চাঁদা না দেওয়ায় দলীয় নেতাকর্মী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী এমনকি ১১ বছরের শিশুর বিরুদ্ধেও মামলা দিয়েছে বিএনপি নেতা

0
126

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে রমরমা মামলা বাণিজ্য করছে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও টঙ্গী সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস জিয়াউল হক স্বপন। অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত বিভিন্ন সহিংস ঘটনায় আক্রন্তদের খুঁজে বের করতো সে। পরে তাদের পরিবারের সদস্যদের দিয়ে থানায় কিংবা আদালতে মামলা করার জন্য আবেদন তৈরি করে।

ওই আবেদনের খসড়া তালিকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি টার্গেট করা হয় স্থানীয় ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও বাড়ির মালিকদের। এভাবে সে সাধারণ মানুষ তো আছেই, বিএনপি নেতাদেরও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। আর এসব মামলার বাদীরা আসামিদের চিনে না।

পরে ওই মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার কথা বলে সে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। যারা টাকা দিয়েছে, তাদের নাম বাদ দিয়ে অন্যদের নামে মামলা করিয়েছে।

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে স্বপনের বিরুদ্ধে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর ভোল পাল্টে সে নতুনভাবে জেগে উঠে। বর্তমানে দলীয় পদ না থাকলেও বিএনপির সাবেক নেতার পরিচয় দিয়েই করে যাচ্ছে চাঁদাবাজি।

স্থানীয় সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ শাসনামলে স্বপন পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি পরিচয়ে চাঁদাবাজি করত। বেনজীরের সঙ্গে তার একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া যায়। এছাড়া তাকে প্রায়ই দেখা যেত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের বাসায়।

আইফোন না পাওয়ায় আসামি ঠিকাদার : টঙ্গীর দত্তপাড়া হাসান লেনের বাসিন্দা ঠিকাদার কবির হোসেন অভিযোগ করেন, ৫ জুলাই স্থানীয় এক ব্যক্তির মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কৌশলে তার আইফোন ও নগদ ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় স্বপন। এ ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানায় লিখিত অভিযোগ করে কবির। পরে বাধ্য হয়ে শুধু আইফোন ফেরত দেন স্বপন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে কবিরকে ফোন করে স্বপন। আগের ঘটনার জেরে হুমকি দিয়ে নতুন একটি আইফোন কিনে দিতে বলে। এতে রাজি না হওয়ায় তাকে মামলায় আসামি করা হয়। এ ঘটনায় মোবাইল ফোনের কথোপকথনের অডিও রেকর্ডেও স্বপনকে হুমকি দিতে শোনা গেছে।

কবির হোসেন বলেন, বাদী তাকে চেনে না। স্বপনকে আইফোন কিনে না দেওয়ায় সে কৌশলে মামলায় নাম দিয়েছে।

১১ বছরের শিশুও আসামি : কবিরের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও টাকা নেওয়ার পর স্থানীয়ভাবে মীমাংসা বৈঠক হয়েছিল।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র গণমাধ্যমকে, দত্তপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. হামিদ মোল্লা ওই বৈঠকে স্বপনকে ‘চোর’ আখ্যা দিয়েছিল। এর জেরে গত ১০ আগস্ট স্বপন লোকজন নিয়ে হামিদের বাড়িতে হামলা চালায়। ৩০ আগস্ট টঙ্গী পূর্ব থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে হামিদের মেয়ে তাবাসসুম।

হামিদ জানান, বিচারে চোর বলায় এবং চাহিদামাফিক চাঁদা না দেওয়ায় স্বপন তাদের ওপর অত্যাচার শুরু করে। পরে থানায় জিডি করলে সে, তার সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া ১১ বছরের ছেলে সাদ মোল্লা ও জামাতার নাম মামলার তালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছে স্বপন।

চাঁদা না দেওয়ায় আসামি স্কুল-কলেজ শিক্ষকরা : টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের প্রভাষক হানিফ উদ্দিন, প্রভাষক আবু জাফর আহম্মেদ, টঙ্গীর সিরাজউদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান, সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান, সহকারী প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম, ক্রীড়া শিক্ষক মোস্তফা কামাল, গাছা বঙ্গবন্ধু কলেজের অধ্যক্ষ মনির হোসেন অভিযোগ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করিয়েছে স্বপন।


তথ্যসূত্র:
১. চাঁদা না দেওয়ায় দলীয় নেতাদেরও মামলায় ফাঁসিয়েছেন বিএনপি নেতা!
– https://tinyurl.com/2wr84k5n

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধনারী-শিশুসহ ৪৩ রোহিঙ্গাকে সাগরে নিক্ষেপ করলো ভারতীয় কর্তৃপক্ষ
পরবর্তী নিবন্ধএনসিপির রাজনীতিতে ফ্যাসিবাদের সুর