সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশুতে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের বিশেষ ইউনিটের যৌথ একটি সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণের ঝড় তুলেছেন ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন। এতে দেশটির পশ্চিমা সমর্থিত সামরিক বাহিনীর অন্তত ৫৭ সদস্য নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ মার্চ শনিবার ভোররাতে রাজধানী মোগাদিশু থেকে ৩০ কি.মি. দূরে বুসলে সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে অভিযানটি পরিচালনা করা হয়। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলার সময় সামরিক ঘাঁটিতে মোগাদিশু প্রশাসনিক বাহিনী ছাড়াও, আফ্রিকান জোটের সৈন্যরাও অবস্থান করছিল।
অভিযানের পর সোমালিয়ার ইসলামি অঞ্চলের প্রশাসন একটি বিবৃতি জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে যে, শাবাব যোদ্ধারা তাদের এই অভিযানটি রাজধানী মোগাদিশুর জাজিরা উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত গুরত্বপূর্ণ একটি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে চালিয়েছেন। মুজাহিদগণ ভোর সাড়ে পাঁচটায় ঘাঁটির বিভিন্ন অক্ষ থেকে ভারী অস্ত্রশস্ত্র দ্বারা অভিযানটি শুরু করেছিলেন। আর স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধের পর ঘাঁটিটি নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে অভিযানটি শেষ হয়েছে।
বিবৃতিতে প্রতিরোধ যোদ্ধা তথা মুজাহিদের পরিচালিত এই অভিযানে শত্রু বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, ঘাঁটিতে মুজাহিদদের হামলায় মোগাদিশু প্রশাসনের এক অফিসার সহ সামরিক বাহিনীর অন্তত ৫৭ সদস্য নিহত হয়েছে। এছাড়াও ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে বন্দী এবং হামলায় আহত হয়েছে আরও কয়েক ডজন সৈন্য। সেই সাথে মুজাহিদগণ গনিমত হিসাবে অর্জন করেছেন সারি সারি সামরিক যান, অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জাম।
বিবৃতিতে আরও যোগ করা হয়েছে, এই হামলায় নিহতদের মধ্যে মোগাদিশু প্রশাসনের সামরিক পুলিশ বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার লিবান গোলকাদও রয়েছে। কমান্ডার গোরকাদ ও তার সাথে থাকা দলটির গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন গোয়েন্দা মুজাহিদগণ। জানা যায় যে, কমান্ডার লিবান গোরকাদ ও তার দলটি মুসলিম জনগণের বিরুদ্ধে জঘন্য সব অপরাধের জড়িত, পাশাপাশি শাবেলি রাজ্যের জালাব মার্কা শহরের কিছু সংখ্যক মহিলাকে ধর্ষণ করেছিল। সেই এই ঘাঁটির দায়িত্বে ছিল, পাশাপাশি মোগাদিশুর প্রধান নিরাপত্তার দায়িত্বেও ছিলো গোরকাদ।
জানা যায়, গোলকাদের নেতৃত্বে থাকা আধাসামরিক বাহিনীকে সমর্থন দিত উগান্ডার সেনাবাহিনী। দলটিকে সংগঠিত করা হয়েছিল মোগাদিশুর নিকটতম শাবেলি রাজ্যের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে শরিয়াহ্ শাসিত অঞ্চল ও এর জনগণের সর্বাত্মক ক্ষতি সাধন করার জন্য। কিন্তু মুজাহিদগণ বিষয়টি জানতে পেরে গরোকাদ ও তার সীমালঙ্ঘনকারী বাহিনীকে দমন করতে সেই ঘাঁটিতে অভিযান পরিচালনা করেন।
একদিকে ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধারা যখন সামরিক ঘাঁটিতে অভিযান চালাচ্ছিলেন, অপরদিকে হামলার শিকার সেনাদের তখন উদ্ধারে রাজধানী থেকে একটি সামরিক কনভয় পাঠানো হয়। কিন্তু বিসেলি এলাকার কাছাকাছি আসার আগেই কনভয়টিতে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে বসেন ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী আস-শাবাবের অপর একদল মুজাহিদ।
একই সাথে আফগোয়া ও জাজিরা শহরের ২টি ঘাঁটি থেকেও অবরুদ্ধ সেনা সদস্যদের সাহায্যের প্রস্তুতি নেয় মোগাদিশু বাহিনী। ফলে এই ২টি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করেও ভারী মর্টার শেল ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেন শাবাব মুজাহিদিন। আর শত্রুর ৩টি অবস্থানে মুজাহিদদের একযোগে পরিচালিত এই হামলায় অনেক সাঁজোয়া যান ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি কয়েক ডজন শত্রু সৈন্যও হতাহত হয়।
উল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাজধানী মোগাদিশুর আশপাশের এলাকাগুলোতে ভারী আক্রমণ চালাচ্ছেন মুজাহিদগণ। এবিষয়ে দেশটির প্রসিদ্ধ সাংবাদিক জামাল ওসমান লিখেন “আশ-শাবাব মোগাদিশুর আশপাশের ৪০ শতাংশ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বর্তমান সোমালি প্রশাসন জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছে। আর আপনি স্থানীয় মিডিয়াতেও আশ-শাবাব সম্পর্কে কোনো সঠিক খবর দেখতে পাবেন না।”