ভিসা কড়াকড়ির কারণে কলকাতায় চিকিৎসা করতে আসা বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা ক্রমশ কমছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ভুয়া দাবি তুলে কলকাতার হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো হাসপাতালে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা না দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল।
কিন্তু এখন বাংলাদেশি রোগীই কমে গেছে। নতুন করে খুব কম রোগীই আসছেন। ফলে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ব্যবসা মার খাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, এর ফলে আশপাশের হোটেল ব্যবসাতেও মন্দা দেখা দিয়েছে।
হাসপাতালের ব্যবসা মার খাওয়ায় কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়েছে ডিসান, রুবি, নারায়ণা, ফর্টিস, মেডিকা, পিয়ারলেসের মতো বড় বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। বহু ডাক্তারের সঙ্গে তাদের চুক্তি থাকে যারা সরকারি হাসপাতালে কাজের ফাঁকে এসব বেসরকারি হাসপাতালে এসে পরিষেবা প্রদান করে।
এমনই একজন ডা. অমিতাভ মালাকার গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, সে বাইপাসের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে রোগী দেখতে যেত। কিন্তু এখন ওরা শিডিউল কমিয়ে দিয়েছে। আগে ৪ ঘণ্টার শিডিউল থাকলেও এখন সেটা এক ঘণ্টার। ডিসানের মতো হাসপাতাল তো বহু ডাক্তারকে বলে দিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে আর তাদের আসতে হবে না। রোগী বাড়লে তাদের ডেকে পাঠানো হবে।
একই অবস্থা নার্স, আয়া, সিকিউরিটি গার্ডের ক্ষেত্রেও। বহু নার্সকে উইদাউট পে-তে লিভ নিতে বাধ্য করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নার্স গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, আমি পিয়ারলেস হাসপাতালে গত ১০ বছর ধরে কাজ করছি। এমন অবস্থা আগে দেখিনি। রোগীর চাপে আমাদের ফুরসত মিলত না।
এখন কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতাল লসে রান করছে। ফের সব ঠিকঠাক হলে তোমাদের কাজে নেওয়া হবে। রোগী কমায় সিকিউরিটি গার্ডও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
নারায়ণাতে সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করতেন- এমন এক ব্যক্তি গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, রোগী সামলানোর জন্য গার্ড বেশি প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের রোগী নেই, তাই গার্ডেরও প্রয়োজন হচ্ছে না। আমি কাজ হারিয়ে এখন একটি ছোট কোম্পানিতে নাইট ডিউটি করছি। ফলে আমার আয় কমে গেছে।
এভাবেই বাইপাসের হাসপাতালগুলো এখন ধুঁকছে। কাজ হারাচ্ছে ডাক্তার থেকে কর্মীরা। বর্তমানে বাইপাসের ধারে বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা প্রায় তিন ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। আউটডোর থেকে শুরু করে ইনডোর ক্রমশ কমছে রোগী।
ইএম বাইপাস লাগোয়া অন্তত আধডজন বেসরকারি হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীর ভিড় লেগেই থাকত। আউটডোর, ইনডোর—সর্বত্রই মোট রোগীর অন্তত ৩৫-৪০ শতাংশ আসেন বাংলাদেশ থেকে।
হার্টের অসুখ থেকে শুরু করে নিউরোসার্জারি, ক্যানসার, পেডিয়াট্রিক সার্জারি, ইউরোলজিক্যাল সমস্যা থেকে শুরু করে অর্থোপেডিক রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি কিংবা বন্ধ্যত্ব—এসবের চিকিৎসাতেই একটু সচ্ছল বাংলাদেশিরা ঢাকার চেয়ে কলকাতায় ভরসা রাখেন বেশি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের অধিকাংশই চিকিৎসা নিচ্ছে দেশে।
কেউ কেউ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডেও যাচ্ছেন। ফলে কলকাতার প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালেরই গড়ে সাপ্তাহিক ১২-২১ লাখ টাকার ব্যবসা কম হচ্ছে বলে খবর কর্পোরেট সূত্রে। এর ফলে আশপাশের ছোট খাবার হোটেলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
চা বিক্রেতা থেকে শুরু করে মাছ-ভাত বিক্রেতা সবার উপরই প্রভাব পড়েছে এর। অনেকেই খাবার হোটেল তুলে দিয়ে সেখানে অন্য কিছু করার চিন্তাভাবনা করছে।
তথ্যসূত্র:
১.বাংলাদেশের রোগী কমায় ব্যবসায় ধস কলকাতার হাসপাতালে
-https://tinyurl.com/2u3mm8cn