
কৃষক দল নেতা তরিকুল ইসলাম খুনে জড়িত এক সময়ের দুর্ধর্ষ চরমপন্থি দল নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির ক্যাডার দীপঙ্কর মল্লিকের সশস্ত্র অনুসারীরা। দীপঙ্কর ভারতে বসে এ কার্যক্রম তদারক করে। আর এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সন্ত্রাসীদের সঙ্গে চুক্তি করে যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (বর্তমানে পদ স্থগিত) আসাদুজ্জামান জনি। চুক্তি অনুযায়ী ১২ লাখ টাকার পুরোটা না পেয়ে এসব তথ্য ফাঁস করে কমিউনিস্ট পার্টির ওই ক্যাডার।
নিহত তরিকুল ছিল নওয়াপাড়া পৌর কৃষক দলের সভাপতি। মাছের ঘের নিয়ে বিরোধের জেরে সে খুন হয়। এর পেছনে আরেকটি কারণ স্থানীয়দের মুখে মুখে উচ্চারণ হচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের পর বিএনপি নেতা জনি নওয়াপাড়ার একের পর এক বেসরকারি নৌঘাট দখল করে। এছাড়া সহযোগীদের নিয়ে চালাতে থাকে চাঁদাবাজি, লুটপাটসহ নানা অপকর্ম। এসব কাজের বিরোধিতা করত সার ব্যবসায়ী সমিতির নেতা তরিকুল। ঘের নিয়ে বিরোধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে জনি।
তরিকুল হত্যার তদন্তে নেমে পুলিশ এসব তথ্য পেয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে তদন্তাধীন বিষয় হওয়ায় পুলিশের কোনো কর্মকর্তা এসব বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
গত ২২ মে অভয়নগরের ডহর মশিয়াহাটি গ্রামের পিন্টু বিশ্বাসের ঘরে একদল সন্ত্রাসী গুলি চালায়। তারা কুপিয়ে ও মাথা থেঁতলে হত্যা করে তরিকুলকে। নিহতের ঘেরটির অবস্থান ডহর মশিয়াহাটি গ্রামে।
দীর্ঘদিনের মাছের ঘের ব্যবসায়ী তরিকুল তার জলাশয়ের আকার বাড়ানোর পরিকল্পনা করায় স্থানীয় কিছু লোকের সঙ্গে বিরোধ হয়। ওই বিরোধ মীমাংসা এবং আশপাশের কিছু জমি ঘেরে অন্তর্ভুক্ত করার টোপ দিয়ে ডহর মশিয়াহাটির পিন্টু ওইদিন তাকে ফোন করে ডেকে নিয়েছিল। কিছু সময়ের মধ্যে পিন্টুর ঘরেই তরিকুলকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, তরিকুলকে হত্যা করা হয় চরমপন্থি ক্যাডার দীপঙ্করের তত্ত্বাবধানে। অভয়নগরের আন্ধা গ্রামের মৃত গণেশ মল্লিকের ছেলে দীপঙ্কর একসময় নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান মনোরঞ্জন গোসাই ওরফে মৃণাল এবং দলটির আরেক নেতা শৈলেন বিশ্বাসের সংস্পর্শে এসে অন্ধকার জগতে পা রাখে। মৃণাল-শৈলেন ও তাদের সশস্ত্র অনুসারীরা একসময় যশোর-খুলনার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মূর্তিমান আতঙ্ক ছিল।
নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সশস্ত্র ক্যাডার দীপঙ্কর তার কিছু অনুসারী নিয়ে সশস্ত্র গ্যাং গড়ে তোলে। দীপঙ্কর বেশির ভাগ সময় ভারতে থাকে। সেখান থেকে অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুর এবং খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ জলাবদ্ধ এলাকায় ঘের মালিকসহ অন্য ব্যবসায়ীদের ওপর ছড়ি ঘোরায়। এমনকি খুন-খারাবির জন্য ভাড়াও খাটে তার অনুসারীরা।
আলোচিত তরিকুল হত্যা মামলার বাদী রফিকুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলে, দীপঙ্কর তাকে ফোন করে তরিকুল হত্যার দায় স্বীকার করে। এ অপারেশনের জন্য দীপঙ্করকে ১২ লাখ টাকার কন্ট্রাক্ট দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী ভারতে বসে দীপঙ্কর তার সশস্ত্র ক্যাডারদের নির্দেশনা দিয়ে তরিকুলকে খুন করায়। অভয়নগরের ডহর মশিয়াহাটি গ্রামের পিন্টু, দিলীশ্বর বিশ্বাসের ছেলে দীনেশ, কার্তিকের ছেলে দুর্জয়, সুজিত বিশ্বাসের ছেলে সাগর বিশ্বাস, নিরঞ্জনের ছেলে অজিত, বিকাশ বিশ্বাসের ছেলে পল্লব, বিনয় বিশ্বাসের ছেলে গজো ওরফে পবন, নিরাপদ মণ্ডলের ছেলে অতীত মণ্ডল, রাজঘাটের জাকির কোরাইশির ছেলে আকরাম আকতার কোরাইশি পাপ্পু, বনগ্রামের মৃত বেনজীরের ছেলে মাসুদ পারভেজ সাথী, যশোর সদরের রামনগর এলাকার সিদ্দিক খানের ছেলে ফিরোজ খান এবং তাদের সহযোগীরা হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেয়।
তথ্যসূত্র:
১. যশোরে কৃষক দল নেতা হত্যায় বিএনপি নেতা
– https://tinyurl.com/bdfws2rs


