পাকিস্তানি পুলিশের ব্যাপক নির্যাতনের শিকার আফগান শরণার্থীরা

0
82

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আফগান শরণার্থীদের উপর পাকিস্তানি পুলিশ ও কর্তৃপক্ষের নির্যাতন আরও তীব্র হয়েছে। পাকিস্তান থেকে ফিরে আসা আফগান শরণার্থীরা বলছেন, তাদের অনেকেই ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, অনেকের ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং অনেক অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এটিএনের একজন সাংবাদিক স্পিন বোল্ডাক এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং ফিরে আসা শরণার্থীদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা চিত্র তুলে ধরেছেন।

ফিরে আসা আফগান শরণার্থীরা জানিয়েছেন, পাকিস্তানের সরকারি দপ্তর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের ঘরবাড়ি, জমি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি জোর করে বাজেয়াপ্ত করছে।

ফেরত আসা এক অভিবাসী শামসুল্লাহ বলেন, “আমি চল্লিশ বছর করাচিতে ছিলাম। আমাদের পূর্বপুরুষরাও সেখানে গিয়েছিলেন। মনে করেছিলাম সারা জীবন সেখানেই কাটবে। এমনকি জমিও কিনেছিলাম। কিন্তু সবকিছু ফেলে রেখে ফিরতে আসতে হলো।”

ইসলামউদ্দিন নামের অপর একজন বলেন, “দেড় থেকে দুই মিলিয়ন আফগানি মূল্যের বাড়ি রেখে আসতে হয়েছে। সবাই আমাদের সম্পত্তি দখল করার চেষ্টা করছিল। আমরা কোনোমতে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি। পাকিস্তানে থাকা আমাদের আফগান ভাইয়েরা ভয়াবহ কষ্টে আছে।”

অনেকের জন্য ক্ষতি শুধু সম্পত্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়— তাদের পুরো ভবিষ্যৎ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মোহাম্মদ শাহীন নামে এক শেষ বর্ষের মেডিকেল ছাত্র বলেন, আমি এবং আমার পাকিস্তানি স্ত্রী সবকিছু হারিয়েছি। আমার স্ত্রী পাকিস্তানি এবং তার জাতীয় পরিচয়পত্র আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা আমাকে বলেছে, ‘তুমি আফগান হওয়ায় তাকে নিয়ে যেতে হবে।’

পাকিস্তানি পুলিশের চাঁদাবাজি

শরণার্থীরা আরও অভিযোগ করেছেন যে পাকিস্তানি পুলিশ একাধিক চেকপোস্টে জোরপূর্বক টাকা আদায় করে। তারা ২০,০০০ থেকে ৮০,০০০ আফগানি পর্যন্ত চাঁদা দাবি করে এবং এই চাঁদা না দিলে তাদের যেতে দেয় না।

ইউসুফ খান নামে এক আফগান শরণার্থী বলেন, “আমরা তিন মাস জেলে ছিলাম। এরপরও মুক্তি পেতে ৮০,০০০ আফগানি দিতে হয়েছে। বাড়ি ফিরতে আমাদের আট দিন লেগেছে।”

শিশুদের আটক ও নির্বাসন

শরণার্থীরা জানিয়েছেন, পাকিস্তানি পুলিশ ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। পরিবারকে না জানিয়েই কখনও কয়েকদিন, কখনও কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত তাদের আটক করে রাখছে। এরপর তাদের পরিবার ছাড়া একাই আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

নাজিবুল্লাহ নামে এক শিশু জানায়,“তারা শিশুদের গ্রেপ্তার করে এক মাস জেলে রাখে, নির্যাতন করে, কাজ করায়, তারপর পরিবার ছাড়াই তাদের আফগানিস্তানে পাঠিয়ে দেয়।”

স্পিন বোল্ডাকের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে বিপুলসংখ্যক অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের পাকিস্তান জোরপূর্বক ফেরত পাঠিয়েছে।

স্পিন বোল্ডাক জেলা গভর্নর কার্যালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ আলী হকমল হাফিযাহুল্লাহ বলেন: “কয়েক ডজন শিশুকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তাদের বাবা-মা কে না জানিয়েই তাদের গ্রেপ্তার ও ফেরত পাঠানো হয়েছে। তারা গুরুতর সমস্যায় আছে, তবে ইমারতে ইসলামিয়া তাদের সহায়তা করছে।”

স্পিন বোল্ডাকের স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিন ১,২০০ থেকে ১,৫০০ অভিবাসী পরিবার—অর্থাৎ ৬,০০০ থেকে ৮,000 মানুষ চামান–স্পিন বোল্ডাক সীমান্ত দিয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ করছে।


তথ্যসূত্র:
1. Afghan refugees returning from Pakistan report widespread abuse, property seizures, and forced deportations
– https://tinyurl.com/26drt5m3

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধপটুয়াখালীতে ইমামের স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যা
পরবর্তী নিবন্ধসম্ভাব্য বাণিজ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার লক্ষ্যে ওষুধ আমদানিকারকদের সাথে বৈঠক করেছেন ইমারাতে ইসলামিয়ার অর্থমন্ত্রী