সোভিয়েত আগ্রাসনের ৪৬ বছর: আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জিহাদের গৌরবগাথা

0
19

আফগানিস্তানে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক আগ্রাসনের ৪৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে দেশটির রাজধানী কাবুলে এক শোকাবহ ও গাম্ভীর্যপূর্ণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর তারিখটি ইতিহাসে এক ‘কালো দিন’ হিসেবে চিহ্নিত। এ দিন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে আক্রমণ করে, যা শুধু সামরিক সংঘাত নয়, বরং আফগান জনগণের আত্মার জন্য লড়াইয়ে পরিণত হয়। ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা জাতীয় রেডিও ও টেলিভিশন হলে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই দিনটিকে স্মরণ করেন এবং আগ্রাসনের ফলে দেশের ওপর নেমে আসা দুর্যোগ ও বেদনাদায়ক অধ্যায়ের কথা তুলে ধরেন। এদিন থেকেই শুরু হয়েছিল আধুনিক যুগের এক বিশাল আগ্রাসীর শক্তির বিরুদ্ধে আফগান জনগণের সাহসী প্রতিরোধের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

সভায় বক্তারা ২৭ ডিসেম্বর কে একটি ‘কালো দিন’ আখ্যা দেন এবং একে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সূচনাও বলে অভিহিত করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলানা আমির খান মুত্তাকী হাফিযাহুল্লাহ বলেন, আফগানিস্তানের মাটি আগ্রাসীদের জন্য কবরস্থান হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, আফগানিস্তান দখলের সিদ্ধান্ত ছিল আগ্রাসীদের একটি বৃহৎ ভুল এবং তাদের নিজেদের অনুগতদের প্রবঞ্চনার ফলেই তাদের এই পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে।

তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী শাইখ শির আহমদ হক্কানি হাফিযাহুল্লাহ তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, দখলদাররা ধর্মকে রাজনীতি থেকে পৃথক করতে চেয়েছিল এবং সমাজে আলেমদের দুর্বল করতে চেষ্টা চালিয়েছিল। তাদের এই ধর্মবিরোধী কার্যকলাপই আফগানদের সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছিল, যার ফলে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন পরাজয়ের সম্মুখীন হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলানা আমির খান মুত্তাকী হাফিযাহুল্লাহ সাম্প্রতিক আফগানিস্তান-তাজিকিস্তান সীমান্তে সংঘটিত ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, এ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত শুরু হয়েছে। তিনি তাজিকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করেছেন বলে জানান এবং এই সমস্যা প্রতিরোধে তারা একসঙ্গে কাজ করছেন। মন্ত্রীর মতে, কিছু পক্ষপাতদুষ্ট মহল আফগানিস্তান ও তাজিকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইছে এবং পরিস্থিতিকে অনিরাপদ হিসেবে দেখাতে চাইছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন ঘটনায় আফগানরা ঐক্যবদ্ধ থেকেছে।

জাতীয় রেডিও ও টেলিভিশনের মহাপরিচালক ক্বারী মুহাম্মদ ইউসুফ আহমদী হাফিযাহুল্লাহ তার বক্তব্যে বলেন, যেসব জাতি আলেমদের সাথে সম্পর্কযুক্ত, তারা সর্বদা সফল ও গর্বিত থেকেছে এবং যেকোনো ধরনের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেছে। আফগানদের বিজয় আল্লাহ তাআলার পথ অনুসরণ ও আলেমদের আনুগত্যের ফল। তিনি বলেন, “বিশ্ব যতই শক্তিশালী ও সশস্ত্র হোক না কেন, যদি এটি আফগানিস্তানের মতো কোনো দেশে আগ্রাসন চালায় তবে তা ব্যর্থতা ও অপমানের মুখোমুখি হবে এবং লজ্জিত ও অপদস্থ হয়ে এই ভূমি ত্যাগ করবে।”

যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী শাইখ হামদুল্লাহ নোমানী হাফিযাহুল্লাহ বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড আর্মি আফগানদের ইতিহাস অধ্যয়ন না করেই আফগানিস্তানে আক্রমণ করেছিল এবং এক চূড়ান্ত পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছিল। তারা আফগানিস্তানের মাধ্যমে উষ্ণ সাগরে পৌঁছাতে চেয়েছিল, কিন্তু আফগানদের সর্বাত্মক জিহাদের ফলে তারা পরাজিত হয়েছিল।

পল্লী উন্নয়ন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী শাইখ আলী করিমি হাফিযাহুল্লাহ বলেন, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান রাখে এমন জাতির ওপর আক্রমণ পরাজয়কে অনিবার্য করে তোলে। আফগান জাতির রয়েছে দৃঢ় সংকল্প ও ইচ্ছাশক্তি, এবং আগ্রাসীরা প্রতিবার এই জাতির বিরুদ্ধে পরাজয় বরণ করেছে।

সোভিয়েত আগ্রাসনের ৪৬তম বার্ষিকীর এই সভা ছিল একদিকে বেদনাদায়ক অতীতের স্মরণ, অন্যদিকে জাতীয় সংকল্প ও ঐক্যের পুনর্বিবেচনার সুযোগ। ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের শীর্ষ পর্যায়ের এই আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয় যে, দেশটি বহিরাগত আগ্রাসনের দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক ইতিহাসের মধ্য দিয়ে গেলেও এর জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস, আলেমদের নেতৃত্ব ও জাতীয় ঐক্য বারবার তাদের সুরক্ষা দিয়েছে। যে কোনো আগ্রাসনই আফগানিস্তানের মাটিতে শেষ পর্যন্ত পরাজয় ও অপমানের দিকে ধাবিত হয়। আফগানিস্তানের সীমানা শুধু ভৌগোলিক সীমানা নয়, বরং বহিরাগত আধিপত্যবাদীদের জন্য এক ঐতিহাসিক ‘কবরস্থান’।


তথ্যসূত্র:
1. A meeting was held to condemn the Red Army’s invasion of Afghanistan on the 6th of Jadi
– https://tinyurl.com/5dueypwx

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধশরণার্থীদের আবাসনের জন্য ৪১টি আধুনিক নগরী নির্মান করছে ইমারাতে ইসলামিয়া
পরবর্তী নিবন্ধকাবুলে ২২৩ একর এলাকা জুড়ে ঔষধ শিল্প পার্কের নির্মান কাজ শুরু