বোরকা পরা ছাত্রীদের বিদ্রূপ করে মদ হাতে ও হাফ প্যান্ট পরে ক্লাসে যাওয়ার ঘোষণা রাবি শিক্ষকের

0
168

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন বোরকা ও হিজাব পরা নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কটাক্ষপূর্ণ মন্তব্য করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট করেছে। ওই পোস্টে সে বোরকা ও হিজাবকে কটাক্ষ করে বিদ্রূপাত্বক ভাষায় ঘোষণা দেয়, সে ক্লাসে টু-কোয়াটার প্যান্ট পরে এবং হাতে মদের বোতল নিয়ে ক্লাসে যাবে।

গত ২৭ অক্টোবর নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া ওই পোস্টে সে লিখেছে, ‘এই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা (বোরকা-হিজাব পরা) আমি এন্ডর্স করছি। কাল আমি এরকম ব্যক্তিগত স্বাধীনতা পরে ও হাতে নিয়ে ক্লাসে যাবো। পরবো টু-কোয়াটার, আর হাতে থাকবে মদের বোতল। মদ তো ড্রাগ না! মদ পান করার লাইসেন্সও আমার আছে! শিবির আইসেন, সাংবাদিকরাও আইসেন!’

ধর্মীয় পোশাক পরিধানকে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সঙ্গে মদের উদাহরণ টেনে তুলনা করার ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ২৭ অক্টোবর রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নেন এবং ওই শিক্ষককে দ্রুত বহিষ্কারের দাবি জানান।

বিক্ষোভে রাকসুর মহিলাবিষয়ক সম্পাদক সায়েদা হাফসা বলেন, হিজাব পরে নারীরা যখন সমাজে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন একজন শিক্ষক তাদের পোশাক নিয়ে কটাক্ষ করে নারীর মর্যাদাকে অবমাননা করেছেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিদের ছবি ব্যবহার করে টু-কোয়াটার ও মদের বোতলের উদাহরণ টেনে তিনি বোরকাকে সামাজিকভাবে অবমূল্যায়ন করেছেন। এটি শুধু নারী নয়, পুরো সমাজের প্রতি অবমাননাকর।’

রাকসুর জিএস সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘যদি তার সাহস থাকে, তিনি বিভাগে মদের বোতল হাতে ও হাফ প্যান্ট পরে আসুন। না হলে প্রশাসন তাকে শোকজ করবে। এটি কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়, এটি শিক্ষার্থীদের অস্তিত্ব, হিজাবের অস্তিত্ব ও মুসলিমদের আত্মপরিচয়ে আঘাত।’

ঘটনার পরপরই শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন তার পোস্টটি ‘অনলি-মি’ করে দেয়, অর্থাৎ জনসাধারণের জন্য অদৃশ্য করে ফেলে। তবে তার পোস্টের স্ক্রিনশট দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষোভ আরও ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ হয়েছে। ২৮ অক্টোবর বিকেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের নারী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষক নারী প্রতিনিধিদের হিজাব পরিহিত ছবিকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন এবং মদ ও হাফ প্যান্টের উদাহরণ দিয়ে ধর্মীয় অনুশাসনকে অবমাননা করেছেন। তারা বলেন, এমন বক্তব্য দেশের আইন, সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার পরিপন্থি।

একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘রাবির ওই শিক্ষক পোশাকের স্বাধীনতা চেয়েছেন কিন্তু একজন নারীর হিজাব মানতে পারেন না। এই দ্বিচারিতামূলক আচরণ কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানানসই নয়।’ আরেকজন বলেন, ‘একজন শিক্ষক সমাজে আলো ছড়ানোর মানুষ। কিন্তু এমন বিদ্বেষপূর্ণ বার্তা সমাজে বিভাজন ও অন্ধকার সৃষ্টি করে।’

শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন দ্রুত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয় এবং ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থী যেন ধর্মীয় পোশাক ও বিশ্বাস নিয়ে বিদ্রূপ করার সাহস না পায়।


তথ্যসূত্র:
1. বোরকা ও মদ নিয়ে রাবি শিক্ষকের পোস্ট, যা জানা যাচ্ছে
– https://tinyurl.com/y6tu9mta
2. রাবি শিক্ষকের হিজাব নিয়ে কটাক্ষের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
– https://tinyurl.com/4j37tjxr

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধগোপনে বাকৃবি ছাত্রীদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি তুলে সিনিয়রকে দিতো হিন্দু ছাত্রী
পরবর্তী নিবন্ধইসকনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ায় যবিপ্রবি শিক্ষার্থীকে হত্যার হুমকি