
সম্প্রতি ভারতের মূলধারার গণমাধ্যম ‘নিউজ১৮’ একটি মতামতভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চরম উস্কানিমূলক এবং আগ্রাসী বক্তব্যে ভরপুর। গত ১৯ অক্টোবর প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশ কি পরবর্তী ইউক্রেন হবে নাকি কিউবা?’ – এই শিরোনামটি নিজেই যুদ্ধ এবং অস্থিতিশীলতার ছায়া ফেলে। এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র একটি সাংবাদিকতার নামে লেখা নয়, বরং এটি প্রতিবেশী দেশের স্বাধীনতা কে অস্বীকার করে আক্রমণের সরাসরি আহ্বান জানায়।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ তুরস্ক থেকে মিসাইল এবং ড্রোন কেনার পরিকল্পনা করছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে গণমাধ্যমটি ভারতকে পরামর্শ দিয়েছে যে, এই সরঞ্জামগুলো কেনার আগেই বাংলাদেশের উপর আক্রমণ চালিয়ে তার ভূরাজনৈতিক মানচিত্রই বদলে ফেলা উচিত। এটি কোনো সাধারণ মতামত নয় – এটি যুদ্ধের প্রত্যক্ষ উস্কানি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যদি বাংলাদেশ এই চুক্তি বাস্তবায়ন করে এবং ভারতবিরোধী অবস্থান বজায় রাখে, তাহলে বাংলাদেশ পরবর্তী ইউক্রেন বা পাকিস্তানে পরিণত হতে পারে। এখানে ভারতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ‘কঠোর’ হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের উদাহরণ টেনে। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে কিউবায় বিদেশি ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন সহ্য করেনি, ঠিক তেমনই ভারতও বাংলাদেশকে ‘কাঁটা’ হিসেবে থাকতে দেবে না!
আরও ভয়াবহ হলো, প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে ‘শায়েস্তা’ করার জন্য সবদিক থেকে অবরোধের কথা বলা হয়েছে। এমনকি ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকা ব্যবহার করে বাংলাদেশকে পানিশূন্য করে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের সমতুল্য। ১৯৭১ সালে ভারত যেভাবে বাংলাদেশের জন্মে সহায়তা করেছিল, এখন সেই দেশের মানচিত্রই ধ্বংস করার সময় এসেছে – এমন নির্লজ্জ দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল করে দখলদারিত্ব স্থায়ী করা বা পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিন্দুর’ চালানোর উদাহরণ টেনে বলা হয়েছে যে, ভারতের উচিত বাংলাদেশের উপরও একইভাবে হামলা চালানো। এই লেখা কেবলই একটি গণমাধ্যমের মতামত নয়, বরং এটি হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রতিধ্বনি, যা প্রতিবেশী দেশকে দুর্বল করে নিজের আধিপত্য বিস্তারের স্বপ্ন দেখে।
এই ধরনের উস্কানি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার শান্তির জন্য হুমকি। ভারতে হিন্দুত্ববাদী শক্তির উত্থানের সাথে সাথে সেখানকার মুসলিম ভাই-বোনদের উপর অমানুষিক নির্যাতন বেড়েছে। কাশ্মীরকে অশান্ত করে রাখা হয়েছে, কাশ্মীরি মুসলমানদের উপর জুলুম-নির্যাতন অব্যাহত। এই ভূখণ্ডে ইসলাম এবং মুসলমানদের প্রধান শত্রু হলো এই হিন্দুত্ববাদীরা, যারা আমাদেরকে সর্বদা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখতে চায়। তারা বাংলাদেশকে নিয়ে এমন চিন্তা করছে যেন আমরা তাদের অধীনস্থ কোনো প্রদেশ!
এমন পরিস্থিতিতে চুপ করে বসে থাকা যায় না। হিন্দুত্ববাদীদের মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে – দাওয়াহ, ইদাদ এবং জিহাদের নুসরতমূলক কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে। জিহাদি জামাতকে শক্তিশালী করা এখন জরুরি, যাতে যদি কখনো হিন্দুত্ববাদী ভারত আমাদের উপর হামলা করে বসে, তাহলে আমরা জিহাদের মাধ্যমে এই আগ্রাসী শক্তিকে প্রতিহত করতে পারি। এটি শুধুমাত্র আত্মরক্ষার দাবি নয়, বরং আমাদের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় অধিকার রক্ষার জন্য অপরিহার্য। আমরা শান্তি চাই, কিন্তু যদি যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়, তাহলে প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
এই আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদী কালো শক্তির মোকাবেলায় আমাদের তাওহিদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নাপাক মুশরিকদের বিরুদ্ধে ঈমানি শক্তিতে লড়তে হবে। অফলাইন অনলাইন দাওয়াহর মাধ্যমে উম্মাহকে সতর্ক করতে হবে।


