ফিলিস্তিন ভিত্তিক সশস্ত্র ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী ইজ্জউদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবাইদাহ যুদ্ধবিরতি এবং বন্দী বিনিময় চুক্তি সম্পর্কে ২৩ মিনিটের একটি বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তিনি স্বাধীনতার জন্য ফিলিস্তিনি জনগণের অভূতপূর্ব ত্যাগ, প্রতিরোধ দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা, সাহসিকতা এবং বীরত্বের কথা তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে এই অঞ্চলে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের নতুন সমীকরণ ও অসম সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে মুজাহিদদের সাহসী অভিযানের কথা।
গত ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত ২৩ মিনিটের উক্ত বিবৃতিতে বন্দি বিনিময় এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পর্কে আবু উবাইদাহ হাফিজাহুল্লাহ্ বলেন, “ঐতিহাসিক অপারেশন আল-আকসা বন্যার পর ৪৭১ দিন অতিবাহিত হয়েছে, যা অস্থায়ী দখলদারিত্বের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। আমাদের জনগণের মহান ত্যাগ এবং রক্তপাত নিরর্থক ও বৃথা যাবে না। আমাদের জনগণ ৪৭১ দিন ধরে তাদের স্বাধীনতা এবং পবিত্র মূল্যবোধের জন্য অভূতপূর্ব লড়াইয়ের মাধ্যমে ত্যাগ স্বীকার করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড গাজা উপত্যকায় শুরু হয়েছিল, কিন্তু এটি সমগ্র অঞ্চলের চেহারা বদলে দিয়েছে এবং দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন সমীকরণ সৃষ্টি করেছে।”
আবু উবাইদা চুক্তি মেনে চলার বিষয়ে বলেন, “আমরা আমাদের ভাইদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৫ মাস ধরে জায়োনিস্ট ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। আমরা দুর্দান্ত প্রতিরোধ দেখিয়েছি। আমরা যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলি। ইসরায়েলেরও এটি মেনে চলা উচিত, নয়তো ইসরায়েলের যেকোনো লঙ্ঘন চুক্তি প্রক্রিয়াকে বিপন্ন করবে।
আল-কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবাইদাহ’র বক্তব্যের উল্লেখযোগ্য অংশ নিম্নরূপ:
– অপারেশন আল-আকসা বন্যা গাজার সীমান্ত থেকে শুরু হয়েছিল, কিন্তু এটি এই অঞ্চলের চেহারা বদলে দিয়েছে এবং শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন সমীকরণ এনেছে।
– অপারেশন আল-আকসা যুদ্ধের নতুন ফ্রন্ট খুলে দিয়েছে, যা শত্রুকে আন্তর্জাতিক শক্তির কাছে সমর্থনের জন্য আবেদন করতে বাধ্য করেছে।
– অপারেশন আল-আকসা বিশ্বকে দেখিয়েছে যে, এই দখলদারিত্ব একটি বড় মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এর প্রভাব পুরো অঞ্চলকে গ্রাস করছে।
– আমরা গাজা উপত্যকা জুড়ে সমস্ত প্রতিরোধ গোষ্ঠীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছি এবং শত্রুদের উপর মারাত্মক আঘাত হেনেছি।
– আমাদের মুজাহিদিনরা যুদ্ধের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অত্যন্ত বীরত্ব ও সাহসিকতার সাথে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। আমরা আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব পরিস্থিতিতে বীরত্বের সাথে লড়াই করেছি।
– আমরা এমন এক সংঘাতের মুখোমুখি হয়েছিলাম যা যুদ্ধ সক্ষমতা বা যুদ্ধ নীতির দিক থেকে সমান ছিল না।
– আমরা যখন শত্রু বাহিনীর উপর আঘাত হানছিলাম, তখন শত্রুরা আমাদের জনগণের উপর বর্বরতার নতুন এবং কুৎসিত পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল।
– এই যুদ্ধের বিশালতা এতটাই গভীর ছিলো যে, প্রতিরোধ বাহিনীর নেতারা, বিশেষ করে হানিয়া, আরুরি এবং সিনওয়াররা শহীদদের কাফেলায় যোগ দেন।
– এই নিষ্ঠুর শত্রু এই অঞ্চলের সমস্ত সমস্যার উৎস, তাই সমস্ত প্রচেষ্টা এবং পরিকল্পনা অবশ্যই এর প্রভাব সীমিত করার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।
– এই অপরাধী ও নৃশংস শত্রু মূলত এই অঞ্চলের বিপর্যয়ের মূল কারণ। তাই তাদের সকল প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনা অবশ্যই ব্যর্থ করতে হবে। এই অঞ্চলে তাদের প্রতিটি প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হবে এবং সেগুলো “অপারেশন আল-আকসা” দ্বারা ব্যর্থ করা হবে।
– আজ, পশ্চিম তীরে বসবাসরত আমাদের জনগণের উপর দায়িত্ব আরও বেড়ে যাচ্ছে। আমি জেনিনকে স্যালুট জানাই, যারা গাজার বীরত্ব ও প্রতিরোধের আত্মিক ভাই।
– আমাদের জনগণের উপর ইহুদিবাদী আক্রমণ বন্ধ করার জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানো কয়েক মাস ধরে আমাদের লক্ষ্য ছিল, এমনকি আক্রমণ শুরু হওয়ার মুহূর্ত থেকেই।
– আমরা এবং প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলি যুদ্ধবিরতির প্রতি আমাদের পূর্ণ প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করছি এবং জোর দিয়ে বলছি যে, এটি সম্পূর্ণরূপে শত্রুর প্রতিশ্রুতির উপর নির্ভর করে। আমরা সকল মধ্যস্থতাকারীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, তারা যেনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য শত্রুর উপর চাপ সৃষ্টি করেন।
– আমরা সমগ্র আরব ও ইসলামী উম্মাহ থেকে লক্ষ লক্ষ সমর্থনের বার্তা পেয়েছি। আমরা জানি যে, আমরা আপনাদের থেকে এবং আপনারা আমাদের থেকে। আমরা আমাদের জনগণের চরম দুর্ভোগ অনুভব করি। আমরা এই ভূমি, জনগণ এবং পবিত্র স্থানকে মুক্ত করার লক্ষ্যেই মূল্য দিচ্ছি।
– ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে আমরা পৃথিবী ও আসমানের মধ্যে শহীদদের এক বিশাল নাজরান উপস্থাপন করেছি। হে আমাদের শহীদগণ, হে আমাদের ধৈর্যশীল ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞার অধিকারী ব্যক্তিবর্গ! আপনারা মহান রবের সাথে ব্যবসায় জয়ী হয়েছেন। এই মহান ত্যাগ এবং রক্তের একটি উদ্দেশ্য রয়েছে, এগুলি বৃথা যাবে না, কখনোই বৃথা যাবে না।
– “অপারেশন আল-আকসা” আগ্রাসী জায়োনিস্ট বাহিনীকে একটি নৃশংস অপরাধী সত্তা হিসেবে উন্মোচিত করেছে এবং এর নেতা ও সৈন্যদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিত্রিত করেছে, যাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
– অপারেশন আল-আকসা দেখিয়েছে যে, আমাদের ভূমিতে শত্রুর অব্যাহত দখলদারিত্ব সমগ্র অঞ্চল এবং বিশ্বকে প্রভাবিত করবে।
তথ্যসূত্র:
1| The speech of Al-Qassam Brigades spokesman, Abu Obaida
– https://tinyurl.com/yu3kwyxu