
সন্তান নিয়ে অথৈ সাগরে শহীদ মিজানুর রহমানের স্ত্রী শেফালী বেগম। অতিদরিদ্র পরিবারে জন্ম শহীদ মো. মিজানুর রহমানের। জীবিকার সন্ধানে মাত্র ১৫ বছর বয়সেই রাজধানীতে পাড়ি জমান তিনি। পোশাক শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন আশুলিয়ার বাইপাইলের একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে। দীর্ঘদিন পোশাক শ্রমিকের কাজ করার পর তিনি ফুটপাতে জুতার ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা করে ভালোই চলছিল মিজানুরের সংসার। স্বপ্ন ছিল ছেলেকে লেখাপড়া করিয়ে সিঙ্গাপুর পাঠাবেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে মিজানুরের পরিবারের। ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে শহীদ হন দুই সন্তানের বাবা ৩৭ বছর বয়সি এই যুবক। বাবাকে হারিয়ে শোকে পাথর ছেলে শুভ (১৪) ও মেয়ে মিমি (৭)। স্বামীকে হারিয়ে সন্তানদের নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েছেন স্ত্রী শেফালী বেগম।
শহীদ মো. মিজানুর রহমানের বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার কড়ইচড়া ইউনিয়নের ভেলামারী গুচ্ছ গ্রামে। জায়গা-জমি না থাকায় মিজানুরের বাবা ওসমান গণি আশ্রয় নেন গুচ্ছ গ্রামে। অতিদরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা মিজানুর রহমান পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে প্রায় ২২ বছর আগে ঢাকায় পাড়ি জমান। এরপর তিনি শেফালী বেগমকে বিয়ে করেন। অর্থ সংকট কাটাতে তার স্ত্রী চার বছর আগে পোশাক শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। মিজানুরের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে শুভ আশুলিয়ার বাইপাইলের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি এবং মেয়ে মিমি একটি মাদরাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। মিজানুরের ওপর নির্ভরশীল ছিল অসুস্থ বাবা ওসমান গণি এবং বৃদ্ধা নানি এজি বেগম।
জানা গেছে, আশুলিয়া থানার পাশেই একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন মিজানুর ও তার পরিবার। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিকালে আশুলিয়া থানার সামনে পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ হয়। সেদিন ছাত্র-জনতাকে লক্ষ করে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। মানুষের চিৎকার-চ্যাঁচামেচি ও গোলাগুলির শব্দ শুনে মিজানুরের ছেলে শুভ বাসার ছাদে যায়। ছেলেকে বাসার ছাদ থেকে নামিয়ে আনতে যান মিজানুর। ছেলেকে নিয়ে ছাদ থেকে নামার সময় হঠাৎ পুলিশের ছোড়া একটি গুলি এসে লাগে মিজানুরের তলপেটে। মুহূর্তেই ছাদের ওপর লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে আশপাশের লোকজন ধরাধরি করে মিজানুরকে বাড়ির নিচে নিয়ে আসেন। কিন্তু কোনো গাড়ি না পাওয়ায় সন্ধ্যার দিকে তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে।
প্রথমে স্থানীয় কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলেও তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। পরে শ্যামলীর একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর মিজানুরের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেদিন রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। পরদিন ৬ আগস্ট সকালে পরিবারের সদস্যরা মিজানুরের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং গ্রামের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
তথ্যসূত্র:
১. সন্তান নিয়ে অথৈ সাগরে শহীদ মিজানুরের স্ত্রী
– https://tinyurl.com/2yyfamvp


