ইসলামের মূল ভিত্তি পাঁচটি। যার একটি হল বাইতুল্লাহর হজ্ব। ঈমান, নামায, যাকাত ও রোযার পরই হজ্বের অবস্থান। হজ্ব হল শারিরিক ও আর্থিক উভয়ের সমন্বিত একটি ইবাদত। তাই উভয় দিক থেকে সামর্থ্যবান সকল মুসলিমের উপর হজ্ব ফরজ।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
وَلِلَّهِعَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ
এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, (সে জেনে রাখুক) আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৯৭
অর্থাৎ পরিবার-পরিজন, চাকর-বাকরসহ অধিনস্তদের ভরনপোষণ নিশ্চিত করে কোন ব্যক্তির নিকট হজ্জে যাওয়া-আসা ও পথের খরচে আর্থিক সামর্থ্যবান সকল নারী-পুরুষের উপর হজ্জ ফরজ।
হজ্ব একবারই আদায় করা ফরজ। সুতরাং যার উপর হজ্ব ফরজ হয়েছে সে ব্যক্তি মৃত্যুর আগে যে কোনো বছর হজ্ব আদায় করেলে তার ফরজ হজ্ব আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু হজ্বের মৌলিক তাৎপর্য, তার যথার্থ দাবি ও আসল হুকুম হচ্ছে হজ্ব ফরজ হওয়ার পর দ্রুত আদায় করা। কোন কারণবসত বিলম্ব না করা। কেননা যে কোনো ধরনের বিপদ-আপদ, অসুখ-বিসুখের সম্মুখীন হওয়া বা মৃত্যুর ডাক এসে যাওয়া তো অস্বাভাবিক নয়। আল্লাহ তাআলা ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরজ হজ্ব আদায়ের প্রতি এমনভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন যে, কেউ যদি এই হজ্বকে অস্বীকার করে বা এ বিষয়ে কোনো ধরনের অবহেলা প্রদর্শন করে তবে সে আল্লাহর জিম্মা থেকে মুক্ত ও হতভাগ্যরূপে বিবেচিত হবে।
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
من أراد الحج فليتعجل، فإنه قد يمرض المريض وتضل الضالة وتعرض الحاجة.
যে ব্যক্তি হজ্ব করার ইচ্ছে করে, সে যেন তাড়াতাড়ি তা আদায় করে নেয়। কারণ যে কোনো সময় সে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে বা বাহনের ব্যবস্থাও না থাকতে পারে অথবা অন্য কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। -মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৮৩৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৮৮৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৭৩২;
অন্য বর্ণনায় ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
تعجلوا إلى الحج، يعني الفريضة، فإن أحدكم لا يدري ما يعرض له.
ফরজ হজ্ব আদায়ে তোমরা বিলম্ব করো না। কারণ তোমাদের কারো জানা নেই তোমাদের পরবর্তী জীবনে কী ঘটবে। -মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৮৬৭; সুনানে কুবরা বায়হাকী ৪/৩৪০
একবার ফরজ হজ্ব আদায়ের পর পরবর্তী হজ্বগুলো নফল হিসেবে গণ্য হবে। এ সম্পর্কে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন-
يا أيها الناس! إن الله كتب عليكم الحج، فحجوا، فقال رجل : أكل عام يا رسول الله؟ فكست حتى قالها ثلاثا، ثم قال : لو قلت نعم لوجبت ولما استطعتم.
হে মানবসকল! আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হজ্ব ফরজ করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ্ব করো। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! প্রতি বছর কি হজ্ব করতে হবে? তিনি চুপ রইলেন এবং লোকটি এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করল। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে প্রতি বছর হজ্ব করা ফরজ হয়ে যেতো, কিন্তু তোমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হতো না। -সহীহ মুসলিম, হাদিস : ১৩৩৭ (৪১২); মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১০৬০৭;
হজ্ব করার শক্তি-সামর্থ্য ও অর্থ-বিত্ত থাকার পরও হজ্বে গমন না করলে হাদিস ও আসারে কঠোর বাণী উচ্চারণ হয়েছে। ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-
مَن أطاق الحجَّ فلم يحجَّ، فسواء عليه مات يهوديًّا أو نصرانيًّا.
যে ব্যক্তি হজ্ব করার সামর্থ্য রাখে, তবুও হজ্ব করে না সে ইহুদী হয়ে মৃত্যুবরণ করল কি খৃস্টান হয়ে; তার কোনো পরোয়া আল্লাহর নেই। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৫৭৮
তিনি আরো বলেন, আমার ইচ্ছে হয় কিছু লোককে বিভিন্ন শহরাঞ্চল ও লোকালয়ে পাঠিয়ে দিই, তারা সেখানে দেখবে, কারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্ব করছে না। তারা তাদের উপর কর আরোপ করবে। তারা মুসলমান নয়, তারা মুসলমান নয়।
সুতরাং সামর্থ্যবান প্র্যত্যেক মুসলমানের হজ্বের প্রস্তুতি গহণ করা উচিত। যেন আল্লাহ্ তাআলার এ ফরজ বিধান দ্রুত আদায় করা যায। আল্লাহ্ তাআলা আমাদরকে তার ঘর জিয়ারতের তৌফিক দান করুন। আমিন।