লন্ডনে ফিলিস্তিন একশন বিক্ষোভে পুলিশের ব্যাপক গণগ্রেফতার

0
28

গাজায় ইহুদিবাদী দখলদার ইসরায়েলের নির্মম গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে চলমান প্রতিবাদের ধারাবাহিকতায়, লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কোয়ারে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্রিটিশ পুলিশের ব্যাপক দমননীতি বিশ্বব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ৯ আগস্ট, শনিবার ফিলিস্তিন একশন নামক সংগঠনের সমর্থনে প্ল্যাকার্ড ধারণের অভিযোগে ৩৬৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়, যাদের মধ্যে রয়েছেন গুয়ান্তানামো বে-তে নির্যাতিত প্রাক্তন বন্দি ও মুসলিম অধিকার কর্মী মোয়াজ্জেম বেগ। ব্রিটিশ সরকারের ইহুদিবাদী লবির চাপে এই সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী’ তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রতিবাদে নামেন হাজারো মানুষ, যাদের অধিকাংশই বৃদ্ধ, যুবক, এমনকি শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিও।

গণগ্রেফতার ও পুলিশি দমননীতি:
লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কোয়ারে “আমি গণহত্যার বিরোধী, ফিলিস্তিন একশনের সমর্থক” লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে জমায়েত হওয়া শতাধিক শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীর ওপর ব্রিটিশ পুলিশ কঠোর হস্তক্ষেপ করে। টেররিজম অ্যাক্ট ২০০০-এর অধীনে ফিলিস্তিন একশনকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার পর থেকে এটিই সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ, যেখানে অংশগ্রহণকারীদের গ্রেফতারের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিনি অধিকারের কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করতে চেয়েছে।

মোয়াজ্জেম বেগের গ্রেফতার ও প্রতীকী প্রতিবাদ:
এই বিক্ষোভে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন মুসলিম বিশ্বের অন্যতম পরিচিত মুখ মোয়াজ্জেম বেগ, যিনি গুয়ান্তানামো বে-তে ৩ বছর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করার সময় বিক্ষোভকারীরা “লজ্জা তোমাদের!” স্লোগান দিয়ে পুলিশের নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। বেগ তার বিবৃতিতে বলেন, “এই আইন মুক্তবুদ্ধি ও ন্যায়বিচারের বিরুদ্ধে একটি হুমকি। ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোই আমার অপরাধ”।

ব্রিটিশ সরকারের দ্বিচারিতা:
ব্রিটিশ সরকার দাবি করে যে ফিলিস্তিন একশনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র একটি “সুনির্দিষ্ট সংগঠন”কে লক্ষ্য করে, কিন্তু বাস্তবে এটি ফিলিস্তিনি অধিকারের সমর্থনে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো মানবাধিকার সংগঠনগুলি এই গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, “এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন”।

ইহুদিবাদী লবির প্রভাব:
গাজায় চলমান গণহত্যার সমর্থনে ইহুদিবাদী লবির চাপে ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিন একশনের মতো সংগঠনগুলিকে লক্ষ্য করছে, যারা সন্ত্রাসী ইসরায়েলের অস্ত্র সরবরাহকারী ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ পরিচালনা করে। জুন মাসে RAF ব্রিজ নর্টনে দুটি সামরিক বিমান রং করা হয়েছিল, যা দখলদার ইসরায়েলি বিমানগুলিকে জ্বালানি সরবরাহ করে—এই ঘটনাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করা হয়।

বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া:
৩৫০ জনেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষাবিদ ও কর্মী একটি খোলা চিঠিতে ব্রিটিশ সরকারের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেন, “এটি গণতন্ত্রের নামে মুক্তচিন্তার ওপর আঘাত”।

ইহুদিবাদী দখলদার ইসরায়েলের রক্তপিপাসু নীতির সমর্থনে ব্রিটেনসহ পশ্চিমা সরকারগুলির ইসলামবিদ্বেষী আইন ও দমননীতি বিশ্ববাসীর সামনে আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকারের লড়াই কেবল মধ্যপ্রাচ্যেই নয়, বৈশ্বিক মানবতার লড়াই। মোয়াজ্জেম বেগের মতো ব্যক্তিত্বদের গ্রেফতার এই সংঘাতের ন্যায্যতাকে স্তব্ধ করতে পারবে না, বরং তা মুসলিম উম্মাহর সংহতিকে আরও শক্তিশালী করবে।


তথ্যসূত্র:
1. Ex-Guantanamo detainee Moazzam Begg arrested at Palestine Action protest
– https://tinyurl.com/4xpvynz8
2. At least 200 arrests at Palestine Action protest outside parliament
– https://tinyurl.com/yvdh9328

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধছাত্রদল নেতার হাতে যুবদল নেতা হত্যা
পরবর্তী নিবন্ধগোলান উপত্যকা সংলগ্ন এলাকায় ইসরায়েলের অবৈধ সামরিক তৎপরতা