অস্ত্রহাতে শিবিরকে ফাঁসানোর চেষ্টা ছাত্রদলকর্মীর; ধরা খেয়ে ক্ষমা চাইলো

0
80

ছাত্রশিবিরের ইমেজ সংকট তৈরি ও ফাঁসাতে আক্রমণ করার ‘নাটক সাজিয়ে’ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে হুলুস্থূল কাণ্ড ঘটানোর অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদলের এক কর্মীর বিরুদ্ধে। রবিবার (০৫ জানুয়ারি) রাত সাড়ে দশটার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরাণ হলের ৪৩৬ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

ছাত্রশিবিরকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফাঁসানোর জন্য সংগঠনের পদপ্রত্যাশী এক নেতার নির্দেশে ওই ছাত্রদলকর্মী এ অপচেষ্টা করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

পরবর্তীতে ছাত্রশিবিরকে ‘খারাপভাবে’ উপস্থাপন করার জন্যই এ কাণ্ড ঘটনার কথাও স্বীকার করেছে ওই ছাত্রদলকর্মী।

অভিযুক্ত ওই ছাত্রদলকর্মী শেখ ফাকাব্বির সিন শাবিপ্রবির সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। সে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সুরমা আবাসিক এলাকায় একটি মেসে থাকে। এ ছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী নেতা ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম সরকারের সমর্থক হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, আবাসিক শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, হলের ওই কক্ষে আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের তিনজন শিক্ষার্থী থাকে। রাত ১০টার দিকে হঠাৎ করেই ওই কক্ষে আসে শেখ ফাকাব্বির সিন। সে কক্ষে আসলে পারস্পরিক কথাবার্তার পর তিনি চাকু দিয়ে ওই কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থীদের মারতে স্টেপ নেয়।

এক পর্যায়ে ওই কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থীরা বের হয়ে তাকে কক্ষে আটকিয়ে রাখেন।

রাত সাড়ে ১০টায় সে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিয়ে দাবি করেন যে, ‘আমি সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। হলে মেসের টাকা নিতে গেলে শিবিরের ছেলেপেলে আমাকে কুপিয়ে জখম করে রুমে আটকিয়ে রেখেছে।’

এই পরিস্থিতিতে হলের আবাসিক শিক্ষার্থী, প্রভোস্ট ও প্রক্টরিয়াল বডি গিয়ে তাকে কক্ষ থেকে বের করে এবং ওই কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলকর্মীকে প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। সেখানে উভয়পক্ষকে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

পরবর্তীতে রাত দুইটা সাত মিনিটে আরেক পোস্টে সে লিখে, “রাত সাড়ে দশটায় শিবিরকে জড়িয়ে আমি যে পোস্ট করেছি তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এখানে ছাত্রশিবিরের সংশ্লিষ্টতা ছিল না এবং নির্যাতনও করা হয়নি। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমি পোস্টটি করেছি। আমি এটা ছাত্রশিবিরকে সবার সামনে খারাপভাবে উপস্থাপন করার জন্য করেছি। অতএব আমার পোস্টটি আমি তুলে নিচ্ছি।”

এ বিষয়ে ৪৩৬ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী আমিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, ‘গতকাল রাতে কেউ একজন নক না করে আমাদের রুমে প্রবেশ করে। প্রবেশের পর সে অভদ্র ভাষায় আমাদের সাথে কথা বলে। তার পরিচয় পেয়ে বুঝতে পারি সে আমাদের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের জুনিয়র। তাকে বলি কারোর রুমে প্রবেশ করলে ভদ্রভাবে কথা বলতে হয়। এ ছাড়া হাফ প্যান্ট পরে রুমে প্রবেশ করতে নিষেধ করি, উত্তরে তখন সে আমাকে গালি দিয়ে বলে ‘আমি এভাবেই কথা বলি তুই যা পারিস করিস।’

তিনি বলেন, ‘এরপর তার সোয়েটারের ভেতরের পকেট থেকে ধারালো চাকু বের করে আমার গলায় ধরে এবং বলে তুই আমাকে চিনস আমি খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী। তখন নিজেকে রক্ষার জন্য তাকে ধাক্কা দেই এবং বের হয়ে বাইর থেকে রুম আটকিয়ে দিই। এরপর প্রক্টর স্যারকে জানালে গার্ডরা এসে বাকিদের উদ্ধার করেন।’

একই কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী আশিকুজ্জামান রাসেল বলেন, ‘আমিরুল নিজেকে বাঁচাতে বের হয়ে গেলে রুমে আমিসহ আরমান ও রাতিন আটকা পড়ে যাই। তখন ফাকাব্বির আমার গলার কাছে চাকু ধরে এবং ইউটিউব থেকে তার নিজের এলাকায় করা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ভিডিও দেখায়। এরপর সে নাঈম সরকার (ছাত্রদলনেতা) নামের একজনকে কল দেয় এবং বলে ভাই আমাকে শিবিবের পোলাপানরা ধরে আটকায় রাখছে। আপনি না আসলে আমাকে বলেন, ‘আমি নিজের স্টাইলে তিনজনকে ফালায় দিয়ে বের হয়ে যাব।’ এরপর আমরা বের হয়ে গেলে সে নিজের উরুতে ছুরির আঁচড় দিয়ে আমাদের ওপর দোষ চাপিয়ে দেয় এবং ফেসবুকে পোস্ট করে। পরে স্যাররা এসে তাকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যায়।’


তথ্যসূত্র:
১. শিবিরকে ফাঁসাতে অস্ত্র হাতে ছাত্রদলকর্মীর কাণ্ড, ব্যর্থ হয়ে চাইলেন ক্ষমা
– https://tinyurl.com/bdfnr3yv

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধমসজিদের স্ক্রিনে ভেসে উঠল ‘জয় বাংলা’ স্লোগান
পরবর্তী নিবন্ধবিএসএফের কাছ থেকে নদী দখলমুক্ত করল বিজিবি