নোয়াখালীতে সন্দেহের বশে দিনমজুরকে পিটিয়ে হত্যা আ.লীগ নেতার, গ্রেপ্তার ১

0
33

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা এ.কে.এম সিরাজ উল্যাহ’র বাড়িতে চোর সন্দেহে এক দিনমজুরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলায় এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নোয়াখালী।

গ্রেপ্তারকৃত আসামির নাম মো. লুৎফুর রহমান ওরফে লাতু (৫৯)। তিনি উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের যাদবপুর গ্রামের তাজুল ইসলাম মাস্টার বাড়ির মৃত নজির আহম্মদের ছেলে।

বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার সময় বিষয়টি নিশ্চিত করে নোয়াখালী পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) আর এম ফয়জুর রহমান বলেন, ২ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় আসামিকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। বিজ্ঞ আদালত শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে রাতে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে, গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার যাদবপুর গ্রাম থেকে পিবিআই নোয়াখালীর একটি দল অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।

নিহত মো. আলাউদ্দিন (২৬) উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাটইয়া গ্রামের মহিন উদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় একজন দিনমজুর ছিলেন।

পিবিআই জানায়, ২০২৪ সালের ১ মে রাত সাড়ে ৯টার দিকে নরোত্তমপুর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান এ.কে.এম সিরাজ উল্যার বাড়ির পুকুরের ঘাটলায় চোর সন্দেহে আলাউদ্দিনকে আটক করে তার বাড়ির কেয়ারটেকার লাতু। পরে চেয়ারম্যান সিরাজের নির্দেশে লাতুসহ এজাহারনামীয় অপর আসামিরা লোহার রড, লাঠি ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে মারধর করে আলাউদ্দিনকে গুরুতর জখম করে। পরবর্তীতে বিচার আরও বাকি আছে বলে চেয়ারম্যান সিরাজের বসতবাড়ির সামনে দোতলা আজিমা দরবার হলে আল্লাউদ্দিন আটকে রাখে। ওইদিন গভীর রাতে আলাউদ্দিন পালিয়ে গিয়ে কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেয়।

পিবিআই আরও জানায়, এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ভিকটিমকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঘটনার ৫ দিন পর ৬ মে বিকেলে সে মারা যান। এ.কে.এম সিরাজ উল্যাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা তৎকালীন রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে ঘটনার মীমাংসা করাসহ ন্যায় বিচারের আশ্বাস দেন। ওই আশ্বাসে নিহতের অসহায় বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজনেরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ভিকটিমের লাশ বিনা ময়নাতদন্তে গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করেন। ১ নম্বর আসামি বা তার স্বজনেরা প্রতিশ্রুতি মোতাবেক কোনো সমাধানের উদ্যোগ না নিলে পরবর্তীতে আদালতে নিহতের মায়ের দায়েরকৃত এজাহারের প্রেক্ষিতে কবিরহাট থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। পরবর্তীতে ১৩ জুন মৃত্যুর ৩৬ দিন পর ভিকটিমের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (পিবিআই নোয়াখালী) রাশেদুল হক বুধবার সন্ধ্যা ছয়টায় আমার দেশকে জানান, আলাউদ্দিনের মৃত্যুর পর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উল্লাহ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সমঝোতা করে দেবে মর্মে নিহতের স্বজনদের মামলা করতে দেননি। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ৬ জুন নিহতের মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে বিজ্ঞ আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই ঘটনায় প্রধান আসামি ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ পলাতক রয়েছে।

নোয়াখালী পিবিআই’র পুলিশ সুপার (এসপি) এম ফয়জুর রহমান আরও বলেন, দীর্ঘ ১৭ মাস নিবিড় তদন্তে হত্যা মামলার এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামি ঘটনার সাথে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে, যা নিয়ে মামলার তদন্ত ও ঘটনার সাথে জড়িত প্রধান আসামিসহ অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।


তথ্যসুত্রঃ
https://tinyurl.com/yc476vur

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধনারায়ণগঞ্জের বন্দরে কর্কশিট কারখানায় আগুনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
পরবর্তী নিবন্ধজামিন অযোগ্য মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের দাবির পর হিন্দু নেতার জামিন