
ইরানের চাবাহার বন্দরে কার্যরত সংস্থাগুলোর ওপর ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই সিদ্ধান্তে বড় ধাক্কা খেল ভারত, কারণ কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দর নির্মাণ ও পরিচালনায় বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে দেশটি। আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ বৃদ্ধির মূল পরিকল্পনার কেন্দ্রে ছিল চাবাহার। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতি দিল্লির বহুমুখী কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে বড়সড় বাধা হয়ে দাঁড়ালো।
বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সহকারী মুখপাত্র থমাস পিগাট এই সংক্রান্ত ঘোষণা করেছে। সে বলেছে, চাবাহারে কাজ চালানোর জন্য ২০১৮ সালে কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছিল, যা এখন প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। ইরানকে একঘরে করার যে কৌশল ডোনাল্ড ট্রাম্প নিয়েছে, এই ঘোষণা তারই অংশ।
বন্দরের একটি টার্মিনাল সম্পূর্ণভাবে ভারত পরিচালনা করে থাকে। আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য এই বন্দর ভারতের কাছে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইরানের দক্ষিণ উপকূলে সিস্তান-বালুচিস্তান অঞ্চলে অবস্থিত চাবাহার বন্দর ভারত আর ইরান যৌথভাবে গড়ে তুলছে।
কৌশলগত বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, ওই বন্দর পরিচালনাকারী সংস্থাগুলির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারতকে সাজা দেওয়া হলো।
এই সিদ্ধান্ত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে চালু হবে। এরপরে যারাই চাবাহার বন্দরে পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত থাকবে বা আইএসিএ অনুযায়ী অন্যান্য কাজকর্মে শামিল হবে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণা ভারতের জন্য বড় ধাক্কা, কারণ চাবাহার বন্দর প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে ভারত। কানেক্টিভিটি ডিপ্লোম্যসির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবেও চাবাহার বন্দরকে দেখে থাকে দিল্লি।
দিল্লি চেয়েছিল, পাকিস্তানকে এড়িয়ে ভারতীয় পণ্য যাতে সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোর অর্থাৎ আইএনসিটিসির মাধ্যমে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলিতে পৌঁছানো যায়।
আইএনসিটিসি প্রায় ৭ হাজার ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ বহুমুখী পরিবহন প্রকল্প। এই পরিবহন পথ দিয়ে ভারত, ইরান, আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, রাশিয়া, মধ্য এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে পণ্য চলাচল অনেক সুবিধাজনক হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোর অর্থাৎ আইএনসিটিসির জন্য চাবাহার বন্দর যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এই পথ দিয়ে ইউরোপ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে ভারতীয় পণ্য। আবার ইরান আর রাশিয়ার জন্যও আইএনসিটিসি যথেষ্ট লাভজনক।
কৌশলগত বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের ওপরে চাপ আরও বাড়াচ্ছে। ভারতীয় পণ্যের ওপরে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর পরে এখন ভারতের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। এটা ভারতের জন্য একটা কৌশলগত ধাক্কা।
চাবাহার বন্দর শুধু ভারত-ইরান সহযোগিতার প্রকল্প নয়, বরং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পাকিস্তানের গওয়াদর বন্দরের জবাব হিসেবে দিল্লি বহু বছর ধরে যে উদ্যোগটি গড়ে তুলেছিল, সেটিই এখন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে বিপন্ন অবস্থায়। এতে ভারত শুধু তার বহুল কাঙ্ক্ষিত আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি হারাচ্ছে না, বরং কৌশলগতভাবে চীন ও পাকিস্তানের কাছে আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। তাই বলা যায়, ওমান উপসাগরের এই বন্দর নিয়ে নতুন ভূরাজনৈতিক সমীকরণ এখন দিল্লির জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তথ্যসূত্র:
1.Big blow for India? How Trump’s killing of Chabahar port waiver will hit Delhi
– https://tinyurl.com/mj7zej49
2. ইরানের চাবাহার বন্দরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ভারতের জন্য কতবড় ধাক্কা?
– https://tinyurl.com/5yat33hr


