ভয়াবহ নৃশংসতা: ছেলের সামনে মাকে পিষে দিল ইসরায়েলি ট্যাংক

0
199

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার গাজা সিটিতে ছেলের সামনে মাকে পিষে দিয়েছে দখলদার ইসরায়েলের একটি ট্যাংক। ২৭ জুন, বৃহস্পতিবার ভয়াবহ এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইউরো-মেড। সংস্থাটি বলেছে, ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা সাফিয়া হাসান মুসা আল-জামালের বাড়িতে ইসরায়েলি সেনারা হামলা চালায়। এতে তিনি আহত হন। এরপর তার ওপর দিয়ে চালিয়ে দেওয়া হয় ট্যাংক। সাফিয়ার ছেলে মুহান্নাদ আল-জামাল এর সামনেই এই ঘটনা ঘটেছে।

মুহান্নাদ বলেছেন, ঘটনার সূত্রপাত হয় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায়। ওই সময় ইসরায়েলি সেনারা গাজা সিটির সেজায়াতে প্রবেশ করে। ইসরায়েলিদের গুলি ও বোমা থেকে বাঁচতে তার মা, তিন বোন ও তাদের সন্তানরা ভবনের নিচ তলায় চলে আসেন। এরপর ইসরায়েলি সেনারা তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে। বাড়িতে ঢুকেই ব্যাপক গোলাগুলি শুরু করে তারা। এছাড়া বোমাও নিক্ষেপ করে। এতে মুহান্নাদ এবং তার মা আহত হন। মুহান্নাদের বোন আরেজি জানিয়েছেন, তাদের মাকে প্রথমে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয় এক নারী সেনা। এরপর বলা হয় তাদের মাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে।

মুহান্নাদ জানিয়েছেন, এরপর তাকে এবং তার মাকে ট্যাংকে করে নিয়ে যাওয়া হয় মুস্তাহা চত্বরে। সেখানে নিয়ে গিয়ে তার মাকে রাস্তায় শোয়ানো হয়। এরপর তার ওপর দিয়ে চলে যায় একটি ট্যাংক। ভয়াবহ সেই ঘটনার কথা মনে করে মুহান্নাদ বলেন, “যখন আমি এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করি আমার মনে হয়েছিল আমি পাগল হয়ে গেছি। আমি চিৎকার ও কাঁদা শুরু করি। তারপর সেখানে গোলাগুলি শুরু হলে আমি পালিয়ে যাই।”

ইসরায়েলি বর্ববরতা যেন সবকিছুকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন আগেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নির্মমতার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। যেখানে দেখা যায় চলন্ত জিপের সাথে বেঁধে রক্তাক্ত অবস্থায় দুই ফিলিস্তিনিকে অর্ধনগ্ন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এই ঘটনার পর পশ্চিম তীরে বসবাস করা অন্যান্য ফিলিস্তিনিরাও মুখ খুলতে শুরু করেছেন। ইসরায়েলি আগ্রাসনের শিকার দুই ফিলিস্তিনি নিজেদের রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।

তারাও বলেছেন, তাদেরকেও জিপের বনেটের ওপর জোর করে তুলে দিয়েছিল ইসরায়েলি সেনারা। এরপর তারা জিপটি একটি গ্রামের রাস্তা ধরে চালিয়ে নিয়ে যায়। ২৫ বছর বয়সী সামির দাবায়াও গত সপ্তাহে জেনিনের জাবারিয়াত এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মমতার শিকার হন। সেই অভিযানের সময় পিঠে গুলিবিদ্ধ হন সামির, রক্তাক্ত অবস্থায় কয়েক ঘণ্টা মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকেন। এরপর তার প্রাণ আছে দেখে ইসরাইলি সেনারা তাকে আবারও বন্দুক দিয়ে আঘাত করেন। এরপর সামিরকে জিপের ওপর ছুড়ে ফেলা হয়।

সামিরের দাবি, তার ট্রাউজারও খুলে নেয় ইসরায়েলি সেনারা। এরপর তাকে নিয়েই চালানো হয় গাড়ি। সেই ঘটনার ভিডিও দেখান সামির। নিরাপত্তা ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওতে সামিরকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় দ্রুতগতিতে চলা ইসরায়েলি জিপের ওপর শুয়ে থাকতে দেখা যায়। আরেক ফিলিস্তিনি হিশাম ইসলেইত। তিনি বলেন, জাবারিয়াতে অভিযানের সময় তিনি দু’বার গুলিবদ্ধ হয়েছেন। একই ধরনের একটি সামরিক জিপ, যেটিতে ‘ওয়ান’ লেখা আছে, তাকে সেটির ওপর জোর করে তোলা হয়েছিল। হিশামও বলেছেন, ইসরায়েলি সেনারা তার পোশাকও খুলে নিয়েছিল। তাকেও জিপের বনেটের ওপর চড়ানো হয়।


তথ্যসূত্রঃ

1. A compound crime: Israeli army hits Gaza family, uses them as human shields, and runs over their mother
– https://tinyurl.com/4b96u8ea
2.Israeli tank ‘runs over injured mother’ in Gaza City’s Shejaiya
– https://tinyurl.com/29tfnp3k

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধমুসলিম পরিচয়ের কারণে মসজিদের ইমাম কে কুপিয়ে হত্যা
পরবর্তী নিবন্ধভারতে মুসলিম গরু পাচারকারী সন্দেহে ২ লেবু ব্যবসায়ীকে পিটুনি গো-পুজারিদের