‘শেখ হাসিনার সাথে রাজনীতি করেছি’ বলে বেড়ানো কর্মকর্তা এখন মৃত্তিকার ডিজি; শেল্টার দিচ্ছে বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা

0
21

বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রেজিমের পুরোটা সময় জুড়েই ছিল সুবিধাভোগী। শেখ হাসিনার ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচয় দিত। গর্ব করে বলত ‘আমি শেখ হাসিনার সাথে রাজনীতি করেছি’। প্রমাণও দিত শেখ হাসিনার সাথে ঘনিষ্ঠতার। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ (বাকৃবি) ছাত্রসংসদ নির্বাচনের পর ছাত্রলীগের নেতারা ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্যে সাক্ষাত করে। শেখ হাসিনার সাথে গ্রুপ ছবি তোলে তারা। ওই ছবিতে ১০-১২ জনকে দেখা যায়; শেখ হাসিনার ঠিক ডান পাশে (গোল চিহিৃত) যিনি তার নাম সামিয়া সুলতানা। বাকৃবির সুলতানা রাজিয়া হল সংসদে ছাত্রলীগের প্যানেলে নির্বাচিত নেত্রী সে। এখন সে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠান মৃত্তিকাসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) মহাপরিচালক।

ছাত্রজীবনে সরাসরি ছাত্রলীগের রাজনীতি করা সামিয়া সুলতানা ১৫তম (কৃষি) বিসিএসের মাধ্যমে চাকরিজীবনে প্রবেশ করে। বিগত শেখ হাসিনার আমলে যে কয়জন এই সংস্থায় সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী তাদেরই একজন সে। পলাতক শেখ হাসিনার সাথে সরাসরি সম্পর্ক। তাই গর্ব করে বলত, দুঃসময়ে শেখ হাসিনা এবং ওয়াহিদা আক্তারের (সাবেক কৃষিসচিব) সাথে রাজনীতি করেছি।

জানা গেছে, হাসিনার আমলে এসআরডিআইতে অনেক সিনিয়র কর্মকর্তার উপর ছড়ি ঘুরিয়েছ। বিগত সময়ের কৃষিমন্ত্রী, ড. আব্দুর রাজ্জাক ও মতিয়া চৌধুরীর সাথে ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এসআরডিআই-এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সিএসও) পদে পদোন্নতি নিয়ে লুফে নেয় গুরুত্বপূর্ণ এসআরডিআই -এর ভবন নির্মাণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি (সিসিবিএস) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের পদ। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত ১৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও তা এখনো শেষ হয়নি। একই সাথে তিনি সংস্থাটির পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পায়। সিসিবিএস প্রকল্পের আওতায় ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে বহুতল ভবন কোনোমতে সম্পন্ন হলেও রাজশাহী, খুলনায় ও কুমিল্লায় সংস্থার আঞ্চলিক গবেষণাগার ভবনগুলোও নির্মাণ এখনো সম্পন্ন হয়নি বলে জানা যায়।

এসব প্রকল্পে নানা অনিয়মের খবর আসছে বিভিন্নভাবে। প্রকল্পের আওতায় মৃত্তিকা সম্পদের জরিপ, মাটি ও সার পরীক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম ব্যবস্থায় পরিবর্তন ও আরো উন্নত করতে সক্ষমতা বাড়াতে এসআরডিআই -এর ভবন নির্মাণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি (সিসিবিএস) প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।

চলতি বছরের আগামী ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু বর্ধিত এ সময়ের মধ্যেও প্রকল্পের বাকী কাজ বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।

মৃত্তিকাসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছে, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শেখ হাসিনার সাথে তোলা গ্রুপ ছবি সামিয়া সুলতানার ফেসবুকে কাভার ফটো ছিল। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে মিটিংয়ের পর গর্ব করে নিজেকে আওয়ামী লীগার হিসেবে জাহির করত। অফিসারের চাইতে দলীয় ক্যাডারের ভূমিকায় ছিল সে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সামিয়া সুলতানা হতাশ হয়। শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ছবি ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলে। কিন্তু, ভাগ্য তার সুপ্রসন্ন। ফ্যাসিস্ট আমলের শেষের দিকে মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসা মো: জালাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে এসআরডিআইতে আন্দোলন শুরু হয়। চাপের মুখে সে ডিজির দায়িত্ব ছেড়ে দেয়। তারই চেয়ারে বসানো হয় ফ্যাসিস্টের দোসর ড. বেগম সামিয়া সুলতানাকে।

গত ১৩ নভেম্বর এসআরডিআই-এর মহাপরিচালকের চেয়ারে বসেই বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফারুক হোসেনসহ কয়েকজনকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন দেয়। ফলে তারাই এখন ডিজিকে শেল্টার দিচ্ছে। সরকারের একাধিক সংস্থার প্রতিবেদনেও এসব তথ্য পাওয়া যায়।

আতঙ্কের নাম ড. ফারুক
এসআরডিআইতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে এক আতঙ্কের নাম ফারুক হোসেন। বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা হিসেবে দাবি করে আসা প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফারুক হোসেন হয়ে উঠেছে দলবাজ নতুন ডিজির ডান হাত। পাবনা জেলা আঞ্চলিক কর্মকর্তার পদের পাশাপাশি মহাপরিচালকের সংযুক্ত কর্মকর্তা এবং ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা শাখার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি ২৮১ কোটি টাকার প্রস্তাবিত একটি প্রকল্পের ফোকাল পারসনও মনোনীত করা হয়েছে তাকে

ডিসি-সচিব পরিচয়ে সরকারি জমি দখলের অভিযোগ

এসআরডিআই-মপা পাবনা জেলার দায়িত্বে থাকা ও মহাপরিচালকের কার্যালয় সংযুক্ত কর্মকর্তা মো: ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারি খাসজমি দখল, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সে নিজেকে ম্যাজিস্টেট, ডিসি (জেলাপ্রশাসক) বা কোথাও সচিব পরিচয় দিয়ে সরকারি খাস জমি দখলে নিয়েছে বলে কৃষি মন্ত্রণালয়ে ভুক্তভোগিরা অভিযোগ করেছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি তদন্ত করছে।

জানা গেছে, এসআরডিআইতে মোট ৩৭ জনকে অনিয়মিত শ্রমিক হিসেবে সম্প্রতি নিয়োগ দেয়া হয়। ডিজির ঘনিষ্ট ফারুক হোসেন তার নিজ জেলা নওগাঁর ধামইরহাঁট উপজেলার ইছবপুরেরই ৯ জনকে নিয়োগ দিয়েছে বলে জানা যায়।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, নিজ এলাকায় ডিসি, সচিব ও ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে এলাকাবাসীকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। সে এলাকার খাসজমি বিভিন্নভাবে জবরদখল করে রেখেছে। এ বিষয়ে গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ২৭ মে উপসচিব দেবী চন্দ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখতে জেলাপ্রশাসক বরাবর চিঠি দিয়েছে।


তথ্যসূত্র:
১. ‘শেখ হাসিনার সাথে রাজনীতি করেছি’ বলে বেড়ানো কর্মকর্তা এখন মৃত্তিকার ডিজি
– https://tinyurl.com/3a4d6wmk

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে গিয়ে জনতার হাতে আটক দুই বিএনপি নেতা
পরবর্তী নিবন্ধআদানির লুটপাট বহাল রাখতে পরীক্ষামূলক-ভাবে চালুর ৮ মাস অতিবাহিত হলেও বন্ধ পটুয়াখালী বিদ্যুৎকেন্দ্র