ঘুষ ও অবৈধ উপার্জনে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা পুলিশ কর্মকর্তা

0
62

পুলিশের এসআই পদে ১৯৯১ সালে যোগ দিয়েছিল বরিশালের বাকেরগঞ্জের চরাদি ইউনিয়নের কৃষক পরিবারের সন্তান নাছির উদ্দিন মল্লিক। পুলিশের চাকরি নামের এই ‘সোনার হরিণ’ পেয়ে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সম্প্রতি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) সহকারী কমিশনার হিসেবে অবসর নেওয়া এই কর্মকর্তা ৩৪ বছরের চাকরিজীবনে হয়েছে আঙুল ফুলে কলাগাছ। অভিযোগ রয়েছে, বিপুল এ সম্পদ সে অর্জন করে ঘুষ-বাণিজ্যের মাধ্যমে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র গণমাধ্যমকে জানায়, পুলিশে চাকরির সুবাদে নাছির নগরীর বাংলাবাজারে সাড়ে ৭ শতক জমি কেনে। ২০১৮ সালে সে ওই জমিতে সাততলা ভবন নির্মাণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। ২০১৯ সালে সে বাড়ি নির্মাণের অনুমতি পায়। তবে ২০২০ সালে সে নির্মাণ করে ১০ তলা ভবন। ভবন নির্মাণের অর্থের উৎস হিসেবে নিজের চাকরির বেতন এবং স্ত্রীর ব্যবসা থেকে আয়ের কথা পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে দেওয়া আবেদনে উল্লেখ করেছিল। নির্ভরযোগ্য সূত্র গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে, তার স্ত্রী কখনোই কোনো চাকরি বা ব্যবসা করত না।

গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বরিশাল নগরীর দক্ষিণ সাগরদী এলাকায় নাছির তৈরি করেছে নাহিরীন ভ্যালি নামে একটি চোখ ধাঁধানো আলিশান বাংলো। নামিদামি আসবাবপত্র, পাখিদের জন্য ঘর, চোখ ধাঁধানো পাথরের কারুকাজ কী নেই সেখানে! বাকেরগঞ্জের দুধল ইউনিয়নে নিজের গ্রামের বাড়িতে নির্মাণ করেছে দোতলা ভবন। যদিও এখানে কেউ থাকে না। পাশাপাশি শ্বশুরবাড়ি ঝালকাঠির নলছিটির দপদপিয়ার তিমিরকাঠি গ্রামে ও নিজ এলাকা বাকেরগঞ্জে বিপুল সম্পত্তি কিনেছে। এছাড়া নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর রয়েছে তার।

বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে, রাজধানী ঢাকায় ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে পুলিশের সাবেক এই কর্মকর্তার। তবে এসব সম্পদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন থানায় ওসি থাকাকালে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীকে আসামি করার ভয় দেখিয়ে নাছির দুই হাতে টাকা কামিয়েছে। এসব অবৈধ আয়েই সে গড়েছে সম্পদের পাহাড়।

জানা গেছে, নাছিরের বাবা মৃত আনোয়ার হোসেন মল্লিক কৃষিকাজ করত। তার চার ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। এর মধ্যে বড় ছেলে দেলোয়ার নগরীর সাগরদী এলাকায় থাকে। মেজো ছেলে নাছির। ৩ নম্বর ছেলে নান্নু এবং ছোট ছেলে চুন্নু কাজ করে ওষুধ কোম্পানিতে। নাছিরের বড় বোন লাকি মারা গেছে। ছোট বোন রুনা বেগমের বিয়ে হয়েছে চাচাতো ভাই ও চরাদি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন মল্লিকের সঙ্গে।

ভোলায় সহকারী পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালনকালে নাছির ঘুষ দাবি করেন পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মিজানুর রহমানের কাছে। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমি বিএনপির কর্মী। ২০২২ সালে আমার বিরুদ্ধে ভোলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মিথ্যা মামলা হয়। ওই মামলার তদন্তের ভার পড়ে সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার নাছির মল্লিকের ওপর। তদন্ত করতে গিয়ে আমি বিএনপি করি, এ বিষয়টি সে জানতে পারে। ওই সময় সে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুমন মোল্লার মাধ্যমে আমার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। ওই সময় সে আমাকে বিভিন্ন ধরনের ভয় দেখায়। পরে জমি বিক্রি করে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা নাছিরকে দেই। কিন্তু পুরো ১০ লাখ টাকা না দেওয়ায় সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা রিপোর্ট দেয়। ওই ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল আইজিপি বরাবর আবেদন করেছিলাম। তবে কোনো প্রতিকার পাইনি। পরে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি বরাবর আবেদন করি। ওই ঘটনা তদন্ত করার জন্য বরিশাল জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার রেজাউল হক ভোলায় আসে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো প্রতিকার পাইনি।


তথ্যসূত্র:
১.পুলিশে চাকরি করেই ১০তলা ভবন, ডুপ্লেক্স বাড়ি
-https://tinyurl.com/y7r2y8ya

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধফিলিস্তিনের ৬৩টি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান অবৈধভাবে নিজেদের বলে ঘোষণা করল দখলদার ইসরায়েল
পরবর্তী নিবন্ধভারতে‌র আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী স্লোগান দেওয়ায় মুসলিম ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা