কৃত্রিম সংকটের আড়ালে সারের দাম বৃদ্ধি; না দেখার ভান কৃষি কর্মকর্তার

0
40

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী একটি দ্বীপ অঞ্চল। এখানকার মানুষ কৃষি নির্ভর। মাটি উর্বর হওয়ার কারণে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়। আগাম তরমুজ রোপণ করার জন্য প্রয়োজন হয় সার, কিন্তু সারসংকটে এখানকার কৃষকরা। কৃষকদের অভিযোগ, সারের কৃত্রিম সংকট করে তাদেরকে সারসংকট দেখানো হয় এবং এই সার আবার তাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করা হয়।

রাঙ্গাবালীর রাঙা তরমুজের রয়েছে সুনাম। এখানকার তরমুজ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাহিদা পূরণ করে। অর্থনীতিতে যোগ করে নতুন মাত্রা। কৃষি অফিসের তথ্য মতে এ বছরও প্রায় সাড়ে আট হাজার হেক্টর জমিতে আগাম তরমুজ চাষ করা হবে।

জানা যায়, আগাম তরমুজ চাষ করতে ব্যস্ত কৃষকরা কিন্তু সার সংকটের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। সার ক্রয় করতে গেলে কৃষকদেরকে বলা হয়, “আমাদের কাছে সার নেই। সার নিতে হলে অগ্রিম টাকা দিতে হবে।” এভাবে সার-সংকট দেখিয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করা হয়। নিরুপায় হয়ে সার কিনতে বাধ্য হন কৃষক। সারের যে মূল্য তালিকা আছে, তার চেয়ে ২ থেকে ৩০০ টাকা করে বেশি নেওয়া হয়। কৃষকদেরকে যে মেমো দেওয়া হয়, সেখানে উল্লেখ করা হয় সরকার নির্ধারিত মূল্য।

একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত মূল্যে তারা পাচ্ছে না সার। ইউরিয়া সারের সরকারি মূল্য ১৩৫০ টাকা, বিক্রি করা হয় ১৫০০ টাকা। টিএসপি সার ১৩৫০ টাকা সরকারি মূল্য, বিক্রি করা হয় ১৪৫০ টাকা। এমওপি সরকারি মূল্য ১ হাজার টাকা, বিক্রি করা হয় ১২০০ টাকা। ডিএপি সার সরকারি মূল্য ১০৫০ টাকা, বিক্রি করা হয় ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা।

দৈনিক আমার দেশ প্রতিনিধির হাতে খুচরা সার বিক্রেতাদের তিনটি অডিও রেকর্ড রয়েছে। সেখানে উঠে এসেছে সার বিক্রির ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র। খুচরা সার বিক্রেতাদের অভিযোগ, তারা নামমাত্র সার বিক্রেতা। নিয়ম অনুযায়ী সার বণ্টন করা হয় না। বেশি দামে বাহিরে সার বিক্রি করে ডিলার। তাদেরকে সামান্য কিছু সার দিলেও তাও সরকার নির্ধারিত মূল্যে দেওয়া হয় না।

তারা আরও বলেন, রাঙ্গাবালী কৃষি বিভাগ এ বিষয়ে সবকিছু জানে। তাদের পক্ষ থেকে নেই কোনো তদারকি।

অভিযুক্ত রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন ডিলার ফারুক লাহারীর একটি অডিও রেকর্ড আমার দেশের প্রতিনিধির কাছে এসেছে । সেখানে সে ক্রেতাকে বলে, “আমার কাছে কোনো সার নাই। আমার কাছে সার আগামী মাসে পাবেন।” ক্রেতা বলেন, “আমি অগ্রিম টাকা দিলে আমাকে সার দিতে পারবেন?” তিনি বলেন, “পারবো, কিন্তু সারের দাম দিতে হবে ১৪০০ টাকা।” এছাড়া তাকে বলতে শোনা যায়, “আপনারা ভোলা থেকে সার আনেন, রাঙ্গাবালী সার নাই।”

তথ্যসূত্রে জানা গেছে, ১৭ তারিখ রাতে তার গুদামে এক হাজার বস্তা সার আসলে অগ্রিম টাকা দেওয়া কৃষকদেরকে সার দিয়ে দেয়। কিন্তু সার পায়নি ক্ষুদ্র কৃষকরা।

ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়ন ডিলার রিপা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রুহুল মাস্টার বলে, “আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ করা হয়েছে এর কোনো সত্যতা নেই। সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি করি। খুচরা বিক্রেতারা কে কিভাবে সার বিক্রি করে আমার জানা নেই।”

মেসার্স লাহারি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ফারুক লাহারীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সে জানায়, “আমি সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি করি। বেশি দামে বিক্রি করে থাকলেও এটা ভুলত্রুটির কারণে হতে পারে।”

রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানায়, “অভিযোগের বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখবো। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব দাশ পুরকায়স্থ বলেন, “অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি ভালোভাবে আমি দেখবো।”


তথ্যসুত্রঃ
https://tinyurl.com/mr33twf

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধজামিন অযোগ্য মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের দাবির পর হিন্দু নেতার জামিন
পরবর্তী নিবন্ধউজবেকিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় আফগানিস্তানের ফল রপ্তানি শুরু