দারসে রমাদান || দারস-১০ || দোয়া

0
136

আমরা যদি আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাচারের দিকে দৃষ্টিপাত করি তাহলে অনেক চমৎকার চমৎকার শিক্ষণীয় বিষয় আমাদের দৃষ্টিগোচর হবে। তাঁর ধ্যান-খেয়াল, চিন্তা-ফিকির, স্মৃতি-অনুভূতি সকাল-সন্ধ্যা তাঁর রবের বন্ধনে আবদ্ধ থাকত।

দৈনন্দিন জীবনে কোনো সময় তাঁর অবসর নেই। যেমনটি বর্তমানে অধিকাংশ মানুষের অবস্থা। তাই তিনি আমাদের জন্য সকাল-সন্ধ্যার মাসনূন দোয়া বর্ণনা করেছেন। যে এই দোয়াগুলোর উপর আমল করবে, জীবনের পরতে পরতে দোয়াগুলো সমন্বয় করবে, সে শক্তি, দৃঢ়তা-স্থিরতা ও সাহসিকতা অনুভব করবে।

তাইতো তিনি আমাদের জন্য ঘুমানোর ও পানাহারের আগে-পরে, ঘরে প্রবেশের আগে, ঘর থেকে বের হওয়ার পরে, মসজিদে প্রবেশের আগে, মসজিদ থেকে বের হওয়ার পরে, জলপথে আরোহণের আগে, জলপথ থেকে বের হওয়ার পরে, পেরেশানি বা মুসীবতের সময়, অর্থাৎ মুসলিমের জীবনের প্রত্যেক মুহূর্তে— চিন্তা করুন! এমনকি শাহওয়াত বা সহবাসের সময়ও— কী দোয়া পড়তে হবে তা শিক্ষা দিয়েছেন, সুবহানাল্লাহ!

সহবাস হচ্ছে আনন্দ অনুভবের সময়। তা সত্ত্বেও রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে, তাঁর উম্মতকে সহবাসের সময়ও আল্লাহ তাআলার সাথে তাআল্লুক ও সম্পর্ক রাখার তরবিয়ত প্রদান করেছেন। একজন ব্যক্তি বৈধভাবে স্ত্রী-সহবাসের সময় কী দোয়া পড়বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা-ও শিখিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন:
“لو أنّ أحدكم أراد أن يأتي أهله ـ أي أن يُجامع زوجتَهُ ـ فقال: باسم الله ـ باسم الله استعانة بالله، توكل على الله ـ اللهم جنِّبنا الشيطان وجنِّب الشيطان ما رزقتنا”،
অর্থ: তোমাদের কেউ যদি স্ত্রী-সহবাসের ইচ্ছা করে সে যেন বলে বিসমিল্লাহ, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা ও তাঁর উপর ভরসা করার জন্য বিসমিল্লাহ বলবে। এরপর বলবে,
اللهم جنِّبنا الشيطان وجنِّب الشيطان ما رزقتنا،
‘হে আল্লাহ, আমাদেরকে ও এই সহবাসের উসীলায় যে সন্তান দান করবেন তাকে শয়তান থেকে রক্ষা করুন।’ (সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৬৩৮৮)

প্রিয় ভাই, লক্ষ করুন! একজন মুমিন ব্যক্তি স্ত্রী-সহবাসের আনন্দের সময় কী দোয়া করবে তা-ও তিনি শিক্ষা দিয়েছেন। কত মহান আমাদের ইসলাম! যে ইসলাম সহবাসের সময়ও আল্লাহর সাথে বন্ধন অটুট রাখার শিক্ষা দেয়!!

যে ব্যক্তি সহবাসের পূর্বে এই দোয়া পড়বে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যদি এই সহবাসে তার সন্তান লাভ হয়, অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তার তাকদীরে সন্তান লিখে থাকেন, তাহলে শয়তান তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তার উপর শয়তান ভর করতে পারবে না”।

দুশ্চিন্তার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দোয়া শিখিয়েছেন। যদি কারও দুশ্চিন্তা-পেরেশানী আসে তাহলে সে যেন পশ্চিমাদের মতো আত্মহত্যা না করে। তখন সমস্যা থেকে মুক্তিদানকারী আল্লাহ্‌ তাআলার শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কে সমস্যা থেকে মুক্তিদান করেন? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা। যিনি রহমান, যিনি রহীম। দুশ্চিন্তার সময় তিনি এই দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন,
اللهمَّ إني عبدُك ابنُ عبدِك ابنُ أمَتِك ناصيَتي بيدِك ماضٍ فيَّ حُكمُك…
এজন্য আমি মুসলিম, মুজাহিদ ভাই-বোনদের নসীহত করছি, তারা গাড়িতে বা বাড়িতে, কর্মস্থানে বা বিদ্যালয়ে, মোটকথা যেখানেই থাকুন সাথে একটি কিতাব রাখবেন। কিতাবটি আকারে ছোট, আয়ত্তকরণে সহজ; কিন্তু এর ফায়দা ও উপকার অপরিসীম। কিতাবটির নাম “হিসনুল মুসলিম”। কিতাবটিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত অনেক দোয়া রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি বিপদের মুখোমুখী হয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার এই মুহূর্তের জন্য দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “যদি কোনো মুসলিম বিপদে পতিত হয়”, ছোট-বড় যেকোনো বিপদ হোক, গাড়ি দুর্ঘটনা, অসুস্থতা, সামাজিক সঙ্কট, জানের ক্ষতি, ব্যবসায় মন্দা, মোটকথা যেকোনো মুসীবতে পতিত হোক, তিনি বলেন, যেকোনো মুসীবতের সময় যদি এই দোয়া পড়ে,
إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ اللَّهُمَّ أْجُرْنِي في مُصِيبَتِي، وأَخْلِفْ لي خَيْرًا مِنْها،
“নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য, নিশ্চয়ই আমরা তাঁরই কাছে ফিরে যাব। হে আল্লাহ, আপনি আমার মুসীবতের প্রতিদান দিন এবং যা হারিয়েছি তার চেয়ে উত্তম বস্তু আমাকে দান করুন”।
তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা তাকে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করবেন। এটি সত্যবাদী ও সত্যায়িত নবীর পবিত্র যবানে উচ্চারিত দোয়া।

প্রিয় ভাই, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদেরকে সর্বক্ষণ আল্লাহ তাআলার সাথে তাআল্লুক ও সম্পর্ক রাখার তরবিয়ত প্রদান করেছেন। কেন? এর কী লাভ? এর ফলাফল কী? যদি কোনো মুসলিম সর্বক্ষণ আল্লাহর সাথে তাআল্লুক রাখে তাহলে মানুষ ও জিন শয়তান তার কোনো ক্ষতি করতে সক্ষম হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّهُ لَيْسَ لَهُ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِينَ آمَنُواْ وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
অর্থ: যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের রবের উপর তাওয়াক্কুল করেছে তাদের উপর শয়তানের কোনো কর্তৃত্ব নেই। অর্থাৎ, তাদের উপর শয়তানে আসর ও প্রভাব খাটানোর সামর্থ্য নেই।
إِنَّمَا سُلْطَانُهُ عَلَى الَّذِينَ يَتَوَلَّوْنَهُ وَالَّذِينَ هُم بِهِ مُشْرِكُونَ.
অর্থ: শয়তানের কর্তৃত্ব কেবল মুশরিক ও কাফেরদের উপর।
وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ.
অর্থ: যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।

একজন মুমিন সকাল-সন্ধ্যায়, ঘুমের আগে-পরে, বাথরুমে প্রবেশের আগে ও বাথরুম থেকে বের হওয়ার সময়, সফরে-হজরে, পথে-ঘাটে, স্বশ্রমে-বিশ্রামে, কারও সাথে সাক্ষাতে, মোটকথা সকল হালতে উপযুক্ত দোয়া-আযকার পাঠ করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেকটি স্থান-কাল-পাত্রে উপযুক্ত দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো স্থানে অবতরণ করে বলে,
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التامّات
যতক্ষণ সে সেই স্থান থেকে না উঠবে ততক্ষণ কোনোকিছু তার ক্ষতি করতে পারবে না।

সুবহানাল্লাহ! উলামায়ে কেরাম বলেন, যখন কেউ বিমানে আরোহণ করে, অতঃপর বিমান থেকে যেখানেই অবতরণ করবে এই দোয়া পড়বে। যখন একজন নারী অন্য নারীদের সাথে সাক্ষাৎ করতে যায় তখন নারীরা এই দোয়ার প্রতি কত মুখাপেক্ষী। যেকোনো নেয়ামত লাভ করলে বা আনন্দের সময় এই দোয়া পড়বে। কেননা এই সময় অনেকের হিংসা-বিদ্বেষ ও বদ নজর লাগার আশঙ্কা বেশি। তখন এই নববী দোয়া পড়ে আল্লাহর নিরাপত্তার দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করবে।
মুসলিম ভাই-বোনদের উচিত, নববী দোয়াগুলো মুখস্থ করা। উপযুক্ত স্থানে দোয়াগুলো পাঠ করা। তাহলে লাভ করতে পারবে শান্তি-সৌভাগ্য ও মানসিক স্থিরতার জীবন।


মূল: শায়খ খালিদ আল-হুসাইনান (আবু যায়েদ কুয়েতি) রহমাতুল্লাহি আলাইহি
অনুবাদ: আল-ফিরদাউস টিম

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধগুজরাটে বোর্ড পরীক্ষায় মুসলিম শিক্ষার্থীদের হিজাব খুলতে বাধ্য করলো হল পরিদর্শক
পরবর্তী নিবন্ধইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের বিগত বছরের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের এক ঝলক