ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্ৰামে হামলা চালাচ্ছে সন্ত্রাসী সংগঠন ইপিডিএফ, সাজানো হয়েছে ‘ধর্ষণ নাটক’

0
183

পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের নাটক সাজিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা, পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে কাজ করছে পাহাড়ি সন্ত্রাসী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।

অথচ যে কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়েছে অভিযোগ তুলে জেলায় অবরোধ চলছে, এ রকম কোনো ধর্ষণের ঘটনাই ঘটেনি। মেডিকেল রিপোর্টে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জনের অফিস থেকে এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ছাবের সরাসরি স্বীকার না করলেও কার্যালয়ের একজন তদন্ত কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন, ওই কিশোরীকে ধর্ষণের আলামত মেলেনি। ডা. মোহাম্মদ ছাবের বলেন, আমরা তিন সদ্যদের কমিটি ইতোমধ্যে রিপোর্ট তৈরি করে রেখেছি। এটি এসপিকে আজ জমা দেওয়া হবে। বিস্তারিত আপনারা সেখান থেকে জানতে পারবেন।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনা তুলে ছয়দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পাহাড়িদের সঙ্গে যোগ দিয়ে আইনশৃঙ্খল রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করছে ইউপিডিএফ। গত রোববার রাতেও রাঙামাটির গুইমারা এলাকায় ইউপিডিএফ গুলি ছুড়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় এ সশস্ত্র গোষ্ঠীর কার্যক্রম নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ গোষ্ঠী ভারতের ত্রিপুরায় অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে খাগড়াছড়িতে গিয়ে হামলা করছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সেদিকে ইঙ্গিত করেই সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর )বলেছেন, খাগড়াছড়ির ঘটনায় প্রতিবেশী দেশ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের ইন্ধন রয়েছে।

বাংলাদেশে অবৈধ অস্ত্রের বড় উৎস হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় সীমান্তকে চিহ্নিত করে আসছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গোয়েন্দা তথ্যমতে, ভারতের মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রায় নিয়মিতভাবে ছোটবড় অস্ত্রের চালান ঢুকছে। এসব অস্ত্রের বড় অংশ চলে যাচ্ছে পাহাড়ি এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে। এ গোষ্ঠী ভারতের ইন্ধনে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করছে।

নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, খাগড়াছড়িতে তাদের ১৫টি গ্রুপ রয়েছে। যারা অস্থায়ীভাবে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পাহাড়ে থাকছেন। তবে তাদের স্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে ভারতের মিজোরামে। মিজোরামে ছয়টি ক্যাম্পের খবর পেয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এ ক্যাম্পগুলো থেকেই বাংলাদেশে এসে পার্বত্য অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে ইউপিডিএফ।

প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ দিচ্ছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’

গত এক বছরে অভিযানে ইউপিডিএফের অর্ধশতাধিক সশস্ত্র সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। তারা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন, ভারতের মিজোরামে ছয়টি ক্যাম্পে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তারা। বাংলাদেশ থেকে তরুণ পাহাড়িদের দলে ভিড়িয়ে মিজোরামে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারপর বাংলাদেশে পাঠানো হয় হামলার জন্য। এদের থেকে বিভিন্ন সময় উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে বেশির ভাগই রাশিয়ান তৈরি। অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে এসএমজি, একে ৪৭, এলএমজি। এসব অস্ত্র সেকেন্ড হ্যান্ডের। সম্প্রতি আটক হওয়া চারজন ইউপিডিএফ সদস্যে এ কথা স্বীকার করে। তারা জানিয়েছে তাদের প্রশিক্ষণে হিন্দি ভাষাভাষী লোকজন আসত। তাদের নির্দেশনা দিতে খাগড়াছড়িতে অভিযানে যান।

এক বছরে ৩৫২ কোটি টাকা চাঁদা

পাহাড়ের সন্ত্রাসীগ্রুপগুলো গত এক বছরে ৩৩২ কোটি টাকা চাঁদা তুলেছে। গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, এর মধ্যে ইউপিডিএফ তুলেছে ১০৪ কোটি টাকা। চাঁদা নেওয়ার তালিকা রয়েছে, সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, কৃষি, যানবাহন, ঠিকাদার, কাঠ, বাঁশ ও অপহরণ। এর মধ্যে সশস্ত্র গ্রুপগুলো রাঙামাটি জেলা থেকে ২৪৪ কোটি, খাগড়াছড়ি থেকে ৮৬ কোটি ও বান্দরবান ২০ কোটি টাকা চাঁদা তুলেছে। খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি থেকে ইউপিডিএফ চাঁদা তুলেছে ১০৪ কোটি টাকা।

৩৩২ জন অপহরণ, ৮৯ জনকে হত্যা ইউপিডিএফের

শুধু চাঁদা নয়, অপহরণ ও হত্যার সঙ্গেও জড়িত ইউপিডিএফ। ২০০৯ থেকে বর্তমান পর্যন্ত ৩৩২ জনকে অপহরণ করেছে এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি। এর মধ্যে পাহাড়িও আছে। সর্বশেষ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রকে অপহরণ করার ঘটনা ঘটে। তাদের হাতে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৮৯ জন হত্যার শিকার হয়েছে। যাদের মধ্যে উপজাতি ও সেনা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন ১৬ জন।


তথ্যসূত্র:
১.ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে হামলা
-https://tinyurl.com/y559zjdh

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধ০৫ আগস্টের পর জিয়াউলের নেতৃত্বে খুনি হাসিনার কয়েক হাজার কল রেকর্ড ও বিভিন্ন ধরনের ফুটেজ মুছে ফেলে এনটিএমসি
পরবর্তী নিবন্ধ“শান্তি”র ছদ্মবেশে ট্রাম্পের ‘২০-দফা’: গাজা দখলের নয়া পরিকল্পনা