সিন্ডিকেটের কবলে সরকারি ধান সংগ্রহ, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা

0
114

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা খাদ্যগুদামে সরকারিভাবে বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রম সিন্ডিকেটের (অসাধু চক্র) কবলে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তালিকাভুক্ত কৃষকেরা বলছেন, বিভিন্ন অজুহাতে তাদের ধান ফেরত দেওয়া হচ্ছে। এর বদলে ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেটটি অন্য জায়গা থেকে কম দামে ধান কিনছে। এতে করে মুনাফা হারাচ্ছেন প্রকৃত কৃষকেরা, আর তা লুটে নিচ্ছে চক্রের সদস্যরা।

খাদ্যগুদাম সূত্রে আজকের পত্রিকা জানিয়েছে, এ বছর আলফাডাঙ্গায় সরকারিভাবে বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৪৬ টন এবং মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৮০ টাকা মণ। গত ৭ মে থেকে শুরু হওয়া সংগ্রহ অভিযান ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।

অভিযোগ উঠেছে, প্রকৃত কৃষকেরা গুদামে ধান বিক্রি করতে পারছেন না। তালিকাভুক্ত কৃষক রিপন মিয়া বলেন, ‘সরকারি কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে পারলে লাভ থাকত। কিন্তু দালালেরা কেন্দ্র পর্যন্ত আমাদের যেতেই দেয় না। তাই বাধ্য হয়ে হাটে ১০০০-১১০০ টাকা মণ বিক্রি করছি। কিন্তু এই দামে ধান কিনে তারা সরকারের কাছে বিক্রি করে ১ হাজার ২৮০ টাকায়। আমরা যে লাভ করব, সেই লাভ দালালেরা খাচ্ছে। নানা অজুহাতে আমাদের ধান নিচ্ছেন না কর্মকর্তারা। কেউ কেউ কেন্দ্রে নিতে পারলেও এসব অজুহাতে ধান ফেরত দেওয়া হয়। তখন আমাদের পরিবহন খরচ গচ্চা যায়।’

জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ত্রিনাথ পাল, ইমরুল হোসেনসহ কয়েকজন ধান ব্যবসায়ী মিলে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। চক্রটি যশোরসহ আলফাডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকা থেকে কম দামে ধান কিনে পরিচিতি তালিকাভুক্ত কৃষকদের মাধ্যমে তা সরকারি গুদামে সরবরাহ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে সহায়তা করছে ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা সানাউল্লাহ। পরে ওই কৃষকদের ব্যাংক হিসাব থেকে বিক্রির টাকা তুলে নেয় চক্রটি। তবে অভিযুক্ত ইমরুল এই অভিযোগ অস্বীকার করে।

কৃষকেরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে হলে এর আর্দ্রতা ১৪ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। কিন্তু কৃষকের কাছে তো আর্দ্রতা মাপার যন্ত্র নেই, ফলে ধান কেন্দ্রে নিয়ে বিপাকে পড়েন তারা। যদি আর্দ্রতা ১৪ শতাংশের বেশি হয় তাহলে ধান নেয় না। এ প্রক্রিয়ার সুযোগ নিয়ে কৃষকদের বঞ্চিত করছে সিন্ডিকেট সদস্যরা। তারা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে গুদামে বেশি দামে বিক্রি করে। এবার প্রতি মণে তারা ১৬০ থেকে ২৬০ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গত বছর আমার যে ধান সঠিক আর্দ্রতা নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেই ধান সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি করার পর তাদের কাছ থেকে কিন্তু ক্রয়কেন্দ্র নিয়েছে। সিন্ডিকেটের সঙ্গে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাদের যোগাযোগ রয়েছে। তারা মিলে একটা সিন্ডিকেট করেছে।’

তবে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সানাউল্লাহ। সে বলে, ‘উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার তালিকাভুক্ত কৃষক রয়েছেন। প্রত্যেকের কাছ থেকে ধান কেনা সম্ভব নয়। এ ছাড়া উপজেলায় ধান নিয়ে এসে ফেরত গেছেন এমন কথা আমার জানা নেই এবং কৃষকদের কাছ থেকে না কিনে অন্যদের মাধ্যমে ধান ক্রয় করার কোনো সুযোগই নেই।’

খাদ্য ক্রয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমীন ইয়াছমীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন অভিযোগ শুনতে পেলাম, খোঁজ নিয়ে দেখব। তদন্ত করে অনিয়ম হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’


তথ্যসূত্র:
১. সিন্ডিকেটের কবলে সরকারি ধান সংগ্রহ – https://tinyurl.com/yv6fe9z2

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধসরবরাহ থাকলেও বেড়েছে সবজি-ডিমের দাম
পরবর্তী নিবন্ধশত কোটি টাকা নিয়ে ভারতে পালিয়েছিল প্রাণনাথ দাস