পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনি কৃষকদের ধরে নিয়ে গেল দখলদার সেনারা

0
73

১২ অক্টোবর, রবিবার অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি কৃষককে ধরে নিয়ে গেছে দখলদার ইসরায়েলি সেনারা। হেবরনের পশ্চিমে তারকুমিয়া শহরে নিজস্ব জমিতে জলপাই (জয়তুন) সংগ্রহের সময় তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।

ওয়াফার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর এই অভিযান ফিলিস্তিনের জাতীয় জলপাই সংগ্রহ অভিযান শুরু হওয়ার ঠিক পরপরই সংঘটিত হয়। জাতীয় জলপাই সংগ্রহ কর্মসূচীর লক্ষ্য ছিল উপনিবেশবাদের মোকাবেলায় কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের ভূমির অধিকার রক্ষা করা। কিন্তু ফসল ঘরে তুলতে না দিয়ে কৃষকদের আটক করে, জমিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং তাদের যানবাহন জব্দ করে সন্ত্রাসী ইসরায়েলি বাহিনী। ফলে একদিকে যেমন কৃষকের মৌসুমি ফসল হুমকির মুখে, অন্যদিকে সেই জমি অবৈধ ইহুদি উপনিবেশ সম্প্রসারণের নীলনকশায় অন্তর্ভুক্ত করার নতুন চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, তর্কুমিয়া শহরের বাইপাস সড়কের পাশে অবস্থিত জলপাই বাগানগুলোতে প্রবেশ করতে গেলে ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনি কৃষকদের বাধা দেয়। সেই জমির পাশেই রয়েছে অবৈধ ইহুদি উপনিবেশ আদোরা ও তেলেম। এই উপনিবেশগুলোর তথাকথিত “নিরাপত্তা রক্ষার” অজুহাতে সেনারা কৃষকদের গ্রেফতার করে এবং তাদেরকে হুমকি দেয় যে, যদি তারা জমিতে ফিরে আসে তবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইসরায়েলি বাহিনী শুধু কৃষকদের বাধা দিয়েই থেমে থাকেনি, বরং তাদের যানবাহন জব্দ করে এবং দীর্ঘক্ষণ আটকে রেখে জমিতে প্রবেশের অধিকার থেকেও বঞ্চিত করেছে। বাস্তবতা হলো, এটি একটি সুপরিকল্পিত কৌশল—যার মাধ্যমে স্থানীয় আরবি মালিকানাধীন জমিগুলো ফাঁকা করে তাতে দখলদার বসতিস্থাপনকে সহজতর করা যায়।

তর্কুমিয়া ও সোবা অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই দখলদার বাহিনী ও উপনিবেশকারীদের আক্রমণের শিকার। স্থানীয় মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের মতে, ওই অঞ্চলে কৃষি জমি উজাড় করা, ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া, এবং জলপাই গাছ উপড়ে ফেলার ঘটনা নিয়মিত সংঘটিত হয়ে আসছে। এই সমস্ত কর্মকাণ্ড এক স্পষ্ট পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়—যেখানে ফসল নয়, বরং ভূমির উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাই মূল লক্ষ্য।

তর্কুমিয়ায় এ দৃশ্য কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি দখল ও নিপীড়নের ধারাবাহিক চিত্র। ফিলিস্তিনি কৃষকদের উপর এমন নিপীড়ন শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি সাংস্কৃতিক ও অস্তিত্বগত এক আঘাত। জমির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা মানে, ভবিষ্যতের প্রজন্ম থেকে ইতিহাস, পরিচয় এবং অধিকার কেড়ে নেওয়া। এই সবকিছুই দখলদার ইসরায়েলের সংগঠিত এক আগ্রাসন এবং একটি সুনির্দিষ্ট উপনিবেশিক কাঠামোর অংশ। স্থানীয়রা বলছেন, ইসরায়েলি বাহিনীর এসব কর্মকাণ্ড ফিলিস্তিনিদের জীবিকা ও ভূমির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আরেকটি প্রচেষ্টা।


তথ্যসূত্র:
1. Israeli forces continue assaulting Hebron’s farmers as olive harvest season approaches
– https://tinyurl.com/y93pezcy

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাবুল প্রবেশে পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধিদলকে নিষেধাজ্ঞা
পরবর্তী নিবন্ধগাজার আলোচিত সাংবাদিক সালেহ আলজাফারাওয়ি ইসরায়েলের সাথে সম্পৃক্ত মিলিশিয়াদের গুলিতে শহীদ