ্ধ এক দোয়ায় জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন এভাবে,
أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ للهِ وَالْحَمْدُ للهِ، لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحَدْهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، ربِّ أَسْأَلُكَ خَيْرَ مَا فِي هَذَا الْيَومِ وَخَيْرَ مَا بَعْدَهُ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِي هَذَا الْيَومِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهُ، رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ، وَسُوءِ الكِبَرِ، رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابٍ فِي النَّارِ وَعَذَابٍ فِي الْقَبْرِ
.
অর্থ: আমরা এবং সমগ্র জগত আল্লাহর (আরাধনা ও আনুগত্যের) জন্য সকালে উপনীত হয়েছি। সমুদয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক। তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব ও প্রশংসা কেবলই তার জন্য। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। হে রব! এই দিনের মাঝে এবং এর পরবর্তী দিনগুলোতে যত কল্যাণ আছে আপনার কাছে তা প্রার্থনা করছি। এই দিনে এবং এর পরবর্তী দিনগুলোতে যত অকল্যাণ আছে আপনার কাছে তা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। হে আমার রব! আপনার কাছে আলস্য ও বার্ধক্যের কষ্ট থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। জাহান্নামের আযাব ও কবরের আযাব থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি। (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং, ২৭২৩)

একটু চিন্তা করুন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যহ সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাইতেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আত-তাহিয়্যাতুর পর সালামের পূর্বেও জাহান্নাম থেকে পানাহ চাইতেন। তিনি আমাদেরকে আত-তাহিয়্যাতুর পর এই দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন,
للَّهُمَّ إني أعوذ بك من عذاب القبر، وعذاب النار، ومن فتنة الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، ومن فتنة الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার কাছে জাহান্নাম ও কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই। হায়াত-মওতের ফিতনা থেকে মুক্তি চাই। দাজ্জালের ফিতনা থেকে পানাহ চাই। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং, ১৩৭৭)

এমনকি ঘুমের পূর্বেও জাহান্নামের স্মরণ থেকে তাঁর অন্তর গাফেল থাকত না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘুমের ইচ্ছা করে ডানহাতের তালু ডান গালের নিচে রাখতেন তখন একবার বা তিনবার বলতেন:
ربِّ قِنِي عذابَك يومَ تَبعث عبادك
অর্থ: হে রব, যেদিন আপনার বান্দাদের পুনরুত্থান করবেন সেদিনের আযাব থেকে আমাকে রক্ষা করুন। (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৭০৯)

রাসূলে কারীমের অধিকাংশ দোয়া নিয়ে চিন্তা করে দেখুন। তাঁর অধিকাংশ দোয়ার একাংশ ছিল জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাওয়া। হযরত আনাস বিন মালেক রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসের দোয়াটি দেখুন-
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
অর্থ: আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়া-আখেরাতে কল্যাণ ও হাসানা দান করুন, এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ৪৫২২)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন, চিন্তা-ফিকির ও অন্তর্জগতে সারাক্ষণ জাগ্রত থাকত জাহান্নামের স্মরণ। জাহান্নামের আলোচনা থেকে কখনও গাফেল হত না তাঁর মন-মনন। একজন মুসলিমের উচিৎ, সবসময় জাহান্নামের আলোচনা করা। অবসরে, একত্রে বসে জাহান্নামের আলোচনা করা। জাহান্নামের গুণাগুণ-বর্ণিত বই-পুস্তক পাঠ করা। এতে কী ফায়দা? এর ফলে আপনার অন্তরে আল্লাহ তায়ালার ভয় বৃদ্ধি পাবে। দুনিয়ার খায়েশ, স্বাদ, অবাধ্যতা আপনার উপর প্রবল হবে না। আখেরাতের স্মরণ থেকে অন্তর গাফেল হবে না।

আজকের মজলিসে আমরা জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের অবস্থা বর্ণনা-সম্বলিত কয়েকটি আয়াতের আলোকে কিছু কথা পেশ করব ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:
هَذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُوا فِي رَبِّهِمْ فَالَّذِينَ كَفَرُوا قُطِّعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِّن نَّارٍ يُصَبُّ مِن فَوْقِ رُؤُوسِهِمُ الْحَمِيمُ (19)
অর্থ: এরা (মুমিন ও কাফির) দুটি পক্ষ নিজ প্রতিপালক সম্পর্কে বিবাদে লিপ্ত হয়েছে। (এর মীমাংসা হচ্ছে,) যারা কুফরি করেছে তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে আগুনের পোশাক। তাদের মাথায় ঢালা হবে ফুটন্ত পানি। [সুরা হজ্জ, ২২/১৯]

ভাই, একটু চিন্তা করুন! একজন ব্যক্তির পোশাক আগুনের। জাহান্নামীদের জন্য আগুনের পোশাক তৈরি করা হয়েছে। আল্লাহ পানাহ! তাদের মাথায় ফুটন্ত পানি ঢালা হবে। ফুটন্ত পানির কী মর্ম?
الحميم: الماء الذي اشتدت حرارته وغليانه،
অর্থ: الحميم এমন পানি যা তীব্র গরমে টগবগ করছে।

মনে করুন, এক ব্যক্তি পানির ঝর্ণাতলে উপবিষ্ট। ঝর্ণার পানি টগবগে গরম নয়; বরং একঘণ্টা আগুনে হালকা গরম করা হয়েছে এমন। একদিন বা একসপ্তাহ নয়; মাত্র একঘণ্টা। এরপর তার মাথায় প্রতি মিনিটে সেই পানি একফোঁটা করে পড়ছে। এটা খুব কষ্টের কিছু নয়। অন্তরে কিছু কষ্ট ও ক্লান্তি অনুভত করবে। যদিও একমিনিটে একফোঁটা বা পাঁচমিনিটে একফোঁটা করে পড়ে। এই ব্যক্তি অন্তরে হালকা কষ্ট অনুভব করবে। জাহান্নামের আগুন কেমন হবে!
“তাদের মাথায় ঢালা হবে ফুটন্ত পানি”। ফুটন্ত পানির প্রভাবে তাদের কী অবস্থা হবে তা পরের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يُصْهَرُ بِهِ مَا فِي بُطُونِهِمْ وَالْجُلُودُ (20)
অর্থ: যার প্রভাবে তাদের উদরস্থ সবকিছু এবং চামড়া গলে যাবে।

চিন্তা করুন! তাদের মাথায় ফুটন্ত পানি ঢালা হবে। এই পানি তাদের পেটের সবকিছু গলিয়ে দেবে। অর্থাৎ টগবগে গরমের ফলে পুরো পেট মোমের মতো গলে যাবে। চামড়া গলে যাবে। আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা ও আফিয়াত কামনা করছি!
এরপর তিনি বলেন:
وَلَهُم مَّقَامِعُ مِنْ حَدِيدٍ (21) كُلَّمَا أَرَادُوا أَن يَخْرُجُوا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيدُوا فِيهَا ،
অর্থ: তাদের জন্য থাকবে লোহার হাতুড়ি। যখনই তারা যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

হে ভাই, চিন্তা করে দেখুন! তাদের জন্য লোহার হাতুড়ি প্রস্তুত থাকবে। যখন তারা সেখান থেকে বের হতে চাইবে, তখন তা দিয়ে তাদের মাথায় আঘাত করা হবে। আল্লাহর কাছে সালামত-আফিয়ত কামনা করছি!
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারীমের সুরা মুহাম্মাদের এক আয়াতে বলেন,
وَسُقُوا مَاءً حميمًا فَقَطَّعَ أمْعَاءَهُمْ
অর্থ: তাদেরকে ফুটন্ত পানি পান করানো হবে, ফলে তা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্ন-ভিন্ন করে ফেলবে।
একটু চিন্তা করুন! ফুটন্ত পানি কেবল মাথায় ঢালা হবে না; তাদেরকে পানও করানো হবে।

একটি উপমা দিচ্ছি, যেন এর বাস্তবচিত্র আপনাদের দৃশ্যপটে কিছুটা হলেও ভেসে ওঠে। যদিও জাহান্নামের আগুনের পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরা অসম্ভব। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামের আগুন পৃথিবীর আগুনের চেয়ে সত্তরগুণ বেশি তীব্র হবে। যদি বলা হয়, আপনি এক চুমুকে এক কাপ চা বা কফি পান করুন। যদি সত্যিই এক চুমুকে পান করেন তাহলে কী অবস্থা হবে? নাড়িভুঁড়ি পুড়ে যাবে। এবার ভাবুন, জাহান্নামের আগুন কেমন হবে?
“তাদেরকে ফুটন্ত পানি পান করানো হবে, যা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্ন-ভিন্ন করে ফেলবে” এই আয়াতটির বাস্তবতা উপলব্ধি করতে চেষ্টা করুন। এজন্যই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“لو تعلمون ما أعلم لضحكتم قليلًا ولبكيتم كثيرًا”
“আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে, তাহলে কম হাসতে বেশি কাঁদতে”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৪৮৫)
সমস্যা হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা জানতেন আমরা তা জানি না। আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামের বর্ণনা অন্য আয়াতে এভাবে দিয়েছেন:
مِنْ جَهَنَّمَ مِهَادٌ وَمِنْ فَوْقِهِمْ غَوَاشٍ
অর্থ: জাহান্নামে তাদের বিছানা হবে আগুনের, উপরের চাদর হবে আগুনের। [সুরা আরাফ, /৪১)
ভালো করে চিন্তা করুন! জাহান্নামীদের বিছানা থাকবে আগুনের। তাদের উপরের কাঁথা-কম্বলও হবে আগুনের। তাদের পোশাক আগুনের, বিছানা আগুনের, পালিয়ে যেতে চাইলে আরো থাকবে লোহার হাতুড়ি।

অন্য আয়াতে সুস্পষ্টভাবে জাহান্নামীদের অবস্থা কীরূপ হবে তা আল্লাহ তায়ালা আপনাকে বলছেন। মাআযাল্লাহ! তাদের সবচেয়ে বড় আকাঙ্খা হবে কী? মৃত্যু!
দুনিয়াতে কাফেরদের সবচেয়ে বড় আকাঙ্খার বস্তু হচ্ছে জীবন, জাহান্নামে এই কাফেরদেরই বড় আকাঙ্খার বস্তু হবে মৃত্যু।
وَالَّذِينَ كَفَرُوا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقْضَى عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُوا وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُم مِّنْ عَذَابِهَا
অর্থ: কাফেরদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে জাহান্নামের আগুন। সেখানে তাদের মৃত্যুর ফায়সালা হবে না, এমনকি জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা লাঘবও করা হবে না। [সুরা ফাতির, /৩৬]

সেখানে তাদের মৃত্যু হবে না, শাস্তি লাঘব করা হবে না। বর্তমানে শাস্তি দেওয়ার জন্য কত যন্ত্র আবিস্কৃত হয়েছে। যদি কেউ আপনাকে সেসব যন্ত্র দিয়ে শাস্তি দেয়, তাহলে কতটুকু শাস্তি দিতে পারবে? একমাস, দুইমাস? এরপর আপনি মারা যাবেন, সমস্যা কেটে যাবে।

কিন্তু জাহান্নামের আগুন! চিন্তা করুন, এর কোনো অন্ত নেই। বছরকে বছর সেখানে শাস্তি দেওয়া হবে। সেখানে শান্তির লেশটুকুও নেই। মানুষ দুপুরবেলা, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার বিশ্রাম নেয়। দুনিয়াতে আমাকে কিছু সময় বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু জাহান্নামে এমন হবে না। সেখানে চব্বিশ ঘণ্টা, প্রতিটা মিনিট, প্রতিটা সেকেন্ড শাস্তির ভেতরে থাকতে হবে।

আজ যদি আমাদের কারো সারাদিন মাথাব্যাথা হয়, তাহলে সে কী করবে? সে জীবন ও জগত থেকে নিরাশ হয়ে যাবে। আল্লাহ পানাহ! জাহান্নামে বিরামহীন শাস্তি চলতে থাকবে! কাফের-মুশরিকদের শাস্তির কোনো অন্ত থাকবে না। মুমিনরা গুনাহের সমপরিমাণ শাস্তি ভোগ করে রেহাই পেয়ে যাবে।

চিন্তা করুন! “সেখানে তাদের মৃত্যু হবে না”, আরও চিন্তা করুন! “তাদের শাস্তি লাঘব করা হবে না”। একবছর গেল শাস্তি লাঘব হবে না। বিশবছর অতিবাহিত হলো শাস্তি লাঘব হবে না। একশ বছর চলে গেলো তবুও শাস্তি বিন্দুমাত্রও কমবে না। জাহান্নামের শাস্তির কোনো পরিবর্তন নেই। আল্লাহর কাছে সালামত-আফিয়ত কামনা করছি।

হে প্রিয় ভাই! আমাদের উচিত সার্বক্ষণিক জাহান্নামের চিন্তায় মগ্ন থাকা। আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাওয়া। আল্লাহ তায়ালা আরেক আয়াতে বলেন,
وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ
অর্থ: জাহান্নামীরা ডেকে বলবে, হে মালিক, তোমার প্রতিপালক যেন আমাদেরকে নিঃশেষ করে দেন। অর্থাৎ, আমাদের মৃত্যু দিয়ে নিস্তার দাও, একটু শান্তি দাও, আমরা বিরামহীন তীব্র শাস্তিভোগে ক্লান্ত হয়ে গেছি। মালিক হচ্ছে জাহান্নামের দায়িত্বশীল ফেরেস্তা। তারা জীবনের ইতি চাইবে। তখন তাদের জবাব দেয়া হবে,
إِنّكُمْ مّاكِثُونَ * لَقَدْ جِئْنَاكُم بِالْحَقّ وَلَـَكِنّ أَكْثَرَكُمْ لِلْحَقّ كَارِهُونَ
অর্থ: তোমরা তো এভাবেই থাকবে। আমি তোমাদের কাছে ‘সত্য’ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তোমরা অধিকাংশ ছিলে সত্যবিমুখ।

আমার প্রিয় ভাই! আপনাদের সামনে আরেকটি উপমা পেশ করছি। যদি জনৈক ব্যক্তি একটি সুচ নিয়ে এসে আপনার দেহে, চোখে-মুখে, স্পর্শকাতর অঙ্গে আঘাত করতে থাকে, তখন আপনি কী করবেন? আপনি কষ্ট অনুভব করবেন। যদি বলা হয়, একটি জ্বলন্ত আঙ্গার মুষ্ঠিবদ্ধ করে রাখতে, আপনি কী করবেন?

গভীরভাবে ভেবে দেখুন প্রিয় ভাই, জাহান্নামের আগুনের কোনো উপমা নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
فَيَوْمَئِذٍ لَّا يُعَذِّبُ عَذَابَهُ أَحَدٌ
অর্থ: সেদিন তাঁর মতো শাস্তি কেউ দিতে পারবে না।

কেউ আল্লাহ তায়ালার ন্যায় শাস্তি দিতে সক্ষম নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কুরআনে জাহান্নাম, জাহান্নামীদের হালত সম্পর্কিত অনেক আয়াত বর্ণনা করেছেন। মুমিনের কর্তব্য হচ্ছে, সেই আয়াতগুলো নিয়ে তাদাব্বুর ও চিন্তা-ফিকির করা। কমপক্ষে প্রতিমাসে জাহান্নামের আয়াতগুলো পাঠ করুন। প্রতিমাসে জাহান্নামের আলোচনা সংক্রান্ত লেকচার শুনুন। এতে অন্তর বিগলিত হয়ে জাহান্নামের আযাবের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ওঠবে। ফলে হারামকাজে লিপ্ত হওয়া বা ফরজ বিধান ত্যাগ করা থেকে বিবেক বাধা দেবে। জাহান্নামের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি হবে।

সবশেষ, আরশের মহান অধিপতি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি আমাকে এবং আপনাদেরকে জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি দান করুন এবং আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন। আমীন। ইয়া রাব্বাল আলামিন।


মূল: শায়খ খালিদ আল-হুসাইনান (আবু যায়েদ কুয়েতি) রহমাতুল্লাহি আলাইহি
অনুবাদ: আল-ফিরদাউস টিম

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাবিতে কুরআন তেলাওয়াতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের শাস্তি দিতে ডিনের চিঠি
পরবর্তী নিবন্ধফিলিস্তিনের জিহাদ || আপডেট – ১৮ মার্চ, ২০২৪