উপদেষ্টা আসিফের এপিএসের অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য

0
122

ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে চলতি বছরের শুরুর দিকে। তাদের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দেন অনেকেই। এছাড়াও স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের পিও তুহিন ফারাবী ও মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৪ মে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে সংস্থাটি। কিন্তু ৬ মাস পার হয়ে গেলেও দুদক অনুসন্ধান শেষ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি।

১৫ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, তদন্ত কর্মকর্তাদের অনুসন্ধানে গড়িমসি, যথাযথ নথিপত্র সংগ্রহ করতে না পারা, অনুসন্ধানের অগ্রগতির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তাগাদা না দেওয়া, অভিযুক্ত ব্যক্তির দ্বিমুখী তথ্য প্রদান এবং অদৃশ্য রাজনৈতিক চাপের কারণে তদন্ত কার্যক্রমে ভাটা দেখা দিয়েছে। অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানোর জন্য সংস্থাটি এখন পর্যন্ত ৩ বার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদল করেছে।

দুদকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছে, তদন্তের গতি বাড়াতে প্রয়োজনে তদন্ত কর্মকর্তা বদলের চিন্তা করা হচ্ছে। এতেও যদি কাজ না হয় তাহলে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে উপদেষ্টাদের সাবেক তিনজন ব্যক্তিগত সহকারীর তদন্ত শেষ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুই উপদেষ্টার তিন ব্যক্তিগত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে বদলি-পদোন্নতির মাধ্যমে অর্থ আয়, মন্ত্রণালয়ের কেনাকাটায় কমিশন নেওয়া, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অভিযোগ ওঠে। পরে দুদক বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাব বিবরণী সংগ্রহ করে। এতে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। পরে তিনজনকে দুদক তলব করে। তারা দুদকে এসে বক্তব্য প্রদান করেছে। কিন্তু, তাদের বক্তব্যে দুদক সন্তুষ্ট হতে পারেনি।

দুদকের মানিলন্ডারিং শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মোয়াজ্জেম হোসেনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে দুদকের টিম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কিন্তু দুদকের প্রশ্নের জবাবে সে যথাযথ উত্তর দিতে পারেনি। এছাড়াও আরেক উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) তুহিন ফারাবি ও ডা. মাহমুদুল হাসানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টেও অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত করার ক্ষেত্রে ভয়ে থাকেন তদন্ত কর্মকর্তা। কারণ তাদের ওপর রয়েছে অদৃশ্য রাজনৈতিক চাপ। এই কর্মকর্তারা অভিযোগের বিষয়ে নথি সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনায় পড়েন। এতে তদন্ত কার্যক্রম থমকে আছে। তবে দুদক যদি তাদের অভয় দেয় তাহলে তারা তদন্ত দ্রুত শেষ করতে পারবেন।

এদিকে দুদকে এনসিপি নেতাদের আনাগোনা বেড়ে গেছে বলে জানা যাচ্ছে। সম্প্রতি এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন দুদকে যাচ্ছে। কেন আখতার দুদকে গিয়েছিল জানতে তাকে কল করা হলে সে রিসিভ করেনি।

দুদক সূত্র জানায়, প্রায় দিন এনসিপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দুদক কার্যালয়ে যাচ্ছে। মূলত আর্থিক দুর্নীতিতে যারা অভিযুক্ত তাদের মামলার হাত থেকে রক্ষার সুপারিশ করছে তারা।

তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন আমার দেশকে জানান, ‘অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা তাদের অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন জমা দেবে।’ তবে কবে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেনি।

দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর গত ২২ এপ্রিল উপদেষ্টা আসিফের এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় অব্যাহতি দেওয়া হয় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের পিও ছাত্র প্রতিনিধি তুহিন ফারাবিকে।


তথ্যসূত্র:
১. উপদেষ্টা আসিফের এপিএসের অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য
– https://tinyurl.com/5mev8cty

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিদ্ধিরগঞ্জে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীবাহী বাসে আগুন
পরবর্তী নিবন্ধগ্রেপ্তারের পর হ্যান্ডকাপসহ পালালো আ.লীগ নেতা, সাঁড়াশি অভিযানে ব্যর্থ পুলিশ