
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ইসলামি জঙ্গিরা বাংলাদেশে ক্ষমতা দখল করেছে। এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বিদেশি শক্তি। জুলাই-আগস্টের ঘটনা এবং পরবর্তী সময়ে হাজার হাজার সংখ্যালঘু হিন্দু ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।
আইএসআইএস’র মতো জঙ্গি সংগঠন এখন প্রকাশ্যে বাংলাদেশে তাদের তৎপরতা চালাচ্ছে। সংখ্যালঘু হিন্দুরা এখন বাংলাদেশে চরম নিরাপত্তাহীন ও অসহায় অবস্থায় আছে। ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশ বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্ব এখন নীরব। চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অভিন্ন স্বার্থ ভারতের জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে।
গত শনিবার (০৬ সেপ্টেম্বর) দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বহুল আলোচিত বাংলাদেশবিষয়ক সেমিনারে বক্তারা এসব বক্তব্য তুলে ধরে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক : নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে দিল্লিভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক গ্লোবাল স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ডিফেন্স নিউজ।
সেমিনারে বক্তারা বলে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষায় ভারতকে পদক্ষেপ নিতে হবে। আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ জরুরি। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।
দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইকুইপমেন্ট ম্যানেজমেন্টের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মনোরাজ সিং মান। সেমিনারে ভারতের সামরিক বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তা, বিভিন্ন থিঙ্ক ট্যাঙ্কে কর্মরত সামরিক-বেসামরিক আমলাদের পাশাপাশি চারজন বাংলাদেশি রিসোর্স পার্সন অংশ নেয় যা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
সেমিনারে আমন্ত্রিত বাংলাদেশি রিসোর্স পার্সনদের মধ্যে ছিলেন-সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান, লেখক ও একাডেমিক ড. আবুল হাসনাত মিল্টন, জুলাই বিপ্লবের পর পালিয়ে যাওয়া মরক্কোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ হারুন আল রশিদ ও ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। তবে এ চারজনের কেউই সেমিনারে সশরীরে উপস্থিত ছিল না। তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়। এই চারজনের প্রত্যেকেই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিশেষ সুবিধাভোগী ও ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে সুপরিচিত। বাংলাদেশি এই চার রিসোর্স পার্সন ভারতের ‘ডিপ স্টেট’-এর সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
সেমিনারে ভারতীয় রিসোর্স পার্সনদের মধ্যে মেজর জেনারেল (অব.) সুধাকর জি, ব্রিগেডিয়ার (অব.) নিলেশ ভানট, ড. নাগালক্ষ্মী রমন, লে. জেনারেল (অব.) সঞ্জীব ল্যাংগার, রাষ্ট্রদূত মঞ্জু শেঠ, লে. জেনারেল (অব.) পিসি নায়ার, ব্রিগেডিয়ার (অব.) ভিপি সিং প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেয়।
জেনারেল চৌহান তার এক বক্তব্যে বলে, চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অভিন্ন স্বার্থ আগামী দিনগুলোতে ভারতের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে। ‘এবার আমরা পূর্ব থেকে শুরু করব পাকিস্তান আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের মহাপরিচালক লে. জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরীর এই বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে সেমিনারের কনসেপ্ট নোটে বলা হয়, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান তার পরবর্তী যুদ্ধ যা বেশি দূরে নয়-সেটা বাংলাদেশ থেকে শুরু করবে। সুতরাং আগামী দিনের যুদ্ধে বাংলাদেশের ভূমিকা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উল্লেখ্য, গত এক বছর ধরে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের উত্থান, সংখ্যালঘু নির্যাতন, ভারতের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলাসহ নানা মিথ্যা অভিযোগ তুলে ধরে বাংলাদেশবিরোধী প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে । সেমিনারে অধিকাংশ বক্তাই সেই মিথ্যা বয়ানই তুলে ধরেছে।
ব্রিগেডিয়ার (অব.) নিলেশ ভানোট বাংলাদেশের জুলাই অভ্যুত্থানে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করে বলেছে, বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর মতো বিশ্ব মিডিয়াগুলো গত বছর জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করেছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ব্যাপারে এসব মিডিয়া একেবারেই নীরব ছিল। আর সচেতনভাবেই তারা এটা করেছে।
প্রফেসর ড. নাগালক্ষ্মী রমন তার বক্তব্যে বলে, বাংলাদেশের অস্থিতিশীলতা ভারতের সীমান্ত ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবিত করছে। ২০০০ সালের পর বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেয়। শেখ হাসিনার সময়ে এটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন আবার নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে।
তথ্যসূত্র:
১. দিল্লির সেমিনারে ইসলামি জঙ্গি কার্ড
– https://tinyurl.com/34x87yhw


