নামসর্বস্ব সংগঠনের ব্যানারে ফের সক্রিয় ইসকন

0
118

কৌশল পাল্টে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে বিতর্কিত ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন। পূজা উদযাপন পরিষদ ও জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের মতো প্রধান ধর্মীয় সংগঠনগুলোর পাশাপাশি রামসেনা, শিবসেনার মতো নামসর্বস্ব সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব দখল করে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা। এ কাজে সহযোগিতা করছে ভারতে পলাতক আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ কিছু নেতা, যাদের অনেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হচ্ছে ইসকনের গোপন বৈঠকে।

১২ নভেম্বর ‘আমার দেশ’ গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, চট্টগ্রামের প্রবর্তক ইসকন মন্দিরের আন্ডারগ্রাউন্ড অংশ এখন এ সমন্বয়ের কেন্দ্রবিন্দু। সেখানেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে নিয়মিত বৈঠক, যেখানে দেশ ও বিদেশে অবস্থানরত উগ্র হিন্দুত্ববাদী ইসকন নেতারা অংশ নিচ্ছে। বিশেষ করে ভারতের কলকাতা ও ত্রিপুরায় আশ্রয় নেওয়া কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা এসব বৈঠকে নির্দেশনা দিচ্ছে।

ইতোমধ্যে দেশজুড়ে অন্তত ১৩টি সংগঠনের নামে এক হাজারেরও বেশি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব সংগঠনের ব্যানারে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবকে সামনে রেখে মাঠপর্যায়ে তৎপরতা বাড়ানো হচ্ছে। ইসকনের কর্মীরা গেরুয়া পোশাক ত্যাগ করে সাধারণ ভক্তের বেশে অংশ নিচ্ছে উৎসব-আয়োজনে, যাতে স্থানীয়ভাবে সন্দেহের মধ্যে পড়তে না হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যে কোনো সময় যে কোনো ইস্যুতে সংখ্যালঘু ধর্মীয় কার্ড ব্যবহার করে দেশে ফের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার মতো শক্ত অবস্থান ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে তাদের। এই অপচেষ্টা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থাও।

গোয়েন্দাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গত এক বছরে ইসকন সদস্যরা এসব সংগঠনের ছত্রছায়ায় নিজেদের নেটওয়ার্ক বিস্তারের পাশাপাশি ধর্মীয় পরিচয়ের আড়ালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকারের নামে উগ্রবাদী এজেন্ডা চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, যা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির পটভূমি হতে পারে।

একই সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে গত ফেব্রুয়ারির শিব চতুর্দশী মেলায় ইসকনের প্রথম এ নতুন কৌশল ধরা পড়ে। রামসেনাসহ তিনটি সংগঠনের ব্যানারে একই ধরনের টি-শার্ট পরা শতাধিক তরুণের আচরণে ইসকনের ছাপ স্পষ্টভাবে লক্ষ করেন গোয়েন্দারা। এরই মাঝে জন্মাষ্টমীর র‌্যালিতে হঠাৎ করে চিন্ময়ের মুক্তি চাই লেখা প্লাকার্ড প্রদর্শন করে উগ্রবাদী সংগঠন রাম সেনার সদস্যরা। পরবর্তী সময়ে কয়েকজনকে আটক করা হলেও স্থানীয় ইসকন নেতাদের প্রভাবে তারা মুক্তি পেয়ে যায়।

সূত্র জানায়, হাসিনার পতনের পর যে কটি সংগঠন ও সংস্থার কাঁধে ভর করে ফেরার অপচেষ্টা করে ফ্যাসিবাদী শক্তি, তার অন্যতম ইসকন। এক মাসের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৬টি মহাসমাবেশ করে এ উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনটি, যেখানে অংশ নেয় আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এসব সমাবেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ নানা বায়বীয় অভিযোগ তুলে আন্তর্জাতিক মহলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করে সংগঠনটি।

জানা গেছে, অবাস্তব কিছু দাবি-দাওয়া দিয়ে সরকারকে বেকায়দায়ও ফেলে ইসকনের তখনকার নেতা চন্দন ধর ওরফে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ। সনাতনী জাগরণী জোট নামের তথাকথিত একটি সংগঠনের ব্যানারে ওইসব কর্মসূচির আয়োজন করা হলেও এর নেপথ্যে সর্বশক্তি নিয়ে কাজ করে ইসকন। ভারতীয় মিডিয়ায় ইসকনের সে শো-ডাউনগুলো ফলাও করে প্রকাশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে হাসিনার পতনকে মৌলবাদের উত্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা চালানো হয়।

ভারতের উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ

সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব ধর্মীয় সংগঠনের অধিকাংশই আগে ছিল নামসর্বস্ব; গত এক বছরে এগুলো হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তদন্তে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের তথাকথিত ক্লিন ইমেজধারী হিন্দু নেতাদের নেতৃত্বে এসব সংগঠন মূলত চট্টগ্রাম থেকে পরিচালিত হচ্ছে। তাদের অনেকের সঙ্গে ভারতের উগ্রবাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।


তথ্যসূত্র:
1. নামসর্বস্ব সংগঠনের ব্যানারে ফের সক্রিয় ইসকন
– https://tinyurl.com/8nzsfrp7

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকে পেট্রল ঢেলে আগুন
পরবর্তী নিবন্ধরাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে বাংলাদেশিরা: শ্রম রপ্তানির আড়ালে দালাল চক্রের ভয়াবহ প্রতারণা