হজ্ব:তাৎপর্য ও ফজিলত
ইসলামে যে সকল আমলে বান্দার সমস্ত গুনাহ মুছে যায় ও বান্দা মাসুম হযে যায় তার মধ্যে অন্যতম হল বাইতুল্লাহর হজ্ব। গুনাহ মুক্ত হজ্বকে হাদিস শরীফে মাবরূর বা মকবুল হজ্ব বলা হয়েছে। এর বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদা রয়েছে।
হাদিস শরীফে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
من حج فلم يرفث ولم يفسق غفر له ما تقدم من ذنبه.
যে ব্যক্তি হজ্ব করে আর তাতে কোনোরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করে না, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। -সুনানে তিরমিযী, হাদিস : ৮১১
অন্য বর্ণনায় রয়েছে –
من حج لله فلم يرفث ولم يفسق رجع كيوم ولدته أمه.
আবু হুরায়রা হাদিসরাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্ব করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ্ব থেকে ফিরে আসবে যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়েছিল। -সহীহ বুখারী, হাদিস : ১৫২১; সহীহ মুসলিম, হাদিস : ১৩৫০।
হজ্ব শুধু শারীরিক ইবাদতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং হজ্ব পালন বান্দার পাপও মোচন করে দেয়। ফলে হজ্ব পালনকারীর গুনাহর বোঝা হালকা হয় এবং দারিদ্র্য দূর হয়। তবে হজ্জ পালন একমাত্র আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে হতে হবে। এতে কোনো প্রকার লৌকিকতা থাকতে পারবে না। তবেই হজ্ব পালনকারীর জন্য রয়েছে জান্নাত। এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে,
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة.
হজ্বে মাবরূরের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। -সহীহ বুখারী, হাদিস : ১৭৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদিস : ১৩৪৯।
আরেক বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
تابعوا بين الحج والعمرة، فإنهما ينفيان الفقر والذنوب كما ينفي الكير خيث الحديد، والذهب والفضة، وليس للحجة المبرورة ثواب إلا الجنة.
তোমরা হজ্ব ও উমরা পরপর একত্রে পালন কর। কেননা এ দুটি দারিদ্র্য ও গুনাহসমূহ এমনভাবে দূর করে দেয় যেমন কর্মকারের ও স্বর্ণকারের আগুন লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর করে দেয়। আর মাবরূর হজ্বের বিনিময় জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। -সুনানে তিরমিযী, হাদিস: ৮১০।
নারী, বৃদ্ধ, দুর্বল ব্যক্তি ও শিশুদের জন্য হজ্বের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা হাদিসরাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
يا رسول الله! نرى الجهاد أفضل العمل، أفلا نجاهد؟ قال : لا، لكن أفضل الجهاد حج مبرور.
ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি। আমরা কি জিহাদ করব না? তিনি বললেন, না। বরং তোমাদের নারীদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হল হজ্বে মাবরূর। -সহীহ বুখারী, হাদিস : ১৫২০; মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৪৪২২।
আয়েশা হাদিসরাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাললাম থেকে এ কথা শুনার পর হতে আমি হজ্ব ছাড়িনি। -সহীহ বুখারী, হাদিস : ১৮৬১; মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৪৪৯৭; সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৪/৩২৬
কোন ব্যক্তি হজ্ব ও উমরা পালনকালে মারা গেলেও তার জন্য রয়েছে বিশেস মর্যাদা ও ফজিলত । ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
بينما رجل واقف مع رسول الله صلى الله عليه وسلم بعرفة إذ وقع عن راحلته فأقعصته، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : اغتسلوه بماء وسدر، وكفنوه بثوبيه ولا تخمروا رأسه ولا تخطوه، فإنه يبعث يوم القيامة ملبيا.
এক ব্যক্তি আরাফাতের ময়দানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আবস্থান করছিলেন। হঠাৎ তিনি বাহন থেকে নীচে পড়ে গেলেন। এতে তার ঘাড় মটকে গেল এবং তিনি মারা গেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে বড়ই পাতা সিদ্ধকরা পানি দিয়ে গোসল দাও, তার দুই কাপড় দিয়ে তাকে কাফন পরাও। তাকে সুগন্ধি লাগিও না এবং তার মাথাও আবৃত করো না। কেননা তাকে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠানো হবে। -সহীহ বুখারী, হাদিস : ১২৬৭; সহীহ মুসলিম, হাদিস : ১২০৬; সুনানে তিরমিযী, হাদিস : ৯৫১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩০৮৪
হজ্ব আদায়কারীদের উপর প্রতিদিন আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত নাযিল তে থাকে। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
ينزل الله كل يوم على حجاج بيته الحرام عشرين ومائة رحمة : ستين للطائفين وأربعين للمصلين وعشرين للناظرين.
আল্লাহ তাআলা বাইতুল্লাহর হজ্বকারীদের উপর প্রতিদিন একশত বিশটি রহমত নাযিল করেন, তার ষাটটি তাওয়াফকারীদের জন্য, চল্লিশটি মুসল্লীদের জন্য এবং বিশটি দর্শকদের জন্য। -শুয়াবুল ঈমান বায়হাকী, হাদিস : ৪০৫১; তারগীব ১৭৮৬
রাব্বে কা’বার দরবারে দোআ করি, তার ঘর জিয়ারতের তৌফিক দান করুন এবং সকল হাজীদের হজ্ব কবুল করুন। আমিন।