কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা আগানগর ইউনিয়নের গোকুলনগর গ্রামের নাজির হোসেন ও হোসনে আরা বেগম দম্পতির বড় ছেলে কিশোর জুবায়েদ (১৬)। কাজ করতো ঢাকার একটি ফার্নিচার দোকানে। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর দুপুরে যাত্রাবাড়ী এলাকায় মিছিলে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় জুবায়েদ।
গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, ৭ মাস আগে ভালো আয় রোজগারের আশায় বাবা-মা ও ছোট ভাইকে সাথে নিয়ে ঢাকার শনির আখড়ায় ভাড়া বাসায় ওঠে কিশোর জুবায়েদ। শনির আখড়ার ৫ নং গলিতে একটি ফার্নিচারের দোকানে মিস্ত্রির কাজ করতো সে। একই এলাকায় ছোট ভাই জুনায়েদ (১৪) কে একটি টেইলার্সে দর্জির কাজে দিয়েছিল। বাবা নাজির হোসেন মাঝে মধ্যে রিকশা চালাতেন। এভাবেই চলছিল তাদের সংসার।
জুন মাসে শুরু হয় বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মাঝে মধ্যে সেই আন্দোলনের মিছিলেও যুক্ত হতেন কিশোর জুবায়েদ। গত ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কাজ করার উদ্দেশে ফার্নিচারের দোকানে যায় জুবায়েদ। দুপুর ১টার দিকে জোহরের আজান হলে মালিক বলেন বাসায় চলে যেতে। কিন্তু জুবায়েদ বাসায় না গিয়ে চলে যায় বিজয় মিছিলে।
শনির আখড়া থেকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় গিয়ে মিছিলে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয় কিশোর জুবায়েদ। তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল। এর মধ্যে অনেকবার ফোন করেও মোবাইলে বন্ধ পায় জুবায়েদের। বিকেলের দিকে আর অপেক্ষা না করে তার খোঁজ নিতে বেরিয়ে পড়েন পরিবারের সবাই। আশপাশের হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গিয়ে জুবায়েদ ছবি দেখান তারা। কিন্তু কোথাও নেই জুবায়েদ।
অনেকেই পরামর্শ দেয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যাওয়ার জন্য। রাতে সেখানে গিয়ে রিসিপশনের ছবি ও নাম দিয়ে খোঁজা হয় তাকে কিছু পাওয়া যায়নি।
পরে একজন ছবি দেখে বলেন মর্গে গিয়ে দেখতে পারেন এমন একটি লাশ মর্গে দেখে এসেছি। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে মর্গে গিয়ে এক কোণে জুবায়েদের মরদেহ শনাক্ত করেন পরিবারের লোকজন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রাতেই বাড়িতে আনা হয় জুবায়েদের মরদেহ। পরেরদিন পারিবারিক তাকে কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জুবায়েদের ডান চোখে একটি গুলি লেগে মাথার পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে গেছে। এছাড়াও শরীরে রয়েছে অসংখ্য গুলির ক্ষত। দেশ যখন স্বৈরাচার মুক্তির আনন্দে ভাসছে জুবায়েদের পরিবার তখন ভাসছে চোখের জলে।
ছেলের মৃত্যুর পর জুবায়েদের মা হোসনে আরা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গোসল করে সকালের খাবার না খেয়েই কাজের উদ্দেশ্যে দোকানে যায় জুবায়েদ। সকালে খেয়ে যায়নি তাই দুপুরের খাবার রান্না করে খাবার নিয়ে বসে ছিলাম জুবায়েদের জন্য।
দুপুরে গড়িয়ে বিকেলেও সে না এলে ৪টার দিকে জুবায়েদকে খুঁজতে বাইর হই। এরমধ্যে তার মোবাইলেও অনেক বার ফোন করা হলেও মোবাইল নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। আশপাশের অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিকে তাকে খোঁজা হয় কিন্তু পাওয়া যায়নি। পরে ঢাকা মেডিকেল মর্গে গিয়ে মরদেহ পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। এছাড়াও আরও যারা এই আন্দোলনে শহিদ হয়েছে তাদের পাশে যেন বর্তমান সরকার দাঁড়ায় সেই দাবিও জানাই।
তথ্যসূত্রঃ
১. গুলি ঢোকে ডান চোখে, বেরিয়ে যায় মাথার পেছন দিয়ে
-https://tinyurl.com/2u26dv8h