গাজীপুর নগরের রাজবাড়ি ঢাল থেকে একটি সড়ক সোজা চলে গেছে তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সের আসা-যাওয়া এই সড়কে। সড়কটি ঘেঁষেই জেলার সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রানী বিলাসমণি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়। আছে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান; কিন্তু এর মধ্যেই সড়কটির দুই পাশ দখল করে চলছে হিন্দুদের রথযাত্রা উপলক্ষে ২০ দিনব্যাপী মেলার আয়োজন। এতে দেখা দিয়েছে ভোগান্তির আশঙ্কা। তবে এ ব্যাপারে নেই কোনো প্রশাসনিক অনুমতি।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও সচেতন নাগরিকেরা বলছেন, প্রতিবছর আষাঢ় মাসে সড়ক–সংলগ্ন রথখোলা এলাকায় শ্রীশ্রী মানিক্যমাধবের রথযাত্রা হয়। এ উপলক্ষে সড়কের দুই পাশ দখল করে মেলার আয়োজন করে রথযাত্রা আয়োজক কমিটি। এতে মেলায় আসা মানুষের ভিড়ে কার্যত বন্ধ হয়ে যায় পুরো সড়ক। এতে ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো মানুষ। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন হাসপাতালে আসা মানুষ। রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সের যাতায়াতে সমস্যা হয়; পাশাপাশি মেলায় চলা গান-বাজনায় শিক্ষার্থীদের মনোযোগে ব্যাঘাতসহ যানজটে ভোগান্তি দেখা দেয় আশপাশের সড়কে।
নগরের দক্ষিণ ছায়াবীথি এলাকার বাসিন্দা ও কাজী আজিম উদ্দিন কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান মো. মাসুদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান সড়ক ব্লক (বন্ধ) করে এভাবে মেলার আয়োজন কোনোভাবেই মানা যায় না। চাইলেই বিকল্প জায়গায় মেলা করা সম্ভব; কিন্তু হাসপাতাল সরিয়ে বিকল্প জায়গায় নেওয়া সম্ভব না। আমরা সব সময়ই এর প্রতিবাদ করে আসছি; কিন্তু কোনো কাজ হয় না।’
একইভাবে রানী বিলাসমণি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক কামরুন্নাহার বলেন, ‘যেহেতু স্কুলের একদম পাশেই মেলা, তাই সমস্যা তো হয়ই। ছেলেরা অনেক সময় স্কুল ফাঁকি দিয়ে মেলায় চলে যায়। এ ছাড়া এখন স্কুলে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা চলছে।’
আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখে প্রথম আলো জানায়, রাজবাড়ি ঢাল থেকে তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে যেতে সড়কের শুরুতেই স্থাপন করা হয়েছে একটি বিশাল তোরণ। সেখানে লেখা ‘শ্রীশ্রী মানিক্যমাধবের রথযাত্রা ও রথমেলা-২০২৪’। এরপর সড়কটি ধরে সামনে এগোলেই চোখে পড়ে মেলার বিশাল কর্মযজ্ঞ। সড়কের দুই পাশে বসানো হচ্ছে বিভিন্ন পণ্যের দোকান। এতে সংকুচিত হয়ে পড়েছে পুরো সড়ক। এর মধ্যেই রথখোলা এলাকায় চলছে রথযাত্রার আয়োজন। রথখোলা এলাকায় সড়কটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জেলা পরিষদ সড়ক। এ সড়কেও চলছে মেলার আয়োজন।
দেখা যায়, মেলা উপলক্ষে সড়কজুড়ে দোকানিদের কর্মব্যস্ততা। সড়কে এলোমেলোভাবে পড়ে আছে বাঁশ, কাঠসহ বিভিন্ন জিনিস। সড়কের দুই পাশে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে দোকান। এতে সংকুচিত হয়ে পড়েছে সড়ক।
মেলার আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, রোববার রথ টানার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে রথমেলা। চলবে ২০ দিন। গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক রথযাত্রা ও মেলা উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
সড়কের ওপর মেলার বিষয়ে জানতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জায়েদা খাতুনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে প্রথম আলো। কিন্তু তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাও ফোন ধরেনি। পরে মেয়রের প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী মেলার ব্যাপারে সিটি করপোরেশন থেকে অনুমতি নেওয়ার কথা; কিন্তু এ ব্যাপারে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগই করেনি। এমন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে কীভাবে মেলা বসছে, তা জেলা প্রশাসকই ভালো বলতে পারবেন।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রথযাত্রার সঙ্গে মেলার কোনো সম্পর্ক নেই। সড়কে মেলার ব্যাপারে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মেলার আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব ও ভাষাশহীদ কলেজের অধ্যক্ষ মুকুল কুমার মল্লিক প্রথম আলোকে বলে, ‘আমাদের অনুমতি আছে। এ–সংক্রান্ত আমাদের চিঠি ও রেজল্যুশন আছে। যদি কেউ বলেন অনুমতি নেই, তবে ভুল বলছেন।’
এভাবে কর্তৃপক্ষের একেকজন একেক কথা বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। ছল-চাতুরি করে রথযাত্রার আয়োজন করা হচ্ছে। কিন্তু রোগীসহ সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি থেকে উদ্ধারের চেষ্টা নেই কারো।
তথ্যসূত্র:
১. গাজীপুরে হাসপাতালে যাওয়ার সড়ক বন্ধ করে মেলা, ভোগান্তি – https://tinyurl.com/3bkcfrn2