
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের (এএমইউ) প্রাক্তন ছাত্র এবং ছাত্রনেতা তালহা মান্নানসহ ৮-১০ জন অজ্ঞাতনামা ছাত্রের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনপন্থী স্লোগান দেওয়ায় মামলা নিয়েছে পুলিশ। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন এবং স্লোগান দেওয়াকে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো “উস্কানিমূলক” বলে দাবি করেছে। এই ঘটনাটি শুধু শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলন দমন নয়, বরং ভারতের ইসলাম বিদ্বেষী রাষ্ট্রচরিত্রের একটি নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।
৪ আগস্ট থেকে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফি বৃদ্ধি এবং ছাত্র সংসদ পুনরায় চালুর দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন করে আসছিলেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে ছাত্র ইসলামী সংগঠনের জাতীয় সম্পাদক তালহা মান্নান ১২ আগস্ট আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন। তিনি কেফিয়াহ স্কার্ফ পরে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন ও দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০ আগস্ট, বুধবার হিন্দু রক্ষা দল নামের একটি উগ্রবাদী সংগঠনের নেতা সঞ্জয় আর্য অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের এই স্লোগান ও পতাকা প্রদর্শন নাকি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করেছে এবং শান্তি বিঘ্নিত করেছে। এর ভিত্তিতে পুলিশ তালহা মান্নানসহ ৮ থেকে ১০ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির আওতায় সরকারি নির্দেশ অমান্য ও জনমনে অস্থিরতা ছড়ানোর ধারা ব্যবহার করা হয়েছে। বাস্তবে এসব ধারা শুধু মুসলিম শিক্ষার্থীদের ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়ার অস্ত্র হিসেবেই ব্যবহার করা হচ্ছে।
এই সমগ্র প্রক্রিয়ায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে—ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসকগোষ্ঠী মুসলমানদের শিক্ষাজীবন থেকে রাজনৈতিক অধিকার পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই দমননীতি চালিয়ে যাচ্ছে। আর ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশকে তারা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে তুলে ধরছে। এর মাধ্যমে তারা পাশ্চাত্যের ইসলামবিদ্বেষী ধারা অনুসরণ করছে, যেখানে দখলদার ইহুদিবাদী ইসরায়েলের অপরাধ চাপা দেওয়া হয় আর মুসলিম প্রতিবাদীদের অপরাধী বানানো হয়।
অথচ ভারতের ঐতিহাসিক সরকারি আনুষ্ঠানিক অবস্থান অনুযায়ী তারা ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে। কিন্তু হিন্দুত্ববাদী সরকার বাস্তবক্ষেত্রে এর প্রয়োগ একপাক্ষিকভাবে করে আসছে।
তালহা মান্নানের বিরুদ্ধে মামলা শুধু একজন শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ঘটনা নয়; এটি সমগ্র মুসলিম সমাজের উপর চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় ও বৈষম্যের প্রতিচ্ছবি। শিক্ষার্থীরা যখন ন্যায্য অধিকারের দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছেন, তখন হিন্দুত্ববাদী শক্তি তাদের কণ্ঠ রোধে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করছে। ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়ানো মানে হচ্ছে অবৈধ দখলদারিত্ব ও জুলুমের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের পাশে দাঁড়ানো।
তথ্যসূত্র:
1. Hyderabad PhD scholar booked for pro-Palestine slogans during AMU fee hike protest
– https://tinyurl.com/52srafx6


