
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিম আফ্রিকায় তীব্র জিহাদি সংগ্রামে লিপ্ত জামাআত নুসরাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন (জেএনআইএম)। সশস্ত্র এই ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনীটি ধীরে ধীরে মালির রাজধানী বামাকোর দিকে অগ্রসর হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে দলটির মুজাহিদিনরা এখন রাজধানী থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটারেরও কম দূরে অবস্থান করছেন।
জেএনআইএম মুজাহিদিনরা বামাকোতে যুদ্ধরত জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে গত দুই মাস ধরেই জ্বালানি ও সামরিক সরবরাহের উপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে আসছেন। এতে জান্তা প্রশাসন এখন প্রচন্ড চাপ অনুভব করছে।
তদন্তকারী সংস্থা দ্য সেন্ট্রির নির্বাহী পরিচালক জাস্টিনা গুডজোভস্কা বলেন, “জেএনআইএম বামাকোর নেতাদের ভয় দেখাচ্ছে, দলটি তার কার্যক্রমের মাধ্যমে এমন ধারণা তৈরি করছে যে রাজধানী বামাকো এখন বিচ্ছিন্ন, দলটির যোদ্ধারা রাজধানীর দিকে এগিয়ে আসছে এবং খুব শীগ্রই দলটি পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নিবে।”
রয়টার্সকে দেওয়া ছয়জন নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং কূটনীতিক মনে করেন, জেএনআইএমের মূল লক্ষ্য হলো বলপ্রয়োগের মাধ্যমে মালির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। এই লক্ষ্যে জেএনআইএম যোদ্ধারা জান্তা প্রধান (রাষ্ট্রপতি) আসিমি গুইতা সরকারের ক্ষমতাকে দুর্বল করে উপস্থাপন করছেন এবং নিজেদেরকে সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তির দিক থেকে সুসংহত একটি প্রশাসন হিসাবে সামনে আনছেন।
গত অক্টোবর মাসে জারি করা এক বিবৃতিতে, জেএনআইএম বলেছিল যে, তারা বামাকোর কর্তৃত্ববাদী জান্তা সরকারকে লক্ষ্য করে কাজ করছে। এসময় মালির মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর, বিশেষ করে রাজধানীর বাইরে, জান্তার চালানো বর্বরোচিত ও পৈশাচিক নিপীড়নের কথা তুলে ধরে জেএনআইএম।
রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, মালিতে জান্তার বিরুদ্ধে মুজাহিদদের চলমান যুদ্ধ প্রতিবেশী দেশগুলোর কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলির উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যেমন বুর্কিনা ফাসো এবং নাইজার, যারা সকলেই সামরিক বাহিনী দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে এবং রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছে।
বামাকোর একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেন, “যদি মালির সরকার ভেঙে পড়ে, তাহলে সবকিছু ভেঙে পড়বে এবং সাহেল জোটও ভেঙে পড়বে।”
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, মালির সামরিক জান্তার নেতৃত্বের মধ্যে একটি গভীর অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে, এটি এমন এক চ্যালেঞ্জ যা আসিমি গোইতার সরকারকে উৎখাত করতে ভূমিকা রাখতে পারে।
রয়টার্স জানিয়েছে যে, মালির জান্তা আগস্ট মাসে দুই সামরিক জেনারেল এবং আরও কয়েক ডজন সৈন্যকে গ্রেপ্তার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছে।
রয়টার্সের মতে, গণমাধ্যমের সাথে কথা বলার অনুমতিপ্রাপ্ত নয় এমন একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেছেন, “আমি বিশ্বাস করি না যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে জান্তা সরকারের এই শাসনব্যবস্থার ক্ষমতা ধরে রাখার ক্ষমতা আছে। কেননা রাজনৈতিক এবং সশস্ত্র উভয় ধরণের অনেক শক্তিই এই শাসনব্যবস্থার উপর চাপ প্রয়োগ করছে।”
বামাকোর একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেন,
জেএনআইএম বিশেষ করে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা এবং শহরগুলিতে মহিলাদের হিজাব পরার নির্দেশ দিয়েছে। দলটির যোদ্ধারা শহরে প্রবেশের চেষ্টা করবে এমন সম্ভাবনা আমরা উড়িয়ে দিতে পারি না।”
অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ইতালি সহ বিদেশী দূতাবাসগুলি তাদের নাগরিকদের মালি ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ক্রমবর্ধমান সতর্কতা জারি করছে।
তথ্যসূত্র:
– https://tinyurl.com/4mpvmt9x


