উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার ৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন মুজাহিদিনরা

0
570
সাদা অংশে মুজাহিদদের অভিযান এবং অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে

প্রায় ৫ বছর পর সিরিয়ার ফ্রন্টলাইনগুলোতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধারা। আর তাতেই উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় ভেঙে পড়েছে রাশিয়া এবং ইরান সমর্থিত কুখ্যাত নুসাইরি আসাদ প্রশাসন।

গত ২৭ নভেম্বর, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় আলেপ্পো সিটির পশ্চিমে “রদ্দুল উদওয়ান” অপারেশন রুমের অধীনে সামরিক অভিযান শুরু করেন মুজাহিদিনরা। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় ১৩টি প্রতিরোধ বাহিনীর সমন্বয়ে প্রথমে এই অভিযান শুরু হলেও পরবর্তীতে অন্যান্য দলগুলোও এতে শরিক হন। ফলে সামরিক এই অপারেশন আলেপ্পোর পশ্চিম থেকে দক্ষিণ এবং উত্তর থেকে পূর্ব দিকে পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে। সেই সাথে ইদলিবের সারাকিব, মারাত আন-নোমান, খান ইউনুস ও খান শাইখুনের মতো ঐতিহাসিক শহরগুলো বিজয়ের মধ্য দিয়ে মুজাহিদিনরা পুরো ইদলিব সিটিকে আসাদ বাহিনী থেকে মুক্ত করেন।

এই ধারাবাহিকতায় মুজাহিদিনরা আলেপ্পো এবং ইদলিব বিজয়ের পর সিরিয়ার হামা সিটির দিকেও অগ্রসর হতে শুরু করেন। গত ৩০ নভেম্বর ও ১লা ডিসেম্বরের মধ্যে মুজাহিদিনরা হামা সিটির উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু শহর এবং এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হন। এসময় কিছু কিছু স্থানে মুজাহিদদের সাথে আসাদ বাহিনীর সংঘর্ষ হলেও তেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি আসাদ বাহিনী। তবে ২ ডিসেম্বর সোমবার সকাল থেকে মুজাহিদিনরা যখন হামার কেন্দ্রীয় শহরের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা শুরু করেন, তখন এই অঞ্চলে কিছুটা শক্ত অবস্থানে যেতে দেখা গেছে আসাদ বাহিনীকে। তারা অনেক জায়গায় মুজাহিদদের সামনে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলার চেষ্টা করেছে। ফলে রদ্দুল উদওয়ান অপারেশন শুরুর পর সোমবারই (৬ষ্ঠ দিন) সবচাইতে কঠিন সংঘর্ষের দৃশ্য দেখা গেছে।

হামা হচ্ছে সিরিয়ার ৬টি প্রদেশের মধ্যে একমাত্র সিটি যার সাথে কোনো দেশের সীমানা নেই। ফলে সিরিয়ার অন্যান্য সিটির মধ্যে হামা সিটিই দেশের কেন্দ্রে অবস্থিত। হামা সিটি আলেপ্পো, ইদলিব এবং হোমস সিটিকে সুরক্ষিত রাখতে এবং উপকূলীয় অঞ্চলগুলোকে চাপে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অঞ্চলটি কৌশলগত এবং সামরিক গুরুত্বের দিক থেকে প্রতিটি গ্রামকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে থাকে। আর একারণেই হয়তো আসাদ সরকার হামা সিটিকে চলমান যুদ্ধে নিজেদের প্রধান কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করতে চাচ্ছে।

শাহিন ব্রিগেডের মুজাহিদিন কর্তৃক উড়াল দিচ্ছে আত্মঘাতী ড্রোন

এদিন হামা সিটির কেন্দ্রীয় শহর রক্ষায় আসাদ বাহিনীর সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ করতে মুজাহিদিনরাও তীব্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই ধারাবাহিকতায় মুজাহিদিনরা এই অঞ্চলে শত্রু সমাবেশ ও অবস্থানগুলো টার্গেট করে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ভারী আর্টিলারি হামলার পাশাপাশি অন্তত ৭টি আত্মঘাতী ড্রোন হামলা চালিয়েছেন। এতে শত্রু বাহিনীর ঘনত্ব এবং প্রতিরক্ষা অনেক স্থানেই ধ্বসে পরে। আর তখনই এসব এলাকায় বিশেষ করে দুপুরের পর থেকে তীব্র স্থল অভিযানের মাধ্যমে সামনে অগ্রসর হতে থাকেন মুজাহিদিনরা। আর এই অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় মুজাহিদিনরা সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তর-পূর্ব হামা সিটির কালাত আল-মাদিক শহর সহ অন্তত ১২টি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছেন। কালাত আল-মাদিক হামা শহরের কেন্দ্র থেকে পূর্ব দিকে অবস্থিত। বর্তমানে মুজাহিদিনরা হামা সিটির ব্রিদিজ এবং এর কৌশলগত পাহাড় নিয়ন্ত্রণ নিতে সামনে অগ্রসর হচ্ছেন, আর এতে সফল হলে মুজাহিদিনরা হামার পশ্চিম ও পূর্ব দিকে সহজেই অগ্রসর হতে পারবেন।

হামায় মুজাহিদদের অগ্রগতির ম্যাপ চিত্র

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৭ নভেম্বর “রদ্দুল উদওয়ান” অপারেশন শুরুর পর থেকে ২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় এই রিপোর্ট তৈরি পর্যন্ত মুজাহিদিনরা আলেপ্পো, ইদলিব এবং হামা সিটির ৮ হাজারেরও বেশি বর্গকিলোমিটার এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধইসকনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় মাদরাসা শিক্ষকের উপর বর্বরোচিত হামলা
পরবর্তী নিবন্ধযুক্তরাজ্যে হাসিনা-ঘনিষ্ঠদের ৬ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির সন্ধান