দেশের ২৪ সাংবাদিকের ব্যাংক একাউন্টে ১২৬৮ কোটি টাকা লেনদেন; সর্বোচ্চ ১০৪২ কোটি ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কালবেলার সন্তোষ শার্মার ৫৮ কোটি

0
12

দেশের ২৪ সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাবে এক হাজার ২৬৮ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এক হাজার ২৩৮ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ব্যাংক হিসাবগুলোতে বর্তমানে ৩০ কোটি টাকা জমা রয়েছে। এসব সাংবাদিকের মধ্যে দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কারাবন্দি শ্যামল দত্তের ২৩টি ব্যাংক হিসাবে এক হাজার ৪২ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৮ কোটি টাকা লেনদেন হয় দৈনিক কালবেলার সম্পাদক ও প্রকাশক সন্তোষ শর্মার ব্যাংক হিসাবে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে গত বছরের ২২ অক্টোবর ২৮ সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাবের তথ্য আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটটের কাছে (বিএফআইইউ) চেয়ে চিঠি দিয়েছিল তথ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি বিএফআইইউ থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়কে তাদের মধ্যে ২৪ জনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য প্রদান করা হয়। তাদের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকেও (দুদক) চিঠি দেওয়া হয়েছে।

গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, শ্যামল দত্তের হিসাবে শুরু থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার ৪২ কোটি ৫২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে তার হিসাবগুলো থেকে এক হাজার ২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ২১ কোটি ১১ লাখ টাকা জমা রয়েছে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর সীমান্তবর্তী ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থেকে শ্যামল দত্তকে আটক করে এলাকাবাসী। পরে তাকে পুলিশে দেওয়া হয়। বর্তমানে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সে কারাগারে আছে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে দৈনিক কালবেলার সম্পাদক ও প্রকাশক সন্তোষ শর্মার ব্যাংক হিসাবে। তার ৯টি ব্যাংক হিসাবে ৫৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়। তার মধ্যে ৫৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়। বর্তমানে হিসাবগুলোতে জমা রয়েছে ৯০ লাখ টাকা।

সমকালের সাবেক সম্পাদক আলমগীর হোসেনের নামে ২৫টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এসব হিসাবে ৩১ কোটি ৯৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩১ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এখন জমা রয়েছে ১১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা।

বৈশাখী টেলিভিশনের সাবেক হেড অব নিউজ অশোক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবেও বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তার ১৩টি ব্যাংক হিসাবে ২৪ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। সেখান থেকে প্রায় পুরোটাই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে স্থিতি রয়েছে ৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা। বাংলা ইনসাইডারের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ বোরহান কবীরের ৫৭ ব্যাংক হিসাবে ১৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা জমা করা হয়। এসব হিসাব থেকে ১৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে হিসাবগুলোতে জমা আছে এক কোটি ১০ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাবেক সম্পাদক নঈম নিজামের ২২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা জমা হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব হিসাব থেকে ১৩ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এখনো তার হিসাবগুলোতে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা রয়েছে।

নঈম নিজামের স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিনের ১৭টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে। তার হিসাবগুলোতে ১০ কোটি টাকা জমা হয়। এর মধ্যে ৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে হিসাবগুলোতে স্থিতি ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা রয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের আগ পর্যন্ত ফরিদা ইয়াসমিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ছিল।

এছাড়া ১৪ কোটি ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৯৭ টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায় ডিবিসি নিউজের সাবেক হেড অব নিউজ জায়েদুল হাসান পিন্টুর ৪২টি ব্যাংক হিসাবে। এসব হিসাব থেকে ১১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। বাকি ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা জমা রয়েছে।

দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক সাংবাদিক ফরাজী আজমল হোসেনের ১৫টি ব্যাংক হিসাবে ১১ কোটি ৪৭ লাখ টাকার জমা করা হয়েছে। এসব হিসাব থেকে ১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়।

ইত্তেফাকের আরেক সাবেক সাংবাদিক শ্যামল সরকারের ১৪ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। হিসাবগুলোতে ২৫ লাখ টাকা এখনও জমা আছে।

সরকারি বার্তা সংস্থা বাসসের বিশেষ প্রতিনিধি মধুসূদন মণ্ডলের ব্যাংক হিসাবে ৯ কোটি টাকা জমা হয়। এর প্রায় পুরোটাই তুলে নেওয়া হয়েছে।

এটিএন বাংলার জহিরুল ইসলাম মামুনের (জ ই মামুন) ১৪টি ব্যাংক হিসাবে ৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা জমা হয়। এরই মধ্যে ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।

যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি শেখ মামুনুর রশীদের ৩টি ব্যাংক হিসাবে ৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা জমা হয়েছে। এসব হিসাব থেকে ৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

স্বদেশ প্রতিদিনের সাবেক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রতনের ৭টি ব্যাংক হিসাবে ৪ কোটি টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়।

নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সাবেক প্রেস মিনিস্টার ও বিএফইউজের মহাসচিব শাবান মাহমুদের দুটি ব্যাংক হিসাবে ৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা জমা হয়। এসব হিসাব থেকে ৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিটি এডিটর মির্জা মেহেদী তমালের ৪টি ব্যাংক হিসাবে মিলেছে এক কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এ থেকে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।


তথ্যসূত্র:
১. শ্যামল দত্তের অ্যাকাউন্টে ১০৪২ কোটি টাকার লেনদেন
– https://tinyurl.com/jhdmtd3y

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২০২৪ সালে রেকর্ড সংখ্যক সাংবাদিক নিহত, অধিকাংশ দায় সন্ত্রাসী ইসরায়েলের
পরবর্তী নিবন্ধভুক্তভোগীদের সাথে নিয়ে ‘আয়নাঘর’উন্মোচন করলো অন্তর্বর্তী সরকার; দেখুন ছবিতে