ইয়াহইয়া সিনওয়ারের শাহাদাত মুসলিম তরুণদের জন্য একটি মশাল: আল-কায়েদা উপমহাদেশ

0
538

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস নেতা ইয়াহইয়া সিনওয়ার রহিমাহুল্লাহ্। গত ১৬ অক্টোবর গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাতে পবিত্র ভূমির প্রতিরক্ষায় দখলদার ইসরাইলী বাহিনীর সাথে সম্মানজনক এক যুদ্ধে বীরত্বের ইতিহাস রচনার মাধ্যমে শাহাদাত বরণ করেছেন। তাঁর এই শাহাদাতে শোক জানিয়ে দুই পৃষ্ঠার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে আল-কায়েদা উপমহাদেশ।

বিবৃতিটি মহান রবের প্রশংসা ও মুসলিম উম্মাহর প্রাণের স্পন্দন রাসূল মুহাম্মদ (ﷺ) এর প্রতি হামদ ও সানার মাধ্যমে শুরু করা হয়েছে। এরপর ব্যথিত হৃদয় ও অশ্রুসিক্ত নয়নে অত্যন্ত দুঃখের সাথে নির্ভীক মুজাহিদ নেতা, হাফিজুল কুরআন ও ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো প্রধান ইয়াহইয়া সিনওয়ার রাহমাতুল্লাহি আলাইহির শাহাদাতের সংবাদে গভীর শোক প্রকাশ করে দলটি।

এসময় সমগ্র মুসলিম উম্মাহ, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যুদ্ধরত বীর মুজাহিদিন, হামাস ও আল-কাসসাম ব্রিগেডের নেতৃত্ব, এর সহকর্মী মুজাহিদিন, শহিদ সিনওয়ারের পরিবার এবং ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমবেদনা জানায় আল-কায়েদা উপমহাদেশ। সেই সাথে মহান রবের কাছে ফরিয়াদ জানিয়ে বলা হয়, হে আল্লাহ! আপনি তাঁর শাহাদাতকে কবুল করুন, জান্নাতে সর্বোচ্চ আবাসস্থল দান করুন, তাকে নবীগণের সাথে এবং সিদ্দিকীন, শুহাদা ও সালিহিনদের অন্তর্ভুক্ত করুন।

এরপর ইসলামের এই মহানায়ক ও বীর মুজাহিদ সেনাপতির শাহাদাত সম্পের্কে বিবৃতিতে বলা হয়, নিশ্চয়ই জিহাদি কাফেলা চলতে থাকবে, কাফের ও মুনাফিকরা পরাজিত হবে এবং আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী হবে- আর এটিই চিরন্তন সত্য ও অবধারিত। তাই এ পথে মুজাহিদ নেতাদের এসকল শাহাদাত জিহাদি কাফেলার ইন্ধন। প্রকৃতপক্ষে, সত্য-মিথ্যার এই লড়াইয়ে সামনের সারিতে লড়াইরত অবস্থায় শহিদ হওয়া ইসলামের সৈনিক ও এই কাফেলার সেনাপতিদের জন্য গর্বের ও সম্মানের, এবং এই পথের ন্যায়পরায়ণতার উজ্জ্বল প্রমাণ।

ইসলামের বীর ও মুজাহিদিন নেতা শহিদ ইয়াহইয়া সিনওয়ার, পবিত্র আল-আকসা মসজিদ পুনরুদ্ধার এবং এই ভূমির জনগণ ও তাদের বৈধ অধিকারের জন্য নিজের সর্বস্ব উৎসর্গ করেছেন। তাঁর এই ত্যাগ মুসলিম উম্মাহর তরুণদের জন্য একটি মশাল।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শহিদ ইয়াহইয়া সিনওয়ারের জীবনের যাত্রা ছিলো সাম্মানজনক জিহাদি যাত্রা। তিনি দখলদার জায়োনিস্টদের কারাগারে যৌবনের ২২টি বছরের ফুল ইসলামের জন্য উৎসর্গ করেছেন। আর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েও তিনি বিশ্রামের স্বাদ পরিত্যাগ করেন এবং জিহাদি পথের যাত্রা অব্যাহত রাখেন। শাহাদাতের মাধ্যমে তাঁর দীর্ঘ জিহাদি পথের সমাপ্তি মুসলিম উম্মাহকে এই আহ্বান জানাচ্ছে যে, আল-আকসার পবিত্র ভূমির পুনরুদ্ধার, মুসলিম উম্মাহর মুক্তি এবং আল্লাহর বাণী সমুন্নত করার গুণাবলী প্রতিটি মুমিনের জন্য আবশ্যক।

এরপর বার্তায় ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় জায়োনিস্ট বাহিনীর চালানো বর্বরোচিত আগ্রাসনের ভয়াবহতার একটি চিত্র তুলে ধরে উল্লেখ করা হয় যে- ঈমান, সম্মান, জিহাদ ও শাহাদাতের ভূমি ফিলিস্তিনের গাজায় শহীদদের প্রকৃত সংখ্যা অনুমান করা হয় প্রায় দেড় লাখ। এদের মধ্যে যাদের মৃতদেহ শনাক্ত করা হয়েছে তাদের আনুষ্ঠানিক সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার।

এমন পরিস্থিতিতেও ফিলিস্তিনের সাধারণ মুসলমান থেকে শুরু করে ফিলিস্তিন জিহাদের শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যন্ত সবাই আল-আকসা মসজিদের মুক্তি এবং মুসলিম উম্মাহকে রক্ষার এই যুদ্ধে সামনের সারিতে থেকে অত্যুক্তি ছাড়াই জায়োনিস্ট বাহিনীর মোকাবিলা করছেন।তাঁরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর আনিত দ্বীনের জন্য নিজেদের কুরবান করছেন। অতএব, শরীয়াহ মোতাবেক আজকের এই পবিত্রতম জিহাদে সমর্থন করা এবং অংশগ্রহণ করা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিকভাবে ফরজে আইন হয়ে পড়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নিশ্চয়ই ইসলামের এই মহান ব্যক্তির পবিত্র পথের যাত্রার সমাপ্তি আমাদের চোখগুলোকে অশ্রুসিক্ত করে। কিন্তু আত্মমর্যাদা সম্পন্ন জাতি কখনোই তাদের শহিদদের শাহাদাতে অশ্রু ঝরিয়ে তৃপ্ত হয় না। বরং তারা প্রকৃত তৃপ্তি তো তখনই হয়, যখন ক্রুসেডার ও জায়নাবাদীদের বক্ষ ছিড়ে সারা বিশ্বে ক্রুসেডার ইহুদিবাদী শত্রুর রক্তের অশ্রু ঝরানো হয়।

এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে বৈধ টার্গেট পরিণত করার বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, আজ আমেরিকা ও ইউরোপীয় শাসকরা ইয়াহইয়া সিনওয়ারের শাহাদাতকে শাইখ ওসামা বিন লাদেনের ররাহমাতুল্লাহি আলাইহির শাহাদাতের সাথে তুলানা করছে। তারা তাদের নেতা নেতানিয়াহুকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। মূলত ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় সমর্থকরা একই মুদ্রার আরেকটি পিঠ।

বিবৃতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর বিষয়ে বলা হয়, প্রথম কিবলা সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের একটি বৈশ্বিক ও সম্মিলিত সমস্যা, তাই আল-কুদুসের স্বাধীনতার স্বার্থে ইসরায়েল ও তাদের মিত্রদের আমাদের বৈধ টার্গেট পরিণত করতে হবে। যেভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, সেভাবে সারা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রকে টার্গেট করাও আমাদের জন্য আবশ্যক।

সর্বশেষ বিবৃতিতে, আল্লামা ইকাবালের ২০ লাইনের একটি বিখ্যাত কবিতার মাধ্যমে শহিদ ইয়াহইয়া সিনওয়ারের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে আল-কায়েদা উপমহাদেশ।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রায় ৮০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের জাফরান ও হিং রপ্তানি করেছে ইমারতে ইসলামিয়া সরকার
পরবর্তী নিবন্ধবুরুন্ডিয়ান সেনাবাহিনী ও মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে শাবাবের অভিযান: হতাহত ১৮ সেনা