
ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও বাস্তবভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রদর্শন করেছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর পাশাপাশি আঞ্চলিক ও ইউরোপীয় শক্তির সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে ইমারাতে ইসলামিয়া।
এই সুচিন্তিত কূটনৈতিক কৌশলের ফলে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানকে ঘিরে বিভিন্ন দেশের দৃষ্টিভঙ্গিতে স্পষ্ট পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজনৈতিক চাপ, হুমকি ও বিচ্ছিন্নতার নীতির পরিবর্তে এখন অনেক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পক্ষ ধীরে ধীরে সংলাপ, যোগাযোগ এবং সহযোগিতার পথে অগ্রসর হচ্ছে।
বিশেষ করে অর্থনীতি, ট্রানজিট ও নিরাপত্তা খাতে এই মনোভাব পরিবর্তন প্রমাণ করে যে ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি আন্তর্জাতিক আস্থার নতুন পরিবেশ তৈরি করেছে। এর ফলে অবকাঠামো উন্নয়ন, বিনিয়োগ এবং যৌথ প্রকল্পে বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে এটি আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে আফগানিস্তানের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির উপস্থিতি স্বাভাবিক করার পথ প্রশস্ত করেছে।
সম্প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আফগানিস্তান বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এই পরিবর্তিত মনোভাব আরও স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক দেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীতিতে পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থান নেয় এবং ইমারাতে ইসলামিয়া সরকারের সঙ্গে বাস্তবভিত্তিক সম্পৃক্ততার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।
বৈঠকে রাশিয়া সুস্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করে জানায়, আফগানিস্তান বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনুসৃত চাপ, নিষেধাজ্ঞা ও হুমকিভিত্তিক নীতি ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। জাতিসংঘে রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, গত দুই দশকের এসব নীতি আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে এবং টেকসই শান্তি ও শাসনব্যবস্থা গঠনে বাধা সৃষ্টি করেছে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বৈরী মনোভাব পরিহার করে গঠনমূলক সহযোগিতার পথে এগোনোর আহ্বান জানান।
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে কাজাখস্তান ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধ আফগানিস্তান গঠনে সহযোগিতার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে। দেশটির স্থায়ী প্রতিনিধি কাইরাত উমারভ জানান, কাবুলের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও মানবিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ এবং অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজাখস্তান সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, শিল্প সহযোগিতা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহায়তা এবং মানবিক সাহায্য কাজাখস্তানের আঞ্চলিক নীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পাশাপাশি আফগানিস্তানের রেল অবকাঠামো উন্নয়নে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তিনি, যা দেশটিকে আন্তর্জাতিক বন্দর ও বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করতে সহায়ক হবে এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য জোরদার করবে।
এছাড়া, ভারতও বৈঠকে আফগানিস্তানের সঙ্গে ধাপে ধাপে ও বাস্তবমুখী সম্পৃক্ততার নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সাম্প্রতিক বৈঠকে প্রকাশিত অবস্থানগুলো আফগানিস্তান সম্পর্কে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির একটি স্পষ্ট পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। বিচ্ছিন্নতা ও চাপের নীতির পরিবর্তে এখন সহযোগিতা, সংলাপ ও বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে এগোনোর প্রবণতা বাড়ছে।
বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সংযুক্তিকে সমর্থন দেওয়ার এই প্রবণতা প্রমাণ করে যে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ আস্থা ও মনোযোগ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
তথ্যসূত্র:
1. The UN Security Council Meetimg and the Consensus of Engagement with the Islamic Emirate
– https://tinyurl.com/mwn28cyt


