জেএনআইএম মুজাহিদিন কর্তৃক মালির রাজধানী অবরোধ: বৈধতা এবং কর্তৃত্ব হারাচ্ছে জান্তা

0
472

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে রাশিয়া-সমর্থিত জান্তা সরকার এবং আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী ‘জেএনআইএম’ মুজাহিদদের মধ্যে তীব্র লড়াই অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দেশটির রাজধানী বামাকো মুজাহিদদের দ্বারা অবরুদ্ধ বলে জানা গেছে।

বিগত বছরগুলিতে পশ্চিমা বিশ্ব ও ফরাসি-সমর্থিত সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে ‘জেএনআইএম’ মুজাহিদরা। পরে রাশিয়া-সমর্থিত সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটিতে প্রতিষ্ঠিত জান্তা শাসনের বিরুদ্ধেও এই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মুজাহিদরা।

সেই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক মাসগুলিতে, মুজাহিদরা মালির জান্তা বাহিনী থেকে অনেক এলাকা এবং সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। এসকল বিজয় অভিযানের সময় মুজাহিদদের আক্রমণে মালির জান্তা বাহিনীর অসংখ্য সৈন্য নিহত হয়েছে।

প্রতিরোধ বাহিনী জামাআত নুসরাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন (জেএনআইএম) এর নেতৃত্বে মুজাহিদরা এই আক্রমণগুলির মাধ্যমে রাজধানী বামাকো এবং এর আশেপাশের অঞ্চলে তাদের প্রভাব বিস্তার করেছেন। আর সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসাবে জেএনআইএম রাজধানী বামাকো অবরোধের কৌশল অবলম্বন করেছেন।

এই প্রেক্ষাপটে, জেএনআইএম মুজাহিদিন বামাকোতে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিচ্ছেন এবং জ্বালানি ট্যাঙ্কারগুলিকে শহরে পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে নদী ও স্থল পথে বামাকো এবং দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে জ্বালানি সরবরাহের কনভয়গুলোকে সফল হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছেন ‘জেএনআইএম’ মুজাহিদিন। এই লক্ষ্য মুজাহিদরা গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত দেশটিতে জান্তা বাহিনীর ১৪টি জ্বালানি সরবরাহ কনভয়ে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়েছেন। এসময় মুজাহিদদের হামলায় ধ্বংস ও পুড়ে গেছে জান্তার শত শত জ্বালানি ট্যাঙ্কার ও সামরিক বাহিনীর অসংখ্য সাঁজোয়া যান, হতাহত এবং বন্দী হয়েছে অনির্দিষ্ট সংখ্যক জান্তা সদস্য।

এদিকে মুজাহিদিন কর্তৃক এই জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে জান্তা সরকার ব্যাপক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। ফলে রাজধানী সহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, জান্তা সরকারি অফিসগুলোতে কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি জ্বালানি সংকটের কারণে জান্তার অর্ধেকেরও বেশি সামরিক যানবাহন পরিষেবার বাইরে রয়েছে।

‘জেএনআইএম’ মুজাহিদরা ঐতিহাসিকভাবে হিট-এন্ড-রান আক্রমণের কৌশল ব্যবহার করে মালির সিংহভাগ এলাকার উপর আগেই নিয়ন্ত্রণ ও উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করেছেন। বর্তমানে জান্তাকে আরও দূর্বল ও জনবিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে ‘জেএনআইএম’ মুজাহিদরা অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরু করেছেন। এই যুদ্ধের অংশ হিসেবে মুজাহিদরা জান্তা বাহিনীর সামরিক কনভয়গুলোর উপর অতর্কিত আক্রমণ, সরবরাহ কনভয়গুলি পুড়িয়ে দেওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অবরোধ করার পাশাপাশি দেশটির জ্বালানি আমদানির উপর কার্যত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করেছে।

এই লক্ষ্য শুধুমাত্র গত সেপ্টেম্বরেই প্রতিবেশি দেশগুলো থেকে বামাকোর উদ্দেশ্যে যাত্রা করা ১০টি জ্বালানি ও সরবরাহ কনভয়কে রাজধানীর উপকন্ঠে ৭টি এলাকায় অতর্কিত আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করেছেন মুজাহিদরা। এমনিভাবে অক্টোবর মাসেও ‘জেএনআইএম’ মুজাহিদরা জান্তার ৭টি জ্বালানি ও সরবরাহ কনভয়ে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়েছেন। গত সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে মুজাহিদরা এসকল আক্রমণের মাধ্যমে জান্তা বাহিনীর শত শত জ্বালানি ট্যাঙ্কার ও সরবরাহ ট্রাক ধ্বংস এবং জব্দ করেছেন।

মুজাহিদরা জান্তা সরকারের উপর এই অবরোধ আরও তীব্রতর করতে দেশটির রাজধানী বামাকোর উত্তরের সমস্ত সড়ক বন্ধ করে দিয়েছেন। একই সাথে প্রতিবেশি মৌরিতানিয়া, সেনেগাল এবং আইভরি কোস্টের সাথে সংযোগকারী প্রধান সড়কগুলোও কেটে দিয়েছেন। এছাড়াও পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদেরকে বামাকোর দিকে সবধরনের সরবরাহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে ‘জেএনআইএম’ যাত্রাবাহী বাসগুলোকে শরিয়াহ্ নিয়ম মেনে নারী পুরুষদের পৃথক আসন এবং জান্তার সাথে সবধরনের সহায়তা পরিহারের শর্তে রাজধানী বামাকোতে চলাচলের অনুমতি দিয়েছে।

প্রতিরোধ বাহিনী ‘জেএনআইএম’ মুজাহিদদের এই অবরোধের ফলে বামাকোতে গ্যাস ও জ্বালানি স্টেশনগুলি দিনের বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ পড়ে থাকছে। কিছু সময়ের জন্য স্টেশনগুলি চালু হলেও দীর্ঘ লাইন তৈরি হচ্ছে এবং ১০ গুণ বেশি মূল্যে জ্বালানি বিক্রি করা হচ্ছে। এদিকে খনি উত্তোলনের কাজও ধীর হয়ে গেছে। আসিমি গোইতার নেতৃত্বাধীন জান্তা সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় দৈনন্দিন জীবনে জনগণের উপর থেকে জান্তার নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পেতে শুরু করেছে এবং সরকারের বৈধতা দুর্বল হচ্ছে। এই ব্যর্থতার ফলে বিভিন্ন রাজ্যে জান্তার বিরুদ্ধে স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোর প্রতিক্রিয়া প্রতিদিনই বাড়ছে।

এদিকে ‘জেএনআইএম’ জানিয়েছে যে, দেশে বেসামরিক নাগরিকদের উপর জান্তার বর্বরোচিত আক্রমণ এবং জ্বালানি বিক্রির উপর বিধিনিষেধের প্রতিক্রিয়ার কারণে মুজাহিদরা এই অবরোধ আরোপ করেছেন। আর যতদিন না পর্যন্ত জান্তা প্রশাসন ভেঙে না পড়ছে ততদিন এই অবরোধ অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য যে, মালির জান্তা প্রশাসন গত আগস্টে ‘জেএনআইএম’ মুজাহিদিন এবং তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলিকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে সরকারি স্টেশনের বাইরে জ্বালানি বিক্রি নিষিদ্ধ করেছিল। সেই সাথে মুজাহিদদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের জ্বালানি স্টেশনগুলোকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছিল। বিপরীতে ‘জেএনআইএম’ মুজাহিদরাও পাল্টা প্রতিক্রিয়া স্বরূপ অবরোধের মাধ্যমে জান্তা বাহিনীর সামরিক শক্তিকে দুর্বল করার কৌশল অবলম্বন করেছেন। সেই সাথে ‘জেএনআইএম’ মুজাহিদরা জান্তাকে উৎখাত করে একটি স্বাধীন ইসলামী ইমারত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাকির নায়েকের ঢাকা সফর ঘিরে ভারতের অদ্ভুত প্রত্যাশা
পরবর্তী নিবন্ধভারতে বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী আইন- ২০২৫ এর বিরুদ্ধে ‘জেল ভরো আন্দোলন’; স্বেচ্ছায় জেলবন্দি ২০০০ মুসলিম