আফগানিস্তানে টিএপিআই (TAPI) গ্যাসলাইন প্রকল্পের সুবিধা ও অগ্রগতি

0
77

টিএপিআই (TAPI) গ্যাসলাইন নির্মাণ- সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের একটি দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত প্রকল্প। সম্প্রতি ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানে এই প্রকল্পের বাস্তব কার্যক্রম আরম্ভ হয়েছে। যা উক্ত প্রকল্পের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বিগত সেপ্টেম্বর মাসে আফগান অংশে প্রকল্পের ব্যবহারিক কাজ উদ্বোধন করেন ইমারতে ইসলামিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মুহাম্মদ হাসান আখুন্দ হাফিযাহুল্লাহ ও তুর্কমেন প্রেসিডেন্ট সের্দার বের্দিমুহামেদু। বর্তমানে হেরাত প্রদেশে প্রকল্পটির কাজ দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তুর্কমেনিস্তান থেকে আহরিত গ্যাস আফগানিস্তান ও পাকিস্তান হয়ে অবশেষে ভারতে পৌঁছবে। সংশ্লিষ্ট দেশসমূহ চুক্তি মোতাবেক নিজ নিজ সুবিধা ভোগ করবে।


বার্ষিক ৩৩ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস জ্বালানি পরিবহনের জন্য পাইপলাইনটি ডিজাইন করা হয়েছে। এটি তুর্কমেনিস্তানের গ্যাসকিলিন গ্যাসক্ষেত্র থেকে আফগানিস্তানের প্রবেশ করেছে। অতঃপর আফগানিস্তানের হেরাত ও কান্দাহার প্রদেশ অতিক্রম করে পাকিস্তানের কোয়েটায় পৌঁছেছে। সেখান থেকে পাকিস্তানের মুলতান হয়ে চূড়ান্ত গন্তব্য ভারতের ফাজিলকায় শেষ হয়েছে। এর সর্বমোট দৈর্ঘ্য ১,৮১৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে আফগান অংশে পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য ৮১৬ কিলোমিটার।

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: ১৯৯০ এর দশকে এই প্রকল্প নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে এটি টিএপি (TAP) প্রকল্প নামে পরিচিত ছিল। তখন এতে অন্তর্ভুক্ত ছিল তুর্কমেনিস্তান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে ভারত এই প্রকল্পে যোগ দিলে এটি টিএপিআই(TAPI) নামে রূপ লাভ করে। সর্বপ্রথম ২০১৫ সালে তুর্কমেনিস্তান এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়, যা ২০১৯ সালের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যায়। ২০১৮ সালে আফগানিস্তানে এই প্রকল্পের ব্যবহারিক শুরু হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমা আগ্রাসন, দুর্নীতি ও নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ নানাবিধ কারণে এর অগ্রগতি বাঁধাগ্রস্ত হয়। ২০২১ সালে তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ক্রমেই উন্নত হতে শুরু করে। ফলে টিএপিআই গ্যাসলাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সমাপ্ত হলে বিভিন্নভাবে উপকৃত হবে ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান। এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিম্নরূপ:

১) কর্মসংস্থান: আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে উক্ত প্রকল্প কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইতোমধ্যেই অসংখ্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

২) গ্যাস: আফগানিস্তান এই প্রকল্প থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস সুবিধা লাভ করবে। এটি আফগানিস্তানের গ্যাস জ্বালানি ব্যবহারের স্বাধীনতা আরও জোরদার করবে ইনশাআল্লাহ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে বার্ষিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সুবিধা লাভ করবে আফগানিস্তানে, যা পরবর্তীতে বার্ষিক ১.৫ বিলিয়ন ঘনমিটার পর্যন্ত উন্নীত করা হবে।

৩) রাজস্ব উৎপাদন: উক্ত প্রকল্প থেকে ট্রানজিট ফি হিসেবে বার্ষিক ৪০০ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করবে আফগানিস্তান। উপার্জিত রাজস্বের আওতায় দেশের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম আরও বেগবান হবে ইনশাআল্লাহ।

৪) বিদেশী বিনিয়োগ: টিএপিআই গ্যাসলাইন স্থাপন একটি আঞ্চলিক প্রকল্প। তাই এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। এটি আফগানিস্তানে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করবে।

এই প্রকল্প আফগানিস্তানের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক গতিশীলতায় এটি নতুন রূপ দান করবে। পাশাপাশি আঞ্চলিকভাবে আফগানিস্তানের অবস্থানকে আরও মজবুত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উপসংহার: ৯০ এর দশক থেকে টিএপিআই প্রকল্প নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানে উক্ত প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ দ্রুত অগ্রসর হতে শুরু করেছে। নিরাপত্তা অবস্থার উন্নতি, ইমারতে ইসলামিয়া ও অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর অবিচল প্রতিশ্রুতির কারণে প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হবে বলে প্রত্যাশা করছেন বিশ্লেষকগণ।


তথ্যসূত্র:
1. Benefits of the TAPI Project for Afghanistan and the Current Progress
– https://tinyurl.com/23npp97y

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধকবি নজরুল কলেজে ছাত্রদলের ককটেল বিস্ফোরণ
পরবর্তী নিবন্ধগাজায় বর্বর ইসরায়েলি হামলায় একসঙ্গে ৫ সাংবাদিক নিহত