ব্যাংক লেনদেনে ছিল না আস্থা; টাকার জাজিমে ঘুমাতো আমু

0
136

টাকার জাজিমে (তোশক) না শুলে ঘুম আসত না আমির হোসেন আমুর। ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ছিল সে। নতুন টাকার বান্ডিল আর স্বর্ণের নৌকা ছিল তার প্রথম পছন্দ। যে কোনও অনুষ্ঠানে গেলে তাকে স্বর্ণের তৈরি নৌকা দিতে হতো। আর তদবিরের জন্য দিতে হতো ‘নতুন টাকার বান্ডিল’। নতুন টাকার বান্ডিল দিয়ে জাজিম বানিয়ে ঘুমোতো সে।

আমির হোসেন আমুর অবৈধ সম্পদ দেখাশোনা করতো তার ভায়রা ও সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ফখরুল মজিদ কিরন। সে আবার সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ূনের ভাই। তারও এপিএস ছিলেন কিরন। আমুর শ্যালিকা মেরী আক্তার ও কিরন দম্পতির কন্যা সুমাইয়াকে দত্তক নিয়েছিল নিঃসন্তান আমু। এই সুমাইয়া ও কিরনের কাছেই আমুর অবৈধ আয়ের অধিকাংশ গচ্ছিত রাখা। সুমাইয়া বর্তমানে স্বামীসহ দুবাইপ্রবাসী। সেখানে হুন্ডিসহ নানা উপায়ে বিপুল অর্থ পাচার করেছে আমু। এমন তথ্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছে তারই ঘনিষ্ঠজন। গত ৫ আগস্ট রাতে আমুর ঝালকাঠির বাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। সেখানে আগুনে পুড়ে যায় কোটি কোটি টাকা ও ডলার-ইউরো। আংশিক পোড়া অবস্থায় ২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ও লাগেজ ভর্তি ডলার এবং ইউরো উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেখানে পাওয়া যায় টাকা ও বিদেশি মুদ্রা মিলিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা। আমুর মগবাজার ও বরিশাল শহরের বাড়ি থেকেও ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে বিপুল পরিমাণ টাকা লুট হয়েছে বলে জানিয়েছে তার ঘনিষ্ঠজনরা।

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আমির হোসেন আমুর বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ জমা হয়। সেগুলো আমলে নিয়ে প্রাক-অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। প্রাথমিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তার ২০ কোটি ৩২ লাখ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির প্রমাণ পেয়েছে দুদক। গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার দুর্নীতি অনুসন্ধানে কমিটি গঠন করেছে কমিশন।

প্রাক-অনুসন্ধানের পর গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আমির হোসেন আমু তার নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী, নৈশপ্রহরী ও আয়া নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছে। এই খাত থেকে সে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া ঝালকাঠির এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশল, গণপূর্ত অধিদপ্তরসহ সব প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি কাজে মোটা অঙ্কের টাকা অনৈতিকভাবে আদায় করতো। ধানমন্ডির ১৫ নম্বর সড়কে ৭২৭/এ নম্বর বাড়িতে কেয়ারি প্লাজায় রয়েছে দুটি ফ্ল্যাট। সাভারের বাটপাড়া মৌজায় ৪৮ দশমিক ৭২ লাখ টাকা মূল্যের অকৃষি জমি এবং মিরপুরের রূপনগরে ১ কোটি ৩১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা মূল্যের বাণিজ্যিক প্লট। তার একটি গাড়ি রয়েছে। আমুর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ও অন্যান্য বিনিয়োগ পাওয়া গেছে ১১ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৮ টাকা। তার নিজ নামে মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ২০ কোটি ৩২ লাখ ১০ হাজার ৮৩৮ টাকা। উল্লিখিত সম্পদের বাইরে দেশ-বিদেশে বিপুল সম্পদ রয়েছে। তার নিজ নামে, স্ত্রী ও অন্য আত্মীয়স্বজনের নামে-বেনামে সম্পদ অর্জন করেছে বলে গোয়েন্দা তথ্যানুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে সঠিক পরিলক্ষিত হওয়ায় প্রকাশ্য অনুসন্ধানের জন্য কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

এদিকে গত ৫ আগস্ট রাতে আমুর ঝালকাঠির বাসভবন থেকে ডলার ও ইউরোসহ প্রায় ৫ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। ওইদিন শহরের রোনালসে রোডের আমির হোসেন আমুর বাসভবনে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। ৫ আগস্ট রাত সাড়ে ১২টার দিকে আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা লাগেজভর্তি টাকা ও ডলার দেখতে পায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর সময় পানি নিক্ষেপ করলে পোড়া লাগেজ থেকে ডলার ও টাকার বান্ডিল বেরিয়ে আসে। একটি লাগেজে অক্ষত ১ কোটি এবং অন্য লাগেজগুলো থেকে গণনা করে আংশিক পোড়া ২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ডলার ও ইউরো উদ্ধার করা হয় আরও প্রায় ৩ কোটি টাকার।

আমুর ঘনিষ্ঠজনরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, ঢাকার মগবাজারের বাড়ি ছাড়াও আমুর বরিশাল শহরে ও ঝালকাঠিতে বাড়ি রয়েছে। আমুর ব্যাংক লেনদেনে আস্থা ছিল না। সে সবসময় নিজের কাছে নগদ টাকা রাখায় বিশ্বাসী ছিল। টাকার জাজিম বানিয়ে তার ওপর ঘুমাত। কোনো তদবিরে কেউ তার কাছে গেলে তাকে ব্যাগভর্তি নতুন টাকার বান্ডিল দিতে হতো। এসব টাকা নিজের কাছেই রাখত।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, টাকার জাজিমে না শুলে ঘুম আসত না আমির হোসেন আমুর। নতুন টাটকা টাকার বান্ডিল আর স্বর্ণের নৌকা ছিল তার প্রিয়। যে কোনো অনুষ্ঠানে গেলে তাকে স্বর্ণের তৈরি নৌকা দিতে হতো। আর তদবিরের জন্য দিতে হতো নতুন টাকা। আমুর সম্পত্তির মধ্যে ঝালকাঠির রোনালস রোডে ভবন, বরিশাল নগরীর বগুড়া রোডে প্রাসাদসম আলিশান বাড়ি এবং রাজধানী ঢাকার ইস্কাটনে একটি বাগানবাড়ি রয়েছে। ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর তেমন আস্থা বা ভরসা না থাকায় বস্তায় বস্তায় টাকা রাখতেন বাড়িতে, যার প্রমাণ মেলে ৫ আগস্ট। বিক্ষুব্ধ জনতা ওইরাতে হামলা, ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেয় তার রোনালস রোডের বাড়িতে।


তথ্যসূত্র:
১.টাকার জাজিমে ঘুমাতেন আমু
-https://tinyurl.com/35ecy2u3

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীমান্তে বাংলাদেশী যুবককে গুলি করে হত্যা করলো ভারতীয় খাসিয়া
পরবর্তী নিবন্ধ২৪ আওয়ামী এমপি-মন্ত্রীর বিদেশে দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে: দুদক