
জুলাই গণহত্যায় ঢাকার সাভারে প্রশাসনের যে কয়জন কর্মকর্তার ভূমিকা ছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহুল চন্দ। গুলি ও হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে শাস্তি পাওয়ার কথা থাকলেও এখনো বহালতবিয়তে আছে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ থেকে আসা এই কর্মকর্তা। বর্তমানে ঝালকাঠির রাজাপুরে ইউএনও হিসেবে কর্মরত সে।
এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন শহীদ পরিবারের সদস্য ও ভুক্তভোগীরা। তাদের আক্ষেপ, অন্তর্বর্তী সরকার বিচারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে শাসনভার গ্রহণ করলেও প্রশাসনিক আওয়ামী দুর্বৃত্তরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাহিরেই রয়ে গেছে। জুলাই বিপ্লবের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের এমন নির্ভার অবস্থা শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানির শামিল।
গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা রাহুল চন্দ জুলাই বিপ্লবের পর গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজাপুরে যোগদান করে। সাভারের ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুলাই বিপ্লব দমনে পুলিশের আগ্রাসী ভূমিকায় অন্যতম ব্যক্তি হিসেবে জড়িত ছিল এই রাহুল চন্দ। স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গেও তার ছিল দহরম-মহরম। রাহুল চন্দকে জুলাই বিপ্লব দমনের জন্য মাঠে পুলিশের সঙ্গে হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে সক্রিয় দেখা গেছে। ছাত্র-জনতাকে হটাতে পুলিশ সদস্যদের সে নির্দেশনা দিয়েছে, এমন একাধিক ভিডিও গণমাধ্যমগুলোর হাতে এসেছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। সে সময় অনেকের সঙ্গে নিহত হয় সাভার ডেইরি ফার্ম স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আলিফ আহমেদ সিয়াম। ছেলেকে হত্যার অভিযোগে চলতি বছরের ৬ জুন সাভার থানায় মামলা করেন সিয়ামের বাবা বুলবুল কবির। মামলায় ৩২ জনকে আসামি করা হয়। এতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ১ নম্বর ও রাহুল চন্দকে ৫ নম্বর আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ঢাকামুখী লংমার্চে অংশ নিতে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নেতৃত্বে সিয়ামসহ স্কুলের শিক্ষার্থীরা মিছিলে অংশ নেয়। লংমার্চটি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এলে দুপুর আনুমানিক ২টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। এ সময় সিয়াম গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। গুলিবিদ্ধ সিয়ামকে পাশের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগস্ট সে মারা যায়। পরে তাকে গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে দাফন করা হয়।
জানতে চাইলে বুলবুল কবির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হলো, মামলার অন্যতম আসামি ও গুলির নির্দেশদাতা তৎকালীন ইউএনও রাহুল চন্দকে পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার করেনি। আমি তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’
জুলাইযোদ্ধা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, আন্দোলনের দিনগুলোয় সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক বরাবরই ছিল উত্তাল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশ আর ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের হামলার অগ্রভাগে দেখা যেত তৎকালীন ইউএনও রাহুল চন্দকে। আন্দোলনের দিনগুলোয় প্রতিদিন জেলা প্রশাসনের মিটিংয়ের কথা বলে পুলিশ সদস্যদের নিজ কার্যালয়ে ডেকে বৈঠক করে আন্দোলন দমাতে সংঘবদ্ধ হয়ে সড়কে নামত সে। সঙ্গে থাকত ওই সময়কার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাসেল নুর। সাভারে জুলাই আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা ছিল অর্ধশতাধিক। ওই সব হত্যাকাণ্ডে ঘুরেফিরে আসছে তৎকালীন ইউএনও রাহুল চন্দের নাম। ওই সময় সে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।
তথ্যসূত্র:
১. সাভার গণহত্যার নির্দেশদাতা রাহুল চন্দ এখন রাজাপুরের ইউএনও
– https://tinyurl.com/ye4d6k8p


