মাজলুম উম্মাহর ঈদ উৎযাপন!

1
1948
মাজলুম উম্মাহর ঈদ উৎযাপন!

ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদ যেন সকল মুসলিমের মাঝে আনন্দধারা বয়ে আনে সেই কামনা আমাদের সবার। কিন্তু, সবার ঈদ আনন্দে কাটে? না, কাটে না। কাটেনি এবারও। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেনি আমাদের নির্যাতিত মুসলিম ভাই-বোনেরা। কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, উইঘুর তো বটেই এমনকি বাংলাদেশেও অনেকের ঈদ আনন্দ ‘মাটি’ করে দিয়েছে জালিম গোষ্ঠী।

অন্যান্য দেশের বিষয়টি হয়তো বুঝতে পেরেছেন, কিন্তু বাংলাদেশে কীভাবে সম্ভব?! হ্যাঁ, এখানেও সম্ভব। এদেশের অনেক গরিব মুসলিমের মুখের অন্ন কেড়ে নিয়েছে জালিমরা। প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম তো বেশিই আবার কুরবানির পশুর চামড়া নিয়েও তৈরি হয়েছে শয়তানী। কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রির টাকা পেয়ে আসছিল দেশের গরিব মুসলিমরা। এ দিয়ে হয়তো তাদের সব চাহিদা মিটে যেতো না, তবে ঈদের দিনে সন্তানের হাতে দু’টো টাকা তো তুলে দিতে পারতো! সন্তানের মুখে হাসি ফুটাতে পেরে হয়তো নীরবে আনন্দ-দুঃখের আতিশয্যে দু’ফোটা চোখের পানি ফেলতো গরীব মুসলিম! এতে হৃদয়গহীনে থাকা দুঃখ বের হয়ে আসতো চোখের পানিরূপে, আর অনুভূত হত সুখ। কিন্তু, গরিব মুসলিমদের এই আনন্দটুকুও বুঝি কেড়ে নিলো জালিমেরা। গত কয়েক বছর থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পশুর চামড়ার দাম কমিয়ে দেওয়া হয়েছে; অথচ, চামড়াজাত দ্রব্যের দাম অনেক বেশি! এভাবে গরিব মুসলিমদেরকে তাদের প্রাপ্য হক্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

আবার, বাংলাদেশেও আপনার অনেক মাজলুম ভাই-বোন বিনাদোষে জালিমের কারাগারে বন্দী।বহু বছর ধরে উম্মাহর মাথার তাজ সত্যভাষী বহু আলেম জালিমের কারাগারে বন্দিত্বের জীবন অতিবাহিত করছেন। ঈদ তাদের বন্দী জীবনে প্রভাব ফেলে, তবে আনন্দের না বরং দুঃখ-বেদনার। পরিবারের সাথে ঈদ করার আনন্দ কখনো পাবেন কি না তাও জানা নেই তাঁদের। এই তো গেলো বাংলাদেশের কথা, বাকি বিশ্বেও এরকম তাগুত-জালিমের কারাগারে বন্দী মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা।

সৌদি আরবের কথা বলি। আলে-সৌদের কারাগারে বন্দী উলামায়ে কেরামের সঠিক সংখ্যা আমার অজানা। তবে, সম্প্রতি ‘নিউজ ব্যুরো’ নামে একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত আলে-সৌদের কারাগারে বন্দী আলেমদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা আমার নজরে আসে। ১৯জন আলেমের নাম উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে। যাদের প্রত্যেকেই আলে-সৌদের কারাগারে বন্দী। তাদের কেউ কারাগারেই কাটিয়েছেন ৫৬টি ঈদ, কেউ ৫৩, ৪৯, ৩৪, ৩৩, এভাবে কমতে কমতে সর্বনিম্ন ৫টি ঈদ পর্যন্ত আছে। অর্থাৎ, এই ১৯ জন আলেমের সবাই কমপক্ষে আড়াই বছর ধরে আলে-সৌদের কারাগারে বন্দিত্বের জীবন অতিবাহিত করছেন। গত এক দু’বছর ধরে যে উলামাদের ব্যাপক ধরপাকড় করা হয়েছে, হয়তো তাদের অনেকে বাদ গিয়েছেন এই তালিকা থেকে। তাহলে, অনুমান করা যায় কত আলেম আলে-সৌদের কারাগারে বন্দী? কীভাবে কেটেছে তাদের ঈদ?

উইঘুর মুসলিমদের কথা মনে আছে তো? চীনের কারাগারে বন্দী জীবন অতিবাহিত করছেন ২০ লক্ষাধিক উইঘুর মুসলিম। তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, বাবা-মা, পরস্পর পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন। এমন পরিস্থিতিতেও কি ঈদের আনন্দ উপভোগ করা যায়?

এখন চলুন দেখি, কাশ্মীরের কী খবর! কীভাবে দেখি বলুন তো? সেখানে তো আজ মুশরিকদের সন্ত্রাসবাদ চলছে, তারা সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে কাশ্মীরকে সারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। এভাবে, ভূস্বর্গ কাশ্মীর আজ এক মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। সেখানে ভারতীয় মুশরিক হিন্দুত্ববাদীদের অবরোধের কবলে মুসলিমরা। তবে, তেমন কোন খবর সেখান থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। যা কিছুই আসছে তাতেই হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়, চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে! সংবাদমাধ্যমগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী, আগের ঈদগুলোর আনন্দ, কোলাহলের বিপরীত চিত্র এখন কাশ্মীরিদের চোখে-মুখে; উদ্বিগ্ন, আতঙ্কিত, ক্ষুব্ধ। বড় জমায়েতের ভয়ে সোমবার শ্রীনগরের বেশিরভাগ মসজিদেই ঈদের জামাত আয়োজনের অনুমতি দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। পবিত্র ঈদুল আজহার দিনেও ঘরবন্দী কাশ্মীরী মুসলিমগণ। খাবার নেই, টাকা থাকলেও বাহিরে গিয়ে খাবার কেনার সামর্থ্য নেই, ঘর থেকে বের হলেই গুলি করে হত্যা করে ফেলার হুমকি দিচ্ছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী সেনারা। পরিবার-পরিজনের সাথে কোন যোগাযোগ নেই অনেকের! এমন পরিস্থিতিতে ঈদ কেমন কাটবে? বলুন…

ভারতের নির্যাতিত মুসলিমদের কথা কী বলবো? গোপূজারী মুশরিক হিন্দুদের বর্বরতার শিকার ভারতীয় মুসলিমরা। গরু কুরবানি দেওয়া নিষিদ্ধ সেখানে! মুসলিমদের কুরবানির গরু ছিনিয়ে নেওয়া যেন সেখানকার হিন্দুত্ববাদী পুলিশের দায়িত্ব! গো-রক্ষকদের হাতে নির্যাতিত হওয়ার ভয়ে সেখানে ঈদ কাটে আতংকে!

ফিলিস্তিনের কথা শুনবেন? ঈদের সপ্তাহখানেক আগেই ঈদের দিন আল-আকসায় হামলে পড়ার ঘোষণা দেয় সন্ত্রাসবাদী ইহুদী সংগঠনগুলো। আল-আকসাকে নাপাক ইহুদীদের কবল থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন, কিন্তু কীভাবে? আপাতত ফিলিস্তিনী মুসলিমদের সংগঠনগুলো সিদ্ধান্ত নিলো ঈদের দিন শহরের অন্য সকল মসজিদ বন্ধ থাকবে এবং আল-আকসায় গিয়ে সবাই ঈদের সালাত আদায় করবে। ঘোষণা অনুযায়ী, ঈদুল আজহার দিন মুসলিমরা উপস্থিত হলো আল-আকসায়, ঈদের সালাত আদায় করবে বলে। ইহুদীরাও আসলো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে, আঘাত হানলো মুসলিমদের উপর। গুলি করা হলো, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করা হলো, বোমা ফেলা হলো। হতাহত হলো অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনী মুসলিম। এই ছিল তাদের ঈদ, এই তাদের আনন্দ!

এভাবেই ঈদ কাটিয়েছে মাজলুম উম্মাহ। সিরিয়ার মুসলিমদের ঈদও কেটেছে রাশিয়াসহ কুফফার জোটগুলোর বোমারু বিমানগুলোর ছায়ার নিচে, নিজ ভবনের ধ্বংসস্তুপের ভেতরে, হাসপাতালে কিংবা সন্তানের লাশের সামনে! অথবা এতিম সন্তান বাবা-মায়ের কবরের পাশে বসে হয়তো কাঁদতে কাঁদতে তার ঈদ উৎযাপন করেছে!

ইয়েমেনের মাজলুম মুসলিমরাও কাটিয়েছে তাদের ঈদ! খাদ্য নেই, বস্ত্র নেই, নিরাপত্তা নেই, সন্তানগুলো অনাহারে মৃত্যুমুখে। শহরগুলো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়ে চলেছে, আগুনে জ্বলছে ঘরবাড়ি, ঈদ কীভাবে কেটেছে তাদের? অনুভব করতে পারছেন তো?

এভাবেই ঈদ কেটেছে সারাবিশ্বের নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহর, আমাদের ভাই-বোনদের। আপনাদের নেক দোয়াসমূহে এসকল নির্যাতিতদের তাই কভু ভুলে যাবেন না, ভুলবেন না নিজেদের জীবন বিপন্ন করে মাজলুম উম্মাহর মুক্তির লড়াইয়ে অংশ নেওয়া মুজাহিদদেরকে।

হে আল্লাহ! আপনি আমার জাতিকে সম্মানের জীবন ফিরিয়ে দিন, নির্যাতনের কবল থেকে উদ্ধার করুন। ধ্বংস করে দিন জালিম-কাফিরের রাজ, পরাজিত করুন কুফফার বাহিনীকে। সারাবিশ্বে তাওহীদের কালেমাবাহী ঝাণ্ডা উড়ানোর তাওফিক দান করুন আমাদের। আমীন ইয়া রাব্বি।

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধহিন্দুত্ববাদের দোসরদের দ্বিমুখী নীতি!
পরবর্তী নিবন্ধগুজরাটে সন্ত্রাসবাদী ‘শ্রী রাম’ পূজারীদের শিকার এক নিরীহ মুসলিম!