দেশজুড়ে আওয়ামী নাশকতা: চারদিনে পুড়িয়েছে ১৪ বাস, ফুটিয়েছে অন্তত ১৭টি ককটেল

0
55

২০২৪ এর জুলাই-আগস্টে বিক্ষোভরত জনতার উপর গণহত্যা চালানোর নির্দেশদাতা পলাতক শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আজ (১৩ নভেম্বর) রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর নীলনকশা করেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে দেশজুড়ে পরিকল্পিত নাশকতা করছে দলটির সন্ত্রাসীরা। সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি ও জনজীবনে অচলাবস্থা সৃষ্টি করে রাজপথ দখলের অপচেষ্টাও চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে গত ১২ নভেম্বর পর্যন্ত চারদিনে ১৪টি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ১১ দিনে ১৫ স্থানে অন্তত ১৭টি ককটেল বা হাত বোমার বিস্ফোরণ হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানায়, এসব সন্ত্রাসী হামলার লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে বিশেষভাবে ছিল স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, যেখানে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এসব ঘটনায় শুধু রাজধানীতেই গতকাল ৪৪ আওয়ামী সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া গত ১১ দিনে রাজধানীসহ সারাদেশে নাশকতার অর্থায়ন ও পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের শতাধিক ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি একাডেমিক স্থাপনার ফটকে তালা ঝুলিয়েছে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। ১৩ নভেম্বরের ঘোষিত ‘লকডাউন কর্মসূচির’ অংশ হিসেবে গত রাতে এ ঘটনা ঘটায় তারা। রাজধানীর বাইরে গাজীপুর, সাভার, ফরিদপুর, খুলনা, মেহেরপুর, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় নাশকতার খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে গতকাল পর্যন্ত রাজধানীতে পরিকল্পিত ও সমন্বিত নাশকতামূলক হামলার কয়েকটি ঘটনা ঘটে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কে গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগ এবং ব্যাংক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নগরজুড়ে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা করছে সন্ত্রাসীরা। সব ঘটনাতেই মোটরসাইকেলে হেলমেট পরিহিত দুর্বৃত্তরা দ্রুত হামলা চালিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।

গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর দোলাইরপাড় মোড়ে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি বলে জানা গেছে। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার পর মিরপুর-১ নম্বরে সনি সিনেমা হলের সামনে মোটরসাইকেলে কয়েকজন এসে শতাব্দী পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়। একই দিন সকাল ১০টার দিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনের পাশের স্বর্ণালি চত্বরে বিস্ফোরকযুক্ত চারটি পটকা উদ্ধার করে পুলিশ।

এর আগে গত ৭ নভেম্বর মধ্যরাতে কাকরাইলের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের চার্চে ককটেল হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগের এক ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। গত সোমবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিট থেকে ৬টার মধ্যে মেরুল বাড্ডা ও শাহজাদপুর এলাকায় ভিক্টর পরিবহনের দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

ওইদিন ভোর পৌনে ৪টায় মিরপুর-২-এ গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। একই দিন সকাল ৭টার দিকে মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডে খাদ্যপণ্যের প্রতিষ্ঠান ‘প্রবর্তনা’র সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এছাড়াও মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল-ছাত্রী অংশে পটকা বিস্ফোরণের ঘটনা রেকর্ড করা হয়। ধানমন্ডির রোড নম্বর ২৭ (মাইডাস সেন্টার সামনে) এবং রোড ৯/এ (ইবনেসিনা হাসপাতালের সামনে)-মোট চারটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।

আওয়ামী লীগ দেশজুড়ে চালানো নাশকতার দায় প্রকাশ্যে স্বীকার করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন এক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। দলটির ক্যাডাররা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে প্রকাশ্যে ১৩ নভেম্বর লকডাউনের ঘোষণা দেয়, একই সঙ্গে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ককটেল নিক্ষেপ ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ চলমান নাশকতার দায়ভার নিজেদের কাঁধে তুলে নিচ্ছে।

ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের ফটকে তালা দেওয়ার বিষয়টি নিজেরাই প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন। সে তার পোস্টে লেখে ‘১৩ তারিখ সারা দিন, লকডাউন সফল করুন। লকডাউন বিএসএল- চারুকলা অনুষদ, আইইআর, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, কার্জন হল গেট, বিজ্ঞান ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।’

এদিকে গাজীপুরে গত ১১ নভেম্বর রাতে পৃথক স্থানে তিনটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস এলাকায় একটি, চক্রবর্তী এলাকায় একটি এবং শ্রীপুরের বেরাইদের চালা এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সাভারের আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার নারী ও শিশু হাসপাতালের সামনে মঙ্গলবার রাতে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের মধ্য ব্রাহ্মণপাড়ার সৌদি প্রবাসী টিটু সরদারের পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে গতকাল বুধবার দুপুরে শতাধিক পেট্রোল বোমাসহ বোমা তৈরির আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারকৃত সরঞ্জামের মধ্যে আছে ১৯টি হাতে তৈরি পেট্রোল বোমা, ১৭টি ২৫০ মিলি প্রাণ জুসের খালি কাচের বোতল, ২৮টি ২০০ মিলি পেপসির কাচের বোতল, দুটি ২০০ মিলি সেভেন আপের কাচের বোতল, একটি ২০০ মিলি কোকা-কোলার কাচের বোতল।

স্থানীয় একাধিক সূত্রমতে, আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি উপলক্ষে নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বোমাগুলো তৈরি করা হচ্ছিল। কিছু বোমা সেখান থেকে আগেভাগে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। সাবেক এমপি নিক্সন চৌধুরীর নিজস্ব ইউনিয়ন আজিমনগর থেকে বিপুল পরিমাণ বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের ঘটনায় সাধারণ জনগণের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।


তথ্যসূত্র:
1. আওয়ামী নাশকতায় পুড়ল ১৪ বাস, ফুটল ১৭ ককটেল
– https://tinyurl.com/7mxd6xcj

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাণিজ্য চালু রাখতে চাইলে পাকিস্তানকে সীমান্ত বন্ধ না রাখার নিশ্চয়তা দিতে হবে: মোল্লা বারাদার হাফিযাহুল্লাহ
পরবর্তী নিবন্ধফেনীতে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে আগুন দিলো দুর্বৃত্তরা