মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব কর্তৃক নির্মিত আগ্রার ঐতিহাসিক ‘মুবারক’ মঞ্জিল ভেঙে ফেলেছে ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সরকার।
গত ০৩ জানুয়ারি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটায় আগ্রার প্রশাসন। ঐতিহাসিক ভবনটি গুড়িয়ে দেওয়ার পর সেখান থেকে ১০০ টিরও বেশি ট্রাক্টর দিয়ে ভেঙে ফেলা কংক্রিট সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার বরাতে জানা যায়, গত তিন মাস আগেই ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি সংরক্ষণের আদেশ করে। কিন্তু সে আদেশের কোনও তোয়াক্কা না করে ভেঙে ফেলা হল ঐতিহাসিক মুসলিম স্থাপনাটি।
মুবারক মঞ্জিল নামক ওই প্রাসাদটি আওরঙ্গজেব হ্যাভেলি নামেও পরিচিত। মঞ্জিলটি ঐতিহাসিক ভাবে মুসলিম স্থাপত্যের সাক্ষী বহন করছিল। বিখ্যাত মুঘল সম্রাট শাহজাহান, সম্রাট সুজা এবং সর্বশেষ সম্রাট আওরঙ্গজেব সহ মুঘল সাম্রাজ্যের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এই ভবনে বসবাস করেছিলেন।
পরে, ব্রিটিশ শাসন আমলে ঐতিহাসিক স্থাপনাটির বেশকিছু পরিবর্তন হয়। প্রথমে কাস্টমস হাউস, তারপরে লবণ অফিস এবং সর্বশেষ ১৯০২ সালে তারা নিবাসে রূপান্তরিত করে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, গতবছরের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মুবারক মঞ্জিল সংরক্ষণের জন্য একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপনে মুবারক মঞ্জিল নিয়ে অভিযোগকারীদের এক মাসের মধ্যে অভিযোগ উত্থাপনের জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু কোনো অভিযোগ পত্র কেউ দাখিল করেনি।
লখনৌ সরকারী কর্তৃপক্ষ মঞ্জিলটি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে পরিদর্শনে এসেছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তাদের পরিদর্শনের পরপরই মঞ্জিলটি ভাঙার কার্যক্রম শুরু করা হয় এবং ঐতিহাসিক স্থাপনাটি ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয়দের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের উপস্থিতিতেই একটি বিল্ডার কোম্পানি ঐতিহসিক ভবনটি গুড়িয়ে দেয়।
এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ এবং হতাশা প্রকাশ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া দেওয়া এক সাক্ষাতকারে স্থানীয় বাসিন্দা কাপিল বাজপেয়ী হতাশা প্রকাশ করে জানিয়েছে, ‘ভাঙা শুরু করার সময় আমরা একাধিক অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু সেসকল অভিযোগের তোয়াক্কা না করেই ইতিমধ্যে স্থাপনাটির ৭০ শতাংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে।’
মুবারক মঞ্জিলে অবস্থিত মার্বেল ফলক এবং আর্কিবল্ড ক্যাম্পবেল কার্লাইলের ১৮৭১ সালের প্রতিবেদনের মতো ঐতিহাসিক নথিপত্র স্থাপনাটির গুরুত্বের সাক্ষী বহন করে। সম্রাট আওরঙ্গজেব সমুগড়ার যুদ্ধে জয় লাভ করার পর ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি নির্মাণ করেছিলেন। স্থাপনাটি ছিল মুঘল ও ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য সংমিশ্রণ। লাল বালিপাথরের ভিত্তি, খিলানযুক্ত নীচতলা এবং মিনারের নকশার কারণে অনন্য স্থাপনার চেয়ে এটি ছিল অনন্য।
তথ্যসূত্র:
1.Agra: 17th-Century Mubarak Manzil, Built by Aurangzeb, Reduced to Rubble
– https://tinyurl.com/yc5awwxa