
শনিবার (৩০ আগস্ট), গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেশন ফর প্রোটেকশন অব অল পারসনস অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’ সম্মেলনে যে আন্তর্জাতিক সনদ কার্যকর হয়, তাতে ৩০ আগস্টকে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য দিনটি কেবল স্মরণ নয়, গভীর এক বেদনার প্রতীক। শত শত পরিবার এখনো জানে না তাদের প্রিয়জন বেঁচে আছে নাকি মৃত। প্রতিটি সকাল তাদের জন্য নতুন শূন্যতা, প্রতিটি রাত নতুন অপেক্ষা।
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর পরিবার এখনো নিশ্চিত নয় ইলিয়াস আলী বেঁচে আছে কি না। ইলিয়াস আলীর জন্য এখনো তারা অপেক্ষায় আছেন।
ফারজানা আক্তারের চোখ কান্নায় ঝাপসা হয়ে যায় যখন তিনি বলেন, “আমার মেয়েটি এখন ভালো খাবার দেখলেই কাঁদে। বলে, ‘বাবা তো ভালো খাবার খেতে পারে না।’ ফ্যান চালু থাকলে বন্ধ করে দেয়। বলে, ‘বাবা তো বাতাসে ঘুমায় না।’ যত বই আছে, প্রতিটি পাতায় শুধু বাবার নাম লিখে রেখেছে।”
তার স্বামী বংশাল থানা ছাত্রদল নেতা মো. পারভেজ হোসেনকে ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর সাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ। বড় মেয়ে আদিবা এখন অষ্টম শ্রেণিতে আর ছোট ছেলে আরাফ চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। বাবাহারা সন্তানদের মানুষ করাই ফারজানার জীবনের লড়াই।
একই দিন শাহবাগ থেকে তুলে নেওয়া হয় ছাত্রদলের আরেক নেতা মো. সোহেলকে, যাকে এলাকার মানুষ ‘চাচা সোহেল’ হিসেবে চিনত। তার মেয়ে সাদিকা সরকার সাফার বয়স তখন দেড় মাস। আজ সাফা পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। বাবার সাদা-কালো ছবিই তার সম্বল। মা শিল্পী বলেন, ‘মেয়েটি সারাক্ষণ বাবার কথা ভাবে। সে চায় তার বাবার গুমের বিচার হোক।’
বাংলাদেশের গুম কমিশনের তথ্যমতে, রাজনৈতিক কারণে এখনো অন্তত ২১১ জন নিখোঁজ। গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের গড়া সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর অন্যতম সংগঠক আফরোজা ইসলাম আঁখি বলেন, এ সংখ্যা ৩৫০ জনেরও বেশি।
গুম হওয়াদের বেশিরভাগই বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামপন্থী অন্যান্য দলের নেতাকর্মী। অথচ একটি ঘটনারও রহস্য উদঘাটিত হয়নি।
তথ্যসূত্র:
১. দুই শতাধিক ব্যক্তির খোঁজ এখনো মেলেনি
– https://tinyurl.com/22kmcsv6


