❝তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার❞ বাক্যটিকে বলা হয় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মোড় ঘুরানো স্লোগান। এই স্লোগানের মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে লালকার্ড দেখায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের ছাত্র-জনতা। স্লোগানটিকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হচ্ছে এমন অভিযোগে ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান দিয়ে মিছিল করে আবারও নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১০ টা নাগাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলপাড়া থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা এই স্লোগান ও মিছিল শুরু করে। পরবর্তীতে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল হয়ে মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ ঘুরে টিএসসিতে একটি সমাবেশের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শেষ হয়।
গণঅভ্যুত্থানের ২ মাস যেতে না যেতেই ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা চালাচ্ছে আন্দোলনে সমন্বয়ক হিসেবে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিরাই! তারা হাজারো মানুষের লাশের উপর প্রতিষ্ঠিত গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি চিহ্ন মুছে দিতে চায় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। শুধুমাত্র ইতিহাস বিকৃত করাই নয় সচিবালয়সহ সরকারি কার্যালয়গুলোতে পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী দোসরদেরকে পুনর্বাসন করার দুঃসাহসও তারা দেখিয়েছে।
মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের দেওয়া তথ্যমতে, জুলাই মাসে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের শুরু হয়েছিলো ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানের মাধ্যমে। কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্য থেকে যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে গেছেন তারাসহ কয়েকজন সেই স্লোগানকে বিকৃত করার চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের অনেকে মূল স্লোগানকে বিকৃত করে “তুমি নও আমি নই, রাজাকার রাজাকার” স্লোগানটি সামনে নিয়ে আসছেন। স্লোগান বিকৃত করার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন, আওয়ামী প্রশাসনকে পুনর্বাসনসহ নানা অপচেষ্টা রয়েছে বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের।
মিছিল শেষে সমাবেশে ঢাবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক ইবনে আলী বলেন, জুলাই বিপ্লবের ২ মাস যেতে না যেতেই ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা চালাচ্ছে একদল অপতৎপরতাকারী। তারা হাজারো শহীদের লাশের উপর প্রতিষ্ঠিত গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি চিহ্ন মুছে দিতে চায়। শুধুমাত্র ইতিহাস বিকৃত করাই নয় সচিবালয়সহ সরকারি কার্যালয়গুলোতে পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী দোসরদেরকে পুনর্বাসন করার দুঃসাহসও তারা দেখিয়েছে।
যেই স্লোগানকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছিলো, সেই স্লোগানকে বিকৃত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই আন্দোলন কারও একার না। সারাদেশের ছাত্র জনতার অংশগ্রহণে এই আন্দোলন সফল হয়েছে।
এ সময় তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন ছাত্র জনতা জানে কারা এই অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্র জনতা যদি জনস্রোত শুরু করে বানের জলের খড়কুটোর মত তারা ভেসে যাবে।
শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের শিক্ষার্থী আশিক খান বলেন, যেই স্লোগানকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছিলো, সেই স্লোগানকে বিকৃত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই আন্দোলন কারও একার না। সারাদেশের ছাত্র জনতার অংশগ্রহণে এই আন্দোলন সফল হয়েছে। তাই কতিপয় লোক যদি ক্ষমতা পেয়ে এই স্লোগানকে বিকৃত করার চেষ্টা করে আমরা সেটাকে ইতিহাস বিকৃত করার অপচেষ্টা হিসেবে ধরে নিবো। আর ছাত্র সমাজ এটা কখনোই মেনে নিবে না।
প্রসঙ্গত, জুলাইয়ের ১৪ তারিখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। হল পাড়ায় হল গুলোতে শুরু হয় তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার স্লোগান। মুহূর্তের মধ্যে একত্রিত হয়ে শিক্ষার্থীরা টিএসসি অভিমুখে যাত্রা করে। মেয়েদের হল থেকে গেট ভেঙে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে আসে এবং টিএসসিতে একটি সমাবেশ করে। এই সময়টাকে মুলত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তথ্যসূত্র:
১. গণঅভ্যূত্থানের স্লোগান বদলানোর শঙ্কা, ‘রাজাকার’ ধ্বনিতে আবারও উত্তাল ঢাবি
– https://tinyurl.com/hukeypr6